মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে প্রায় চার লাখ মানুষ বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আব্দুল আজিজও তাদের একজন। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর কাছে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের কাছে বর্ণনা করেছেন সেখানকার পরিস্থিতি ও নির্যাতনের কথা। নিচে আব্দুল আজিজের কথা হবহু বর্ণনা করা হলো-
আমার বাড়ি রাখাইনের গারোতো বিলে। সেদিন ছিল বুধবার। বিকেলে আছরের নামাজ পড়তে বের হয়েছি। সেসময় আমাকে ধরে নিয়ে যায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। বাড়ি থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিছু্ই বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
চোখ খুললে বুঝতে পারলাম আমাকে একটা ‘গ্যারানের টেরায়’ অর্থাৎ ‘গোয়াল ঘরে’ নিয়ে রাখা হয়েছে। দেখলাম ঘরভর্তি মানুষ। আমার মতোই তাদেরকেও ধরে আনা হয়েছে। সেখানে আমাদেরকে গরুর রশি দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়।
সেখানে দুইজন পাহারা দিচ্ছিলো, তাই কারো বের হওয়ার সুযোগ ছিল না। প্রচণ্ড মারধর করে আমাকে। তারা মিয়ানমার ভাষায় বলছিল, ‘লো কালা’ অর্থাৎ তোরা আমাদের দেশি না, তোরা বাঙালি। তোরা ওখানেই চলে যা।
আমার সামনে কয়েকজনকে জবাই করছে আবার কাউকে কাউকে গুলি করে মেরেছে। গুলির পর তখনো যদি সে নড়তে থাকে তাহলে তাকে জবাই করে দেয়। পাহারাদাররা যখন দরজা থেকে সরে গেছে তখন তাদের অবস্থান দেখে আমি পালিয়ে আসি।
আমাকে ধরে নিয়ে গেছিলো আছরের সময় আর আমি পালিয়ে আসি এশার সময়। আমি যখন ওইখান থেকে বের হয়ে আসি তখন যাদেরকে হত্যা করেনি, তাদের সবার হাত পা বাঁধা ছিল। এরপর কি করেছে আমি জানি না। আমি যখন এসেছি তখনো ওইখানে অনেক মানুষ ছিল। তবে কোনো নারী ছিল না।
আমি বাড়ি ফিরে দেখি আমার ঘর আগে যেমন ছিল তেমন আর নেই। বাড়িটি বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে নাকি ম্যাচের আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমার প্রতিবেশীরা বলেছে, বোমা মেরে জ্বালিয়ে দিয়েছে। এরপর থেকে আমার মা বাবার সাথে দেখা হয়নি, বাংলাদেশে এসেও তাদের খোঁজ পাইনি ।
ওখানে মুসলিমদের কোনো দাম নাই। খাবার পানিও দেয়া হয় না ওদের। ভয়ে আতঙ্কে আমার গলা শুকিয়ে আসছিল। বন্দি অবস্থায় দুই আড়াই ঘণ্টা ছিলাম তখন অন্যদের জিজ্ঞাসা করেছি- এখানে কোনো খাবার পানি দেয় কিনা। তারা বলেছে, কোনো খাবার বা পানি দেয় না।
ওইখানে আমার মতো যুবক যারা ছিল, তাদেরকে আগেই ধরে নিয়ে গেছে, তাদেরকে মেরে ও কেটে ফেলেছে। এরপর ওখানে বেঁধে রাখা আরো অনেকে ছিল। ওখানে যুদ্ধ করছে এমন কোনো রোহিঙ্গা আমরা পাইনি। ওখানে যুদ্ধ করার মতো লোক আছে বলে আমার মনে হয় না।
বিবার্তা/নিশি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]