শিরোনাম
আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে দোষী সাব্যস্ত মিয়ানমার
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৫:২৭
আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে দোষী সাব্যস্ত মিয়ানমার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক গণ-আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে মিয়ানমার সরকার। দেশটিতে রোহিঙ্গা ও কাচিন সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা, নির্যাতন-নিপীড়নের অপরাধ তদন্তে যুক্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও আইনজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত সাত সদস্যের বিচারক প্যানেল শুক্রবার এ রায় দেন।

 

রায়ে দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি এবং দেশটির সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাকে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সু চিই প্রথম কোনো নোবেলজয়ী, যিনি ব্যতিক্রমী এ গণ-আদালতে বিচারের সম্মুখীন ও দোষী সাব্যস্ত হলেন।

 

মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়ালালামপুরের মালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদে অনুষ্ঠিত গণ-আদালতের এ শুনানিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত রোহিঙ্গা, কাচিন ও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ২০০ ব্যক্তির সাক্ষ্য নেয়া হয়। এসব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে পাঁচদিনের শুনানি শেষে শুক্রবার সকালে এ রায় দেয়া হয়।

 

রায় পড়ে শোনান আদালতের প্রধান বিচারক ও আর্জেন্টিনায় সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের প্রতিষ্ঠাতা ড্যানিয়েল ফিয়ারস্টেইন। তিনি বলেন, মিয়ানমার সরকার গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছে। আদালত ঘোষণা দিচ্ছে কাচিন ও অন্য মুসলিম গ্রুপগুলোর বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর অপরাধে মিয়ানমার দোষী।

 

ট্রাইব্যুনাল একইসঙ্গে ১৭টি সুপারিশ করা হয়েছে। বিচারপতি জিল এইচ বোহরিংগার এসব সুপারিশ পড়ে শোনান।

 

এগুলোর মধ্যে রয়েছে, মিয়ানমার সরকারকে সে দেশের সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর সহিংসতা বন্ধ করতে হবে, রোহিঙ্গা ও কাচিন সম্প্রদায়ের লোকদের ওপর যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশনকে সেখানে যাওয়ার ভিসা ও স্বাধীনভাবে চলাচলের সুযোগ দিতে হবে, সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব প্রদানের ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার যে পক্ষপাতমূলক আইন করেছে সংবিধান সংশোধন করে তার পরিবর্তন করতে হবে।

 

রায়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিচ্ছে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মতো দেশগুলোকে অর্থ সহায়তার আহ্বান জানানো হয়।

 

মিয়ানমারের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য গণআদালতের এ রায় জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গোষ্ঠীর কাছে পাঠানো হবে বলেও জানিয়েছেন বিচারক ড্যানিয়েল ফিয়ারস্টেইন।

 

১৯৭৯ সালে ইতালিতে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক গণ-আদালত। ৬৬টি আন্তর্জাতিক সদস্যের এ আদালত প্রতিষ্ঠার পর থেকে মানবাধিকার ও গণহত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট ৪৩টি কেস মোকাবিলা করেছে।

 

গত ২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযান চালাচ্ছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ অভিযানে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা হত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে তিন হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। কয়েক যুগ ধরে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করে আসা বাংলাদেশে এ দফায় চার লাখেরও বেশি শরণার্থী প্রবেশ করেছে। এই শরণার্থীদের ৬০ শতাংশই শিশু। রাখাইনের পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই সংখ্যা ১০ লাখে ঠেকতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

 

অবশ্য, মিয়ানমার সরকারের দাবি, রাখাইনে সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নয়, তারা সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে। তবে জাতিসংঘের দাবি, সেখানে জাতিগত নিধন চলছে।

 

এমন পরিস্থিতিতে দীর্ঘদিন নীরব ছিলেন দেশটির ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চি। এতে বেশ সমালোচনার মুখোমুখি হন শান্তিতে এ নোবেলজয়ী। ‘দীর্ঘ’ নীরবতা ভেঙে মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন তিনি। সু চির ভাষণ নিয়ে অনেকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও, তার ভাষণের কিছু কথা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেরই অভিযোগ, সু চি বাস্তবতা এড়িয়ে গেছেন।

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com