রোহিঙ্গা সংকটে এত দিন নীরব থাকায় বেশ সমালোচিত হচ্ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী, মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি। অবশেষ ‘দীর্ঘ’ নীরবতা ভেঙে মঙ্গলবার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে ভাষণ দিয়েছেন তিনি। স্থানীয় সময় সকাল ৯টা ৪ মিনিটে টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশে তিনি এ ভাষণ দেন।
সুচির ভাষণ নিয়ে অনেকের মাঝে ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও, তার ভাষণের কিছু কথা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকে অভিযোগ করছেন, সুচি বাস্তবতা এড়িয়ে গেছেন। তিনি তার ভাষণে বলেছেন, চার লাখ রোহিঙ্গা মুসলমান কেন বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছু জানেন না।
জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যখন বলছে- রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ‘জাতিগতভাবে নির্মূল’ করা হচ্ছে, তখন রোহিঙ্গাদের পালিয়ে যাওয়া নিয়ে সুচি অবগত না থাকার কথা বেশ হতবাক করেছে।
মিয়ানমারের নেত্রী বলেন, রাখাইন থেকে অধিকাংশ মুসলিম পালিয়ে যাননি এবং সহিংসতা বন্ধ হয়ে গেছে। এ সংঘাতের কারণে দুর্দশাগ্রস্ত ‘সকল মানুষের’ প্রতি গভীর সমবেদনাও জানিয়েছেন সুচি।
মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহার করে না। তারা রোহিঙ্গাদের ‘বাঙালি মুসলিম’ হিসেবে বর্ণনা করে। সুচিও তার বক্তব্যে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেননি।
সুচি বলেন, অধিকাংশ মুসলিম রাখাইন অঞ্চলে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এতে বোঝা যায় সেখানে পরিস্থিতি খুব মারাত্মক নয়। তিনি বলেন, মুসলিমদের সাথে কথা বলে রাখাইনের সংকট সম্পর্কে জানতে চান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাখাইনে বসবাসরত মুসলিমদের জীবন মান উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলেও সুচি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত শরণার্থীরা তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর মিয়ানমারে ফিরে যেতে পারবে বলে তিনি জানান। কিন্তু বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি যা বলেছেন, তা এত সহজ নয়। কারণ, মিয়ানমারের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে তাদের কাগজপত্র দিতে হবে। অথচ সে দেশের সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে কোনো কাগজপত্র দেয়নি।
সুচি তার ভাষণে বলেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর থেকে রাখাইনে কোনো অভিযান চালানো হয়নি। কিন্তু এ বিষয়টি সত্য নয়। বিবিসির সাংবাদিক জোনাথন হেড বলেন, ৫ সেপ্টেম্বরের পর তিনি যখন মিয়ানমার সরকারের তত্ত্বাবধানে রাখাইনে গিয়েছিলেন, তখন তিনি সেখানে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করতে দেখেছেন।
বক্তৃতার সময় সুচি খানিকটা দৃঢ় কণ্ঠে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং আইন বহির্ভূত কাজের নিন্দা করেন। কিন্তু রাখাইন অঞ্চলে সেনাবাহিনীর নিপীড়ন নিয়ে কিছু না বলায় সুচির সমালোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ বলেন, সুচির হয়তো বাস্তবতার সাথে সম্পর্ক নেই। নতুবা তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে বাস্তবতা থেকে চোখ ফিরিয়ে রেখেছেন। সূত্র: বিবিসি
বিবার্তা/নিশি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]