শিরোনাম
নেহেরু ভার্সিটিতে ‘‌ইসলামি সন্ত্রাসবাদ' কোর্স!
প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৮, ১৭:৩৫
নেহেরু ভার্সিটিতে ‘‌ইসলামি সন্ত্রাসবাদ' কোর্স!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)। এর শিক্ষার্থীদের কিংবা এর শিক্ষামানের উৎকর্ষ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। পাশাপাশি এখানে প্রতি মুহূর্তে জন্ম নেয় রাজনৈতিক অধিকারের লড়াই। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বামপন্থি ছাত্রছাত্রীরাই এ সব লড়াইয়ের নেতৃত্ব দেন। দেশের যে কোনো জ্বলন্ত ইস্যুতে আন্দোলনে এগিয়ে আসে জেএনইউ।


কিন্তু এমন পরম্পরায় মোটেই বিশ্বাসী নয় ভারতের বর্তমানবিজেপি সরকার। তাই বিজেপি এবং তাদের ‘মেন্টর' আরএসএস স্বপ্ন দেখে জেএনইউ-‌তে বামপন্থার অবসান ঘটিয়ে একে কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের হাতে তুলে দেয়ার। সম্ভবত সে কারণেই কেন্দ্রে বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নানা ইস্যুতে ‘‌টার্গেট' করা হয়েছে‌ জেএনইউ-‌কে।


সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, জেএনইউ শিক্ষা পরিষদ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শীঘ্রই ‘‌সেন্টার ফর ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্টাডিজ'‌ নামে একটি কেন্দ্র তৈরি করবে তারা আর সেখানে চালু হবে ‘‌ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ'‌ কোর্স। অর্থাৎ সন্ত্রাসবাদ ও ধর্ম একই আসনে!‌


জেএনইউ-‌এর ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-‌শিক্ষিকাদের একাংশ, বুদ্ধিজীবী এবং ধর্মনিরপেক্ষে রাজনীতিবিদ এবং শুভবুদ্ধিসম্পন্ন বহু সাধারণ মানুষ ইতিমধ্যেই এই ধরনের কোর্স পড়ানোর ভাবনার বিরোধিতা করেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কোর্স চালু হলে ‘‌আরএসএস সন্ত্রাসবাদ'‌ বা ‘‌হিন্দু সন্ত্রাসবাদ'‌ নিয়ে পড়াশোনা হবে না কেন?‌ কেননা, সকলেই তো জানেন ভারতে বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের ঘটনায় একাধিক আরএসএস নেতারা অভিযুক্ত। তাছাড়া মধ্য-প্রাচ্যের দেশগুলোতে একতরফা হামলা চালিয়ে যাচ্ছে অ্যামেরিকা। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের নামে ইচ্ছেমত মারণাস্ত্র নিক্ষেপ করছে অ্যামেরিকা। তাহলে ‘‌অ্যামেরিকান সন্ত্রাসবাদ' নামে কোনো কোর্স চালু হতে পারে না?‌‌


এতসব যুক্তি ও প্রতিবাদের পরেও জেএনইউ কর্তৃপক্ষ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে যে, তারা মনে করে ‘‌ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ'‌ আছে, সে-কারণেই এ ধরনের কোর্স অত্যন্ত জরুরি।


এসএফআই, আইসা ও এনসিইউ-‌সহ একাধিক রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন এই কোর্সের বিরোধিতায় সরব হয়েছে। তাদের হুঁশিয়ারি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেই বিদ্বেষের জন্ম দেয়, কিছুতেই এমন কোর্স চালু করতে দেয়া হবে না।


রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করে, মূলত বামপন্থাকে নিশ্চিহ্ন করা বিজেপি এবং তাদের ‘মেন্টর' রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যে গত চার বছর ধরে সরকারি ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে জেএনইউ-‌কে জব্দ করার সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সেই উদ্দেশ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষে নিজেদের পছন্দমতো লোকদের নিয়ে এসেছে সরকা। নানাভাবে চলছে বামপন্থিদের দমন-‌পীড়ন। কখনও বিক্ষোভরত ছাত্রদের ‘‌দেশদ্রোহী'‌ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তার, হেনস্থা করা হয়েছে, কখনও জেএনইউ ছাত্রীদের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, কখনও বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে গায়েব করে দেয়া হচ্ছে সংখ্যালঘু ছাত্রকে। কিন্তু এবার কট্টর হিন্দুত্বের প্রচারে মুসলিম-বিরোধী আবহাওয়া তৈরির ঘৃণ্য উদ্দেশ্যে যুক্ত করা হচ্ছে দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে।


পাঠ্যক্রমে ‘‌ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ'‌ অন্তর্ভুক্ত করার নিন্দা করে তা রুখতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভানেত্রী গীতা কুমারী। তিনি বলেছেন, ‘‘এটা তো বিতর্কিত বিষয়, হিন্দু-‌মুসলিমে বিভেদের ষড়যন্ত্র। সন্ত্রাসবাদের আবার কোনো ধর্ম হয় নাকি?‌ বিজেপি বা আরএসএস এমনটা চাইতেই পারে, তাই বলে দেশের এক নম্বর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পাঠ্যক্রম অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তে কোন যুক্তিতে সম্মতি জানালেন উপাচার্য?‌'‌'


বিষয়টিতে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ পেয়ে অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের ১৪৫তম বৈঠকে অনেকেই আপত্তি তুলেছিলেন। কিন্তু আপত্তি শোনে কে!‌ যে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল সেই ‘‌অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল'‌-‌এর মিটিং এক ঘণ্টার মধ্যে শেষ করে দেয়া হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষক প্রতিনিধিরা কিছু বলতে চেষ্টা করলেই তাঁদের জোর করে বসিয়ে দেয়া হয়।


‘‌অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন'‌-‌এর সর্বভারতীয় সভানেত্রী সুচেতা দে সমগ্র বিষয়টিতে গভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র দেখছেন। তাঁর কথায়, ‘‌‘‌আসলে বিজেপি ও আরএসএস নিজেদের মতাদর্শ এভাবেই জোর করে অন্যান্যদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চাইছে। সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে একটি বিশেষ ধর্মকে জড়িয়ে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে আরএসএস।'‌'‌


তাব অত্যন্ত ‘‌আশ্চর্যজনক'‌ এবং ‘‌বিরক্তিকর'‌৷ জেএনইউ-‌র মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কীভাবে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে ধর্মকে জুড়ে দিচ্ছে!‌'‌'‌ জাওড়েকরকে তিনি আরও লিখেছেন, ‘‌‘‌এমন ঘটনা থেকে সরকার ও শাসক দলের লুকোনো উদ্দেশ্য প্রকাশ্যে চলে এসেছে৷'‌'‌


সরকার, শাসক দল ও জেএনইউ কর্তৃপক্ষের যোগসাজসে শিক্ষাঙ্গনে ‘‌ঘৃণার রাজনীতি'‌ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করে সুচেতা বলেন, ‘‌‘‌যেভাবেই হোক ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখতে চায় বিজেপি ও আরএসএস। ভারতকে গণতান্ত্রিক দেশ থেকে ক্রমশ ফ্যাসিস্ট একটি দেশে পরিণত করা হচ্ছে। কিন্তু বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলো সেই উদ্দেশ্য কিছুতেই সফল হতে দেবে না। তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।'‌'‌


সুচেতার প্রশ্ন, ইসলামিক সন্ত্রাসবাদ নিয়ে কোর্স চালু হলে আরএসএস সন্ত্রাসবাদ হবে না কেন?‌ বা হিন্দু সন্ত্রাসবাদ নিয়ে পড়াশোনা হবে না কেন?‌ সূত্র : ডিডাব্লিউ


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com