কিছু শরণার্থীকে ফেরানোর প্রক্রিয়া যেকোনো সময় শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণের পরদিন বুধবার জাপানের নিকি এশিয়ান রিভিউ পত্রিকাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানান তিনি।
সু চি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরাতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে মিয়ানমার প্রস্তুত। যেকোনো সময় এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। তিনি আরো বলেন, প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে বাঙালি মুসলিমদের (রোহিঙ্গা) পালিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে দেয়া তার বক্তব্য নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনা প্রসঙ্গেও এদিন কথা বলেন সু চি। তিনি বলেন, কোনো কিছুই অবাক করার মতো নয়। কারণ, অন্য সব মতামতের মতো বিশ্ব মতামতও বদলায়।
মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমালোচনার কথা উল্লেখ করে সু চি বলেন, মিয়ানমার গণতান্ত্রিক দেশ। আমাদের বিরোধী দল রয়েছে। তার মানে হলো সমালোচনা এবং বাগবিতণ্ডার সুযোগ রয়েছে সেখানে।
রাখাইনের সংকট মিয়ানমারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে বলেও উদ্বেগ প্রকাশ করেন সু চি। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক সংস্কারে পদক্ষেপ নিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। বিশেষ করে কৃষি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। দারিদ্র্য দূর করতে এ ধরনের আর্থিক সংস্কার প্রয়োজন। দারিদ্র্যের কারণেই চরমপন্থার সৃষ্টি হয়।
গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ অভিযানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে এ দফায় চার লাখেরও বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে। এই শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু। রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।
অবশ্য, মিয়ানমার সরকারের দাবি, রাখাইনে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নয়, তারা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। তবে জাতিসংঘের দাবি, সেখানে জাতিগত নিধন চলছে।
এমন পরিস্থিতিতে নীরব থাকায় বেশ সমালোচিত হচ্ছিলেন সু চি। ‘দীর্ঘ’ নীরবতা ভেঙে মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। সুচির ভাষণ নিয়ে অনেকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও, তার ভাষণের কিছু কথা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ, সুচি বাস্তবতা এড়িয়ে গেছেন।
তিনি তার ভাষণে বলেন, চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান কেন বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যখন বলছে- রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করা হচ্ছে, তখন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সু চি অবগত না থাকার কথা বেশ হতবাক করেছে।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে না। তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি মুসলিম’ হিসেবে বর্ণনা করে। সুচিও তার বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি। জাতির উদ্দেশে ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে তেমন কোনো সমাধানের কথা উল্লেখ না করলেও সেনাবাহিনীর পক্ষেই ঠিকই সাফাই গেয়েছেন এই নেত্রী।
সুচি তার ভাষণে আরো বলেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রাখাইনে কোনো অভিযান চালানো হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টি সত্য নয়। বিবিসির সাংবাদিক জোনাথন হেড বলেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর তিনি যখন মিয়ানমার সরকারের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করতে দেখেছেন।
বিবার্তা/নিশি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]