শিরোনাম
কাউকে কিছু বলব না, বাংলাদেশে চলে যাব: রোহিঙ্গা নারী
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১১:০৪
কাউকে কিছু বলব না, বাংলাদেশে চলে যাব: রোহিঙ্গা নারী
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এখনো পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে অনেকে। এতদিন বনে জঙ্গলে লুকিয়ে যারা বাঁচতে পেরেছেন তারাই এখন আসছেন বলে জানাচ্ছেন আশ্রয়প্রার্থী নারী-পুরুষরা।  

 

শুরুর মতো ভীতসন্ত্রস্ত মানুষের ঢল এখন না থাকলেও রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ আর শিশুরা আসছে ছোট ছোট দলে। তাদের বেশিরভাগই হারিয়েছেন পরিবারের কোনো না কোনো সদস্যকে। নিজেরাও কেউ কেউ বর্বর নির্যাতনের শিকার।  

 

টেকনাফে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা শাহপরীর দ্বীপে কথা হয় মংডুর ২০ বছর বয়সী আসমার (ছদ্মনাম) সঙ্গে। মঙ্গলবার ১৫ জনের একটি দলে বাংলাদেশে ঢুকেছেন আসমা। আসমা জানান, মিয়ানমারে সেনা সদস্যরা তার স্বামী ও ভাইকে হত্যা করে এবং তার ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন।

 

তার ভাষায়, ‘১০/১২ জন সৈন্য মিলে আমাকে ধর্ষণ করে। কি যে কষ্ট সহ্য করতে পারছিলাম না। ওদের অত্যাচারে অনেক মেয়ে মরে গেছে। আমাকেও যখন মেরে ফেলতে চাইল, তখন বাচ্চা দু’টোকে দেখিয়ে ওদের পা জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভিক্ষা চাইলাম। বললাম, কাউকে বলব না বার্মায় (মিয়ানমার) কী হয়েছে, বাংলাদেশে চলে যাব এখুনি।’

 

কাকুতি মিনতি আর ছোট্ট দু’টি বাচ্চা দেখিয়ে ছাড়া পেয়ে ১৫ দিন জঙ্গলে কাটান আসমা। সঙ্গে ১২ বছর বয়সী ছোট ভাই আর দুই সন্তান। কিন্তু বাংলাদেশে প্রবেশের চার দিন আগে অসুস্থ হয়ে পথেই মারা গেছে তার চার বছর বয়সী বড় ছেলেটি। এক সন্তান আর ভাইকে নিয়ে বহু কষ্টে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন বলে জানান তিনি।

 

আসমা বলেন, ‘হাঁটতে হাঁটতে পা ফুলে গেছে। এদেশে এসে যে সাহায্য পেয়েছি, নিজের দেশে তা পাইনি। বার্মার অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের বলে, সেদেশ শুধু তাদের, মুসলমানের নয়।’

 

মংডুর আরেক অধিবাসী রফেকা বলেন, তার স্বামীর গলা কেটে মেরেছে সেখানকার অমুসলিম সম্প্রদায়ের অস্ত্রধারীরা। আর তার ভাইয়ের স্ত্রীকে ধর্ষণের পর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কেটে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি দুই সন্তান নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। রাখাইন থেকে তরুণী মেয়েরা অনেকেই আসতে পারেনি বলেও জানায় রফেকা।

 

তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই ধরপাকড় চলে। সুন্দরী মেয়েদের তুলে নিয়ে জুলুম করে মিলিটারিরা। তারপর হাত-পা, বুক কেটে ফেলে দেয়।’

 

অত্যাচারের কারণে বছরখানেক আগে অন্য গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিল রফেকার পরিবার। রফেকা জানান, আসার আগে কয়েকদিন তারা দিনে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতেন আর রাতে বাড়িতে যেতেন। রফেকার বিবরণে অত্যাচার ও সহিংসতার মাত্রা এতটাই ভয়াবহ পর্যায়ে গিয়েছিল যে গ্রামের সবাই যে যেদিকে পেরেছে পালিয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘মগরা আমাদের প্রতিনিয়ত জ্বালায়। বাড়িতে হানা দেয়। পুরুষদের ধরে নিয়ে যায়। মেয়েদের ধরে নিয়ে যায় অত্যাচার, জুলুম করে। আমার ভাবীকে গুলি করে মেরেছে। মারার আগে তাকে জুলুম করে (ধর্ষণ) মগ মিলিটারিরা। হাত-পা কেটে ফেলে।’

 

স্বামী হারানোর পর দুই সন্তান নিয়ে আট দিন হেঁটে বাংলাদেশে ঢুকেছেন রফেকা।

 

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নারীরা অত্যাচার ও নির্যাতনের যে বিবরণ দিচ্ছে, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে বেশিরভাগ রোহিঙ্গার বক্তব্যে নির্যাতনের চিত্র একই রকম।

 

এদিকে সম্প্রতি মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি এবং বুধবার জাতিসংঘে দেশটির ভাইস প্রেসিডেন্ট যে বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে এসব নির্যাতনের প্রসঙ্গে কিছুই বলা হয়নি। তবে রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার না সরকারের পক্ষে বলা হয়, মুসলমানরা কেন বাংলাদেশে পালিয়ে যাচ্ছে তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন।

 

মিয়ানমার সরকারের বক্তব্য, রাখাইনের পরিস্থিতি এখন অনেকটাই শান্ত। কিন্তু সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এরকম বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করছেন অনেকেই। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের মিয়ানমার বিষয়ক তথ্যানুসন্ধান কমিটিও রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কী ঘটেছে এবং ঘটছে সেটি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে।

 

জাতিসংঘের হিসাবে, গত কয়েক সপ্তাহে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় ৮০ ভাগই নারী ও শিশু। এই বিপুলসংখ্যক শরণার্থীদের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com