শিরোনাম
বৃহত্তম ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় ভারত
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৭:২০
বৃহত্তম ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় ভারত
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতে যেন জনগণের টাকা লুটের মচ্ছব চলছে। টাকা লোপাট করেও নিরাপদে গা-‌ঢাকা দিতে পারছে একের পর এক শিল্পপতি - ললিত মোদী, বিজয় মালিয়ার পর এবার নীরব মোদী। একে একে বেরিয়ে আসছে আরও জালিয়াতের অপকর্ম - নীরব মোদী, মেহুল চোকসির পর এবার ‘‌রোটোম্যাক’‌ কলমনির্মাতা বিক্রম কোঠারি। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, রোটোম্যাকের জালিয়াতির পরিমাণ প্রায় ৩,৬৯৫ কোটি টাকা।


দেশের বৃহত্তম ব্যাংক কেলেঙ্কারিতে তোলপাড় গোটা ভারত, কিন্তু এখনও এ বিষয়ে টু শব্দ করেননি প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী। নানা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী টুইট করছেন বটে, কিন্তু নীরব প্রসঙ্গে তিনি আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। তদন্তকারী সংস্থার মতে, নীরব নীরবে গা-ঢাকা দিয়েছে দুবাইতে।


রাজ্যসভার সদস্য সুখেন্দুশেখর রায়ের কথায়, ‘‌‘২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সময় প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে ‘‌চৌকিদার’‌ বলেছিলে। তিনি নাকি দেশের অর্থ‌নীতির পাহারাদার হবেন, যাতে জনগণের সম্পত্তি কেউ তছরুপ না করতে পারে। দেশের প্রতিটি মানুষের অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ টাকা করে দেয়ার ওয়াদাও দিয়েছিলেন। তারপর তো কালো টাকা, নোট বাতিল, জিএসটি ইত্যাদি দেখেছে দেশবাসী। সম্প্রতি পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের যে দুর্নীতি সামনে এসেছে, তার তদন্তে দেখা গেছে, নোট বাতিলের পরে নগদ টাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ সোনা ও হীরে কেনা হয়েছিল। সরকারের প্রশ্রয় ছাড়া এটা কি সম্ভব?‌’‌’


বিজয় মালিয়া ও নীরব মোদীর নাম করে বিজেপিকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী৷ তিনি মোদীকে পুরোনো কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে নিজের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘‘‌না খাউঙ্গা না খানে দুঙ্গা৷’‌’ এই প্রতিশ্রুতি কি তাহলে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিয়ে ছিলেন ?‌ তাহলে কি এসবের কিছুই দাম নেই?‌ এত বড় কাণ্ড হয়ে যাওয়ার পরেও মোদী নীরব কেন?’’‌‌


অল ইন্ডিয়া ব্যাংক অফিসার কনফেডারেশনের সর্বভারতীয় যুগ্ম সম্পাদক সৌম্য দত্তর মতে, ‘‘‌সরকারের প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মদত ছাড়া এতবড় ব্যাংক জালিয়াতি মোটেই সম্ভব ছিল না। ছোটখাটো ঋণখেলাপিদের ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়। কিন্তু, রাঘব বোয়ালরা বেমালুম ব্যাংকের টাকা হজম করে বসে থাকে।''


এজন্য সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলাও করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে রিজার্ভ ব্যাংক মুখবন্ধ খামে হলফনামা দিয়ে জানিয়েছে, তালিকা প্রকাশ করা যাবে না। কারণ, তাতে নাকি দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট হবে!


ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংকিং দুর্নীতির পরও ব্যাংকের উদ্দেশেএকটি চিঠি লিখেছেন মোদী। লিখেছেন, ‘‌‘‌ব্যাংকের টাকা ফেরত পাওয়ার তাড়াহুড়ো আমার ঋণ মেটানোর সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। যে পরিমাণ বকেয়ার কথা ব্যাংকের তরফে বলা হচ্ছে, তার থেকে কম বকেয়া আছে। বকেয়ার পরিমাণ ৫ হাজার কোটি টাকা।’‌’‌


প্রশ্ন উঠেছে, কাদের ছত্রছায়ায় বসে মোদী এইসব অসম সাহসী কাজ করছেন?‌


নীরবের যুক্তি, বকেয়ার পরিমাণ অনেক বেশি দেখানোর ফলে সংবাদমাধ্যমে হইচই পড়ে গেছে। দেশজুড়ে তার হীরে ব্যবসার শো-‌রুমে তল্লাশি হচ্ছে, বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে বহু সামগ্রী। গোটা বিশ্বে রে রে পড়ে গেছে। কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে ‘‌ফায়ারস্টার ইন্টারন্যাশনাল’‌ এবং ‘‌ফায়ারস্টার ডায়মন্ড ইন্টারন্যাশনাল’‌ কম্পানি দুটি। ভাবমূর্তিও তলানিতে। এ কারণেই নাকি তাঁর টাকা ফেরতের ক্ষমতা নষ্ট হয়েছে।


ঋণখেলাপিদের তালিকায় ৭৭ শতাংশ নামেই বড় ব্যবসায়ী!‌ হীরে ব্যবসায়ী নীরব মোদীকে বিপুল অঙ্কের ঋণ পাইয়ে দিতে ব্যাংকের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ লেনদেনব্যবস্থাকেই এড়িয়ে গিয়েছিলেন পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের মুম্বাই শাখার তদানীন্তন ডেপুটি ম্যানেজার গোকুলনাথ শেট্টি। নীরব যাতে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিদেশি শাখা থেকে যথেচ্ছ ঋণ নিতে পারেন, সে জন্য সাত বছরে প্রায় ১৫০টি গ্যারান্টি ইস্যু করেছিলেন পিএনবি-র মুম্বাই শাখার তৎকালীন ডেপুটি ম্যানেজার গোকুলনাথ শেট্টি। সবমিলিয়ে একের পর এক ব্যাংক কেলেঙ্কারি এবং নীরব মোদী ও মেহুল চোকসির দুর্নীতির ধাক্কা থেকে নিজেদের সামলাতে মোদী সরকার দিশেহারা। সূত্র : ডিডাব্লিউ


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com