শিরোনাম
ইসলাম কি জার্মানিকে বদলে দিচ্ছে?
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৭, ১৫:৫৪
ইসলাম কি জার্মানিকে বদলে দিচ্ছে?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জার্মানিতে ৪০ লাখেরও বেশি মুসলিম বাস করে। তারা কি এই দেশটিকে বদলে দিচ্ছে? যদি দেয়, তাহলে সেটা কীভাবে? জার্মান বেতার ডয়চে ভেলে এর উত্তর খুঁজেছে জার্মানির সংস্কৃতির অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কোলন এবং এর আশপাশের এলাকায়।


২০১৫ সালে প্রায় ১০ লাখ উদ্বাস্তুকে আশ্রয় দেয়ার পর জার্মানিজুড়ে আলোচনার অন্যতম বিষয়বস্তুতে পরিণত হয় ইসলাম। আগামী সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য জার্মানির সংসদীয় নির্বাচন উপলক্ষে দেশটির ছয়টি বড় শহরে নানা প্রশ্ন নিয়ে সাধারণ মানুষের মুখোমুখি হন ডয়চে ভেলের দুই প্রতিবেদক নিনা হাসে ও সুমি সমাস্কান্দা। তাঁদের মতে, এবারের নির্বাচন নিয়ে আলাপ-আলোচনার সময় সবচেয়ে কঠিন ছিল ইসলাম নিয়ে কথা বলা।


ইসলাম জার্মানিকে ধারণ করে কিনা – এই প্রশ্ন উঠলেই ছড়িয়েছে, ছড়াচ্ছে উত্তাপ, জমে উঠছে আলোচনা। অনেকে এটাকে ‘শান্তি ও সহিষ্ণুতার' ধর্ম হিসেবে দেখেন, অনেকে আবার মনে করেন, ‘ঘৃণার বাহক' বলে। কারো কারো কাছে রাস্তায় চলা নারীদের স্কার্ফ ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার অংশ, আবার কারো মতে নিপীড়নের প্রতীক।


জার্মান সংস্কৃতির কেন্দ্র কোলন শহরে গত মাসে নতুন একটি কেন্দ্রীয় মসজিদ উদ্বোধন হয়। অটোমান তুর্কীদের ধাঁচে নির্মিত ৫৫ মিটার উঁচু মিনার জানান দিচ্ছে মসজিদের অস্তিত্ব। তারকাখচিত মসজিদের ভেতরটায় একত্রে হাজারেরও বেশি মানুষ নামাজ পড়তে পারেন। এই মসজিদটি অনেক বিতর্কেরও জন্ম দিয়েছে। যেমন, কোলনের প্রধান গির্জার গম্বুজ শতাব্দীর পর শতাব্দী আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সেই আকাশে ভাগ বসাবে মিনার – এটা মানতে পারছিলেন না অনেক খ্রিষ্টান নেতা। তাই এই স্থাপনা নিয়ে নগরের প্রধান স্থপতির দপ্তরকে রাজি করাতে টার্কিশ-ইসলামিক ইউনিয়ন ফর রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ারকে (ডিআইটিআইবি) বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে।


জার্মানিতে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সংগঠন ডিআইটিআইবি। এটি তুরস্ক সরকারের ধর্ম বিষয়ক কর্তৃপক্ষের অংশ। দলটিকে ঘিরে সম্প্রতি তুরস্ক-জার্মানির সম্পর্ক অবনতি হয়েছে। দলটির বিরুদ্ধে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ানের স্বার্থে কাজ কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। আন্তঃধর্মীয় জীবন এখানে কতটা জটিল - এটা যেন সেটারই একটা চিত্র৷


পরিসংখ্যানের অধ্যাপক ও পরামর্শক ইউসেফ এল ওয়াদুদী বাস করেন কোলনে। তিনি মরোক্কো থেকে ১৮ বছর আগে জার্মানিতে আসেন। এখানে তিনি একজন ভিন্নধর্মী নারীকে বিয়ে করেন। পালন করতে থাকেন সংসারধর্ম। তাঁর ''মুসলিম'' পরিচয় এখন অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে। গতানুগতিক ছাঁচ এবং পক্ষপাতিত্বে ইসলামকে ঘিরে থাকা রাজনৈতিক ডিসকোর্স ক্রমেই দূষিত হয়ে যাচ্ছে বলে তাঁর মত। তিনি বলেন, ''সমস্যা হচ্ছে, সব ধর্মই মনে করে, সেই একমাত্র সত্য। মানুষ ধর্মকে বিভিন্নভাবে দেখে। যেমন কালো চুলের একজন মানুষ মানেই মনে করা হয়, তিনি মুসলিম৷ সুতরাং মুসলিম যদি কারো শত্রু হয়, তাহলে ব্যক্তিগতভাবে চিনুক না চিনুক, কালো চুল দেখলেই শত্রু মনে করা হয়। আপনি ধার্মিক কিনা, সেটা বিষয় নয়, এই সামাজিক সমস্যা আমাদের সবার জীবনকে প্রভাবিত করছে।''


এল ওয়াদুদীর আশপাশে হাত বাড়ালেই মরোক্কান দোকান, রেস্তোরাঁ ও মসজিদ; যেখানে অধিকাংশ মানুষই রক্ষণশীল। তাঁর মতে, মুসলমানদের সমস্যাটাও গভীর। এর ফলে নিজস্ব কমিউনিটির ভেতরেও গঠনমূলক সংলাপ হয় না। উদার ও রক্ষণশীল মুসলমানদের মাঝেও খুবই কম যোগাযোগ হয়, তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বললেও ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থেকে যায়। এটার সবচেয়ে ভালো সমাধান হচ্ছে, ইসলামের বিভিন্ন শাখার মধ্যে একটা আলোচনার সূত্রপাত করা।


অন্যদিকে রক্ষণশীল মুসলমানরাও বলছেন, তাঁরা সংলাপের জন্য প্রস্তুত৷


বনের পাশেই বাড গোডেসবার্গ আল-আনসার মসজিদের ইমাম আবদেলকাদের ইজেইম বলেন, এ সব ঘটনায় অনেক নেতিবাচক চিত্র তৈরি হয়েছে। অনেক মুসলিম রয়েছে, যারা আমাদের সম্মিলিত ভাবমূর্তি নষ্ট করে দিয়েছে। ফলে এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, মুসলিম ও ইসলাম এ রকমই। আমরা এই সব উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা করছি। জার্মানদের দেখাতে চাই, এটা বাস্তবতা নয়। ভালো ভালো কাজ করাই ইসলামের মূল শিক্ষা। অন্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ভয় করা উচিত নয়। কারণ, ইসলাম শান্তির ধর্ম৷


কোলনে লিবারেল ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে এর সংগঠক আনিকা মেহমেতি বলেন, জার্মানির উচিত, ইসলামকে তাঁদের দেশের অংশ হিসেবে গ্রহণ করা। এটা জার্মানিকে আরো উন্মুক্ত ও সহিষ্ণু সমাজ উপহার দেবে।


তিনি বলেন, ‘‘কিছু কিছু মানুষ এটাকে দূরে ঠেলে দেয়। তাঁরা বলে, এখানে ইসলামের কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু তাঁরা বাস্তবতায় নেই৷।ইসলাম এখানে রয়েছে এবং সেটা একটা ভালো বিষয়। অবশ্যই ইসলামের উচিত অন্য ধর্ম ও গণতন্ত্রের সাথে একই সমতলে এখানে অবস্থান করা।''


মেহমেতি বলেন, ‘‘ইসলাম ও মুসলিমরা জার্মানিকে ধারণ করে না – আমি এটা আর শুনতে চাই না।''


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com