শিরোনাম
স্বামী পরিত্যাক্তা হচ্ছেন গণধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীরা
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০১৭, ১১:৩১
স্বামী পরিত্যাক্তা হচ্ছেন গণধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা নারীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গ্রামগুলোতে সৈন্যদের অভিযান থেকে বাঁচতে সব পুরুষ পালিয়ে গিয়েছিল। ফেলে গিয়েছিল শিশু, নারী আর বৃদ্ধদের। সেনাবাহিনীর মাসের পর মাস চলা এ ‘নির্মূল অভিযানের’ সময় ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বহু রোহিঙ্গা মুসলিম নারী। ফিরে এসে ধর্ষণের কথা জানার পর অনেক স্বামীই তাদের স্ত্রীকে ত্যাগ করেছেন। ফলে মনবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

 

তাদেরই একজন আয়মার বাগন। তিনি যখন তার স্বামীকে জানান, তার গর্ভাবস্থার একেবারে শেষ পর্যায়ে মিয়ানমারের সৈন্যরা তাকে গণর্ধষণ করে, তখন তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান। এরপর থেকে কোনোরকমে খেয়ে না খেয়ে জীবনধারণ করছেন আয়মার।

 

সম্প্রতি মিয়ানমার সরকারের পরিচালিত একটি সফরে রাখাইন প্রদেশে গিয়ে আয়মার বাগনের সঙ্গে কথা বলে বার্তা সংস্থা এএফপি।

 

আয়মার বাগনের বয়স মাত্র ২০। তিনি কায়ার গং টং নামে একটি গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামে বার্তা সংস্থার সংবাদদাতা সরকারি লোকজনের অজ্ঞাতসারে একদল রোহিঙ্গা নারীর সাথে কথা বলেন, যারা সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতনের কাহিনী বর্ণনা করেন সংবাদদাতার কাছে।

 

ছোট একটি কন্যাশিশুকে কোলে নিয়ে আয়মার বাগন বলেন, ‘সন্তান প্রসবের মাত্র কয়েকদিন আগে আমাকে ধর্ষণ করা হয়। আমার তখন নয় মাস চলছিল। তারা জানতো আমি গর্ভবতী, কিন্তু তাতেও দমেনি।’

 

তিনি বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য আমাকে অভিযুক্ত করে আমার স্বামী। সে কারণে সে অন্য এক নারীকে বিয়ে করে আরেক গ্রামে গিয়ে থাকছে এখন।’

 

দুই সন্তানের মাতা হাসিন্নার বায়গনের বয়সও ২০। তিনি বলেন, তাকেও পরিত্যাগের হুমকি দিয়েছে তার স্বামী। কারণ, গত ডিসেম্বরে তিনজন সৈন্য তাকে ধর্ষণ করেছিল।

 

এসব ঘটনা যখন ঘটছিল তখন রাখাইনের গ্রামগুলো ছিল পুরুষশূন্য, রয়ে গিয়েছিল শুধু নারী, শিশু আর বয়স্করা। জাতিসংঘের আশঙ্কা, ওই অভিযান এতটাই নিষ্ঠুর ছিল যে সেটা মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান।মাসের পর মাস চলা অভিযানের সময় বহু মানুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

 

মানবাধিকারী গোষ্ঠীগুলোও বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী সীমান্তের জাতিগত সংঘাতগুলোতে ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

 

অবশ্য, সৈন্যদের ধর্ষণ করার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে মিয়ানমার সরকার। এ অভিযোগগুলো নিরপেক্ষভাবে যাচাই করাও সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ৭৪ হাজার রোহিঙ্গাদের অনেকেই জাতিসংঘ তদন্তকারী এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর কাছে যেসব অভিযোগ জানিয়েছে, সেগুলোর সাথে এগুলো মিলে গেছে।

 

কায়ার গং টংয়ের রোহিঙ্গারা বলছে, তাদের গ্রামে ১৫টির মতো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে তিনটি ধর্ষণের ঘটনায় তারা মামলা করেছেন, কিন্তু কোনো ব্যবস্থাই নেয়া হয়নি। বাকিরা ভবিষ্যত হয়রানির আশঙ্কায় অভিযোগ জানাতে চায়নি।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গ্রামবাসী বলেন, ‘কয়েকজন নারী সম্মানহানির ভয়ে অভিযোগ জানায়নি।’  সূত্র: বিবিসি

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com