শিরোনাম
‘আমরা খাবারের কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম’
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০১৮, ১১:১৯
‘আমরা খাবারের কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

থাইল্যান্ডের গুহায়া আটকে পড়ার পর ১২ শিশু ও তাদের ফুটবল কোচের অসাধারণ উদ্ধার অভিযানের ঘটনা সারাবিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নেয়। বিশ্বজুড়ে তারকা-খ্যাতি পাওয়া এই শিশুরা উদ্ধার হওয়ার পর এই প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে নিজেদের দুর্দশার কথা তুলে ধরে।


যদিও এ সময় তাদের হাসিখুশি এবং হালকা মেজাজের দেখায়। পাশাপাশি বসে ছিল তারা। এই শিশু-কিশোররা একই রকম ফুটবল জার্সি পরে আসে আর তাতে তাদের ফুটবল দলের নামের (ওয়াইল্ড বোয়ারস) সাথে মিলিয়ে বুনো শূকরের ছবি।


সেখানে তারা বিশেষভাবে বাছাই করা কতগুলো প্রশ্নে উত্তর দেয় যাতে করে তাদের কোনো অস্বস্তির মধ্যে পড়তে না হয়।


কিভাবে তারা হারিয়ে গিয়েছিল:


দলের সহকারী কোচ একাপল চান্থাওং বলেন, ২৩ জুন ফুটবল অনুশীলন শেষে দলের ছেলেরা সবাই আশেপাশের এলাকা দর্শন এবং থাম ল্যাং গুহার ভেতর বেড়াতে যেতে একমত হয়। আমরা একঘণ্টার জন্য যাওয়ার প্ল্যান করি।


কোচ একাপল (বায়ে)


একাপল বলেন, আগে যেভাবে খবরে বলা হয়েছিল, তারা জন্মদিন উদযাপন করতে গিয়েছিল তেমনটি নয়। যদিও ‘নাইট’ নামে পরিচিত দলের একটি ছেলের ১৭তম জন্মদিন উদযাপনের জন্য তার বিকেল ৫টার মধ্যে বাড়ি ফেরার তাড়া ছিল।


তিনি বলেন, আমরা স্বাভাবিকভাবেই হাঁটছিলাম...কিন্তু গুহার ভেতর যাওয়ার পর আমরা জানলাম আমাদের বের হওয়ার পথ আটকে গেছে। দলটি তখন বুঝতে পারে পানির কারণে গুহার বের হওয়ার পথ রুদ্ধ। কেউ কেউ জানতে চাইলো আমরা হারিয়ে গেছি কি-না। আমি বলি আমরা ভুল পথে যাবো না। যতক্ষণ শুষ্ক বালুময় জায়গা না মিললে তারা হাটতে থাকে।


তিনি আরো বলেন, আমরা পানির উৎসের কাছাকাছি অবস্থান নিলাম। আমরা বালুর ওপর ঘুমালাম। ঘুমের আগে প্রার্থনা করতাম। আমরা ভেবেছি ভোরবেলা পানি নেমে যাবে এবং লোকজন আমাদের খোঁজে আসবে। তখনো আমাদের মধ্যে ভয় কাজ করছিল না।


গুহার ভেতর সময় কিভাবে কাটছিল:


একাপল জানান, টর্চ-লাইটের অল্প আলো ব্যবহার করে বের হওয়ার রাস্তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিল দলটি। কিন্তু যতই সময় যাচ্ছিল শিশুরা তাদের শক্তি হারাচ্ছিল।



এক শিশু জানায়, পাথরের গা বেয়ে পড়া পানি কিভাবে তাদের তৃষ্ণা মিটিয়েছে। তাদের খাওয়ার মতো কোনো খাবার সেখানে ছিল না।


অপর এক এক শিশু বলে, আমি সংজ্ঞা হারাচ্ছিলাম। কোনো শক্তি ছিল না এবং ছিল প্রচণ্ড ক্ষুধা। আমরা খাবারের কথা ভুলে থাকার চেষ্টা করতাম।


কোচ একাপল বলেন, আমরা একটি পয়েন্টে পৌঁছাই যেখানে আমরা শুধু উদ্ধারের অপেক্ষায় বসে থাকতে চায়নি। আমরা গর্ত খোঁড়ার চেষ্টা করি। পাথর দিয়ে গুহার দেয়ালে গর্ত খুড়তে থাকি। কর্তৃপক্ষে খুঁজে বের করার অপেক্ষায় বসে থাকতে চাইনি আমরা।


ছেলেরা সাঁতার জানে না বলে যে খবর বের হয়েছে তার বিপরীত বক্তব্য দিয়ে কোচ একাপল বলেন, প্রত্যেক ছেলেই সাঁতার জানে। যদিও সবাই দক্ষ সাঁতারু নয়। সময় কাটানোর জন্য তারা চেকার খেলতো।


উদ্ধার-কর্মীদের প্রথম দেখার পর অনুভূতি:


ফুটবল দলের সন্ধানে নামা দুই ব্রিটিশ ডুবুরি যখন তাদের কাছে গিয়ে পৌঁছলেন সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে ১৪ বছরের আদুল স্যাম-অন বলে, সেটা ছিল ‘মিরাকল’। ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যার সময়। পাথরের ওপর আমরা বসে ছিলাম। কিছু লোকজনের কথা শুনতে পেলাম।


আদুলই এই দলের একমাত্র সদস্য যে ইংরেজিতে কথা বলতে পারে। সে জানায়, সে টর্চ-লাইট হাতে নেয় এবং ডুবুরিদের দিকে আলো ফেলে। তারপর তারা যখন পানির ভেতর থেকে ভেসে ওঠে সে সময় সে তাদের দেখে বলে ‘হাই’।



আদুল বলে, আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম কারণ তারা ছিল ইংলিশ, তাই আমি বললাম হ্যালো। তারা প্রশ্ন করলো কেমন আছো? আমি বললাম, ঠিক আছি। আমি জানতে চাইলাম তাদের কোনোও সাহায্য প্রয়োজন কি-না? তারা বললো, না। এরপর তারা জানতে চাইলো আমরা কতজন?


ততদিনে নয়দিন পেরিয়ে গেছে। আদুল বলেন, তার মাথায় অংক ও ভাষা কোনোটাই ঠিকমতো কাজ করছিল না।


এদিকে ৬ জুলাই গুহার ভেতর প্রাণ হারানো স্বেচ্ছাসেবক ও সাবেক নেভি সিল ডুবুরির কথা জিজ্ঞেস করা হলে কোচ একাপল বলেন, পুরো দল এই খবরে ভীষণভাবে শোকাহত হয়ে পড়ে। তারা মনে করে তাদের জন্যই তার মৃত্যু হয়েছে এবং তার পরিবারকে এখন কষ্ট ভোগ করতে হবে। ওই ডুবুরি আমাদের জীবন বাঁচাতে তার নিজের জীবন স্যাক্রিফাইস করেছেন যাতে আমরা বেঁচে থাকতে পারি।


কোচ একাপল জানান, উদ্ধারকর্মী ও থাই নেভি সিলের বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয় কিভাবে তাদের গুহা থেকে বের করা হবে।


ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের মাধ্যমে পানিতে প্লাবিত গুহার ভেতর থেকে ছেলেদের বের করে আনা হয় ‘মিলিটারি গ্রেড স্ট্রেচারে’ করে এবং তাদের শান্ত রাখার জন্য ঘুমের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়।



ছেলেদের কোনো নির্দিষ্ট ক্রমানুসারে বের করে আনা হয়? এমন প্রশ্নে কোচ জানান, তেমন কিছু ছিল না। যারা স্বেচ্ছায় বাইরে যেতে চেয়েছে, দুর্বলতা-সবলতা বিবেচ্য ছিল না।


বুধবারের প্রেস কনফারেন্সে কোচ একাপল জানান, বিষয়টি ছিল এ রকম যে আগে হাত ওঠাবে সে আগে বের হবে...ছেলেদের মধ্যে কেউ কেউ বের হতে চাইছিল না কারণ তারা নেভি সিল সদস্যদের সঙ্গে নিরাপদ বোধ করছিল।


বুধবার রাতেই এই ফুটবল দলের ছেলেরা এবং কোচের বাড়ি ফিরে যাওয়ার কথা। এই দলটির দিকে সারাবিশ্বের মনোযোগ থাকলেও, চিকিৎসকরা তাদের পরিবারগুলোকে সতর্ক করে পরামর্শ দিয়েছে যাতে অন্তত একমাস এই শিশুদের সঙ্গে মিডিয়া কোনোরকম যোগাযোগ করতে না পারে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com