শিরোনাম
গুজরাটের নির্বাচনে পাকিস্তান এলো কোথা থেকে?‌
প্রকাশ : ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৬:৩৩
গুজরাটের নির্বাচনে পাকিস্তান এলো কোথা থেকে?‌
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

গুজরাটের নির্বাচনে পাকিস্তান এলো কোথা থেকে?‌ প্রশ্নটা বেশ আলোচিত হচ্ছে গোটা ভারতে।


আসলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই পাকিস্তানকে টেনে এনেছেন। প্রবীন কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আয়ারের বাড়িতে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এবং প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি পাকিস্তানের প্রাক্তন বিদেশমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরির সঙ্গে গুজরাটের ভোট নিয়ে কথা বলেছেন - প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এমন অভিযোগের পর ঝড় ওঠে রাজনৈতিক মহলে। ঘরে-বাইরে আক্রমণের মুখে পড়েন মোদী। কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর পাশাপাশি বিজেপির শত্রুঘ্ন সিনহা এবং শরিক শিবসেনাও মোদিকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। শিবসেনার মুখপত্র ‘সামনা'-য় লেখা হয়েছে, মোদী নাটক করছেন। বিজেপি সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহার কটাক্ষ আরো তীব্র। তিনি বলেছেন, ‘‘ভোটে জিততে কি রোজ নতুন নতুন গল্প বানাতে হবে?''


সব মিলিয়ে মোদীর অভিযোগটা হাস্যকর হয়ে উঠেছে।


গুজরাটে এবার নির্বাচনে হেরে গেলে মুখ পুড়বে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহদের। মনে রাখতে হবে, মোদীর কারণেই বিজেপি‌র সভাপতি করা হয়েছে শাহকে। তাই কোনোমতেই তাঁরা গুজরাটের শাসনভার হারাতে চাইবেন না। পরাজয় তো অনেক পরে, এমনকি আসনসংখ্যা ১০০-‌র নিচে এসে দাঁড়ালে মোদী-‌শাহদের সাধের ‘‌গুজরাট ‌মডেল'‌ প্রশ্নের মুখে পড়বে। তাই কয়েক দশক আগের ‘‌ইন্দিরা ইজ ইন্ডিয়া'‌-‌র মতো গোটা গুজরাটে মোদী প্রচার করছেন ‘‌আমিই গুজরাট'‌। ক'‌দিন আগে বিজেপি যে ‘‌সংকল্পপত্র'‌ বা ইস্তেহার প্রকাশ করেছে তার প্রচ্ছদেও মোদীর ছবি। গোটা গুজরাটে নির্বাচনী প্রচারে বিপুল সংখ্যায় হোর্ডিং ও ব্যানার লাগানো হয়েছে তাতে মোদীর অনেক বড় ছবি দিয়ে লেখা হয়েছে ‘‌আমিই গুজরাট'‌।


হারের আতঙ্কে প্রধানমন্ত্রী মোদি


‌কিন্তু হঠাৎ কেন এলো পাকিস্তান প্রসঙ্গ?‌ খ্যাতনামা সাংবাদিক সৌম্য বন্দোপাধ্যায় মনে করছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি যদি ১০০-‌টির কম আসন পায়, সেটা মোদী ও অমিত শাহদের নৈতিক পরাজয় হবে। তাঁর কথায়, ‘‌‘‌এই নির্বাচনে বার বার গোলপোস্ট বদলাতে হয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। প্রথমে উন্নয়ন বা বিকাশ প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। কংগ্রেস বিকাশের দিকে আঙুল তুলতেই বিজেপি লড়াইটা নিয়ে গেল শহর বনাম গ্রামের দিকে। তারপর জাতপাতের দিকে। তাতেও যখন কাজ হলো না, তখন ধর্মের খেলা। সোমনাথ মন্দিরে রাহুল গান্ধীর অহিন্দু তালিকায় নাম লেখানো। অযোধ্যা, রামমন্দির ইস্যু খুঁচিয়ে তোলা হলো। কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী কপিল সিবাল সুপ্রিম কোর্টে কেন রামমন্দির মামলাটি ২০১৯ পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়ার আবেদন করলেন - সেই প্রশ্ন তুললেন খোদ প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু তাতেও কাজ হলো না। এবার মোদী চলে গেলেন পাকিস্তানে। রাষ্ট্রদ্রোহিতা বনাম রাষ্ট্রপ্রেমের লড়াইয়ে। এভাবে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর পদের মর্যাদাটাকেই ছোট করলেন।''


নরেন্দ্র মোদীকে সব থেকে শাণিত আক্রমণটি করেছেন মনমোহন সিং। তাঁর মন্তব্য, ‘‘গুজরাটে হারের আতঙ্কে প্রধানমন্ত্রী খড়কুটো আঁকড়ে ধরতে চাইছেন। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী তাঁর পদের যোগ্য পরিমিতিবোধ ও গরিমা বজায়রাখবেন। জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী পদের হৃত সম্মান পুনরুদ্ধার করবেন।''
‘মোদীর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে’


‌এমনি-এমনিই কি পাকিস্তান প্রসঙ্গ তুললেন মোদী?‌ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না। আসলে গুজরাটে টানা ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পর এবার ভারতীয় জনতা পার্টির পায়ের তলার জমি নড়বড় করছে। তাই সব-ক'টি লুকোনো তাস খেলার পর অবশেষে ‘‌দেশপ্রেম বনাম দেশদ্রোহ' তাসটি বের করেছেন মোদী৷


পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‌‘পাকিস্তানকে টেনে আনার পেছনে নরেন্দ্র মোদী ও ভারতীয় জনতা পার্টির রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। তবে ওঁর (‌মোদীর)‌ মনে রাখা প্রয়োজন, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে উনি বা ওঁর দল লড়েনি, লড়েছিলেন প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সত্যি বলতে কি, উনি এই নির্বাচনে ভীত হয়ে পড়েছেন। তাই এধরনের বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন।'‌'‌


কী ঘটেছিল ৬ ডিসেম্বরের রাতে? সত্যিই কি বহিষ্কৃত কংগ্রেস নেতা মণিশঙ্কর আয়ারের বাড়িতে বসেছিল গোপন বৈঠক?


সেদিনের সান্ধ্য আসরটি ছিল নিছকই এক ঘরোয়া অনুষ্ঠান। কয়েকজন গণ্যমান্য ব্যক্তি আসবেন তা জানা ছিল প্রায় সকলেরই, জানত দিল্লি পুলিশও। কারণ অভ্যাগতদের গাড়ি রাখা বা আয়ারের বাড়ি-সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করার কাজে দিল্লি ট্রাফিক পুলিসের পদস্থ অফিসার এবং কনস্টেবলেরা সন্ধে থেকেই নিযুক্ত ছিলেন। ছিল এসপিজি-ও। কারণ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনমোহন সিংয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে এসপিজি।


তবে এবার গুজরাটে অর্ধসত্য, অসত্য ও আজগুবি তত্ত্বের প্রচার চলছে। মন্দির-‌মসজিদ, হিন্দু-‌মুসলিমের ইস্যু কাজে আসেনি। এখন দেখার পাকিস্তান অস্ত্র কাজে আসে কিনা।


বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com