শিরোনাম
ইমরান খান যদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন!
প্রকাশ : ২২ জুন ২০১৮, ১৬:৩১
ইমরান খান যদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

২৫ জুলাইয়ের নির্বাচনে জয়ী হয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা আছে ইমরান খানের। আর তেমনটি হলে ভালোই বিপাকে পড়বেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কারণ, আফগানিস্তানে মার্কিন ভূমিকার ঘোর বিরোধী ইমরান খান।


যুক্তরাষ্ট্রে ইমরান খানের বড় পরিচিত একজন সমাজকর্মী হিসেবে। নিজের দেশে তিনি একটি বিশ্বমানের ক্যান্সার হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। একজন অসাধারণ সাবেক খেলোয়াড় হিসেবেও পশ্চিমা নারীদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে এখনো ইমরান ওয়াশিংটনে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেননি।


মার্কিন কর্তৃপক্ষের কাছে ডয়চে ভেলে জানতে চেয়েছিল, ইমরান প্রধানমন্ত্রী হলে তারা তাঁর সঙ্গে কাজ করতে চান কিনা। সরাসরি উত্তর না দিলেও কূটনৈতিক জবাবেই মিলেছে আভাস। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘মার্কিন সরকার পাকিস্তানে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে। সে দেশের নাগরিকেরা যাঁকে নির্বাচিত করবেন, আঞ্চলিক শান্তি ও উন্নতির লক্ষ্যে একই ধরনের এজেন্ডা নিয়ে তাঁর সাথেই কাজ করতে আমরা প্রস্তুত।’


এই বক্তব্যই তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) দলের প্রধান ইমরান খান সম্পর্কে মার্কিন সরকারের মনোভাব স্পষ্ট করে।


ভুট্টো বা নওয়াজ শরিফের সাথে কোন পরিস্থিতিতে কিভাবে কাজ করতে হয়, তা জানা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু ইমরান খানের ক্ষেত্রে তা নয়। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আফগানিস্তান ও ভারতে জঙ্গি কার্যক্রম ঠেকাতে ইমরানকে ওয়াশিংটনের সঙ্গেই কাজ করতে হবে।


ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মার্কিন কূটনীতিক ও রাজনীতি-বিশ্লেষকরা প্রায়ই ইমরান খানের একটি কথা মনে করিয়ে দেন। ইমরান একবার বলেছিলেন, তিনি নির্বাচিত হলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলা করতে আসা প্রতিটি মার্কিন ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করবেন।


তাঁর এমন কথায় পাকিস্তানের শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মধ্যেও ভয় ঢুকেছিল। জেনারেলরা ভাবছিলেন, ইমরান নির্বাচিত হলে ওয়াশিংটনের সঙ্গে টানাপড়েন আরো জটিল পরিস্থিতিতে গড়াবে।


সময় গড়াতে ইমরানও নিজের বক্তব্যে রাশ টেনেছেন। পরবর্তীতে পস্তাতে হবে না, এমন কথা বলার চেষ্টা করলেও মাঝেমধ্যেই মুখ ফসকে বেফাঁস কথাও বলে ফেলেছেন।


উড্রো উইলসন সেন্টার ফর স্কলারসের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কুগেলমান বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার চিন্তাটা খুব একটা সুখের নয়। কারণ, তিনি ও তাঁর দল বরাবরই অ্যান্টি-অ্যামেরিকান ভূমিকা নিয়ে এসেছেন, যা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ঠিক উল্টো।’


কুগেলমান মনে করেন, ‘একই সাথে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর বিশাল একটি ভূমিকা থটো। ফলে যদি সম্ভাব্য পিটিআই সরকারও সুর নরম করতে বাধ্য হয়, তাতেও আমি আশ্চর্য হবো না।’


এই মাসের শুরুর দিকে আফগানিস্তানে সাময়িক যুদ্ধবিরতির জন্য পাকিস্তানের সমর্থন প্রয়োজন ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু সে সময় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী বা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে যোগাযোগ না করে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি দেশটির সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়াকে ফোন দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও।


জেনারেল বাজওয়া শুধু মার্কিন অনুরোধই রাখেননি, কাবুলে গিয়ে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনির সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী শান্তিপ্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনাও করে এসেছেন।


যুক্তরাষ্ট্রে পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হোসেইন হাক্কানি বলছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র অন্য পাকিস্তানি নেতাদের যেভাবে সামলেছে, ইমরান খানও তার ব্যতিক্রম হবেন না।’


তিনি আরো বলেন, ‘জুলফিকার আলী ভুট্টোও নির্বাচনের আগে মার্কিনবিরোধী ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নেয়ার আগে রিচার্ড নিক্সনের সাথে দেখা করে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করতে গিয়েছেন।’


তবে পাকিস্তানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে বলে মনে করেন হাক্কানি। ফলে নির্বাচিত হলেও রাজনীতির পিচে ইমরান খানের ইনিংস কত দীর্ঘ হয়, তা অনেকাংশেই নির্ভর করছে দেশের ভেতরে-বাইরের অন্য ‘খেলোয়াড়দের’ সমর্থনের ওপর।


বিবার্তা/হুমায়ুন/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com