শিরোনাম
বিশ্বজুড়ে রমজান
প্রকাশ : ২৭ মে ২০১৭, ১৩:১৭
বিশ্বজুড়ে রমজান
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শুরু হয়েছে মাহে রমজান। পবিত্র এ মাস জুড়ে মহান আল্লাহ তায়ালার সান্নিধ্য লাভের আশায় সাওম বা রোজা পালন করে মুসলমান সম্প্রদায়। পবিত্রতা আর পরিশুদ্ধতার মধ্য দিয়ে পালিত হয় রমজানের সব আনুষ্ঠানিকতা। পারিভাষিক অর্থে, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সমস্তপ্রকার খাদ্যদ্রব্য, পানীয়দ্রব্য ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকাই হচ্ছে রোজা। রোজা রাখার নিয়ম সব জায়গায় একই। তবে দেশে-দেশে, সংস্কৃতিভেদে রোজার কার্যকলাপ, ইবাদত বন্দেগি এবং সেহরি ও ইফতারের ধরনে ভিন্নতা দেখা যায়।

 

পথচারীদের ইফতার করাতে সড়কের মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকেন সুদানের আল নুবা গ্রামবাসী

সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিভাজন ও মতবিরোধের ফলে আফ্রিকার দেশ সুদানে দীর্ঘদিন ধরেই চলছে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। দেশটির ৭০ শতাংশ জনগণই ইসলাম ধর্মাবলম্বী। সুদানের জাজিরা প্রদেশের একটি গ্রামের নাম আল নুবা। এই গ্রামে পবিত্র রমজান মাসের বিকেলটি থাকে অন্য সময়ের চেয়ে ভিন্ন।

 

রমজান মাসে পর্যটক ও পথচারীদের সেবায় এ গ্রামের মানুষ রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামে। ইফতার সাজিয়ে সন্ধ্যায় বাসিন্দারা ছুটতে থাকেন প্রধান সড়কের দিকে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা সড়কের মাঝখানে গিয়ে যানবাহন থামান। বলা যায়, এক প্রকার জোর করেই গাড়ি থামিয়ে যাত্রীদের ইফতার করান এ গ্রামের লোকেরা।

 

মিসরে কামানের গোলার শব্দে ইফতার ও সেহরি

মিসরে উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয় রোজা। রমজান মাসে সরকারি ব্যবস্থাপনায় কমিয়ে আনা হয় কর্মঘণ্টা, যাতে মানুষ ইবাদত এবং মসজিদে বেশি সময় ব্যয় করতে পারেন। রমজানের রাতে ঘরে ঘরে বাতি জ্বালানো এবং ফানুস উড়ানো মিসরীয়দের অনেক পুরনো সংস্কৃতি। মিসরীয়রা কামানের গোলার শব্দে ইফতার করেন এবং সেহরি শেষ করেন।

 

হিরোশিমার ইফতারে থাকেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও

জাপানের হিরোশিমা শহরের ৪৫ কিলোমিটার পূর্বে হিরোশিমা ইউনিভার্সিটিকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে হিগাশি-হিরোশিমা শহরটি। শহরের প্রায় দুই লাখ জনসংখ্যার মধ্যে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা প্রায় ২০০ জন।

 

হিরোশিমা প্রিফেকচারের সবচেয়ে বড় ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অবস্থিত হিগাশি-হিরোশিমায়। পবিত্র রমজান উপলক্ষে এই সেন্টারে সব প্রবাসী মুসলমান একত্রিত হয়ে ইফতার করেন। প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, মুসল্লিরা এখানে ইফতার করেন খেজুর ও পানি দিয়ে। এরপর মাগরিবের নামাজ আদায় শেষে সবাই একসাথে রাতের খাবার খান। এ খাবারেরও আয়োজন করা হয় বিশেষভাবে।

 

প্রতিদিন দায়িত্ব থাকে একেক কমিউনিটির। বিভিন্ন কমিউনিটি আয়োজনের দায়িত্বে থাকায় দেশের অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশ নেয় এ খাবারে; আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রেও তারা অংশগ্রহণ করেন সাগ্রহে।

 

ইরানে মাসব্যাপী ইতেকাফ, মুসাফিরদের জন্য রোজা হারাম

শিয়া অধ্যুষিত ইরানে মাসজুড়ে বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে পালিত হয় মাহে রমজান। রমজানজুড়ে ইরানের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। কোনো দান–দক্ষিণা ছাড়াই ছাত্র-শিক্ষকরা গ্রাম-গঞ্জে মানুষকে শরিয়ত ও আধ্যাত্মিক বিষয়ে তালিম দেন। ইরানের ফকিহদের মতে, কোনো ব্যক্তি মাত্র ১৭ কিলোমিটার ভ্রমণ করলেই সে মুসাফির হিসেবে গণ্য হবে। আর মুসাফিরদের জন্য রোজা রাখা ইরানি আলেমদের মতে হারাম।

 

অধিকাংশ ইরানিই মাসব্যাপী ইতেকাফ করে থাকেন। সারা দিন অফিস করে মসজিদে রাত যাপন করে ইতেকাফ করেন তারা। ইতেকাফকারীদের খাবার মসজিদ কর্তৃপক্ষই সরবরাহ করেন।

 

১৯ রমজান আলী (রা.) ছুরিকাহত হন এবং ২১ রমজান শাহাদাতবরণ করেন। এ স্মৃতিকে ধরে রাখতে নানা আয়োজনের মাধ্যমে তিন দিন শোক পালন করেন ইরানিরা। অনেকে এ তিন দিনকে ‘লাইলাতুল কদর’ হিসেবে পালন করেন।

 

 

আইসল্যান্ডে ২২, সুইডেনে ২০ ঘণ্টা রোজা

আইসল্যান্ডে মাত্র ৭৭০ জন মুসলমানের বাস। এ অল্পসংখ্যক মুসলমানদের রোজার সময়সীমা বিশ্বের যেকোনো মুসলমানদের চেয়ে ঢের বেশি। ইফতারের মাত্র দুই ঘণ্টা পরই সেহরি শেষ করতে হয় তাদের। স্থানীয় সময় অনুযায়ী, রাত ২টায় সেহরি খেয়ে পর দিন রাত ১২টায় ইফতার করতে হবে তাদের। অর্থাৎ, আইসল্যান্ডের মুসলমানদের রোজা ২২ ঘণ্টা।

 

এক্ষেত্রে খুব একটা পিছিয়ে নেই সুইডেনের মুসলমানরাও। প্রায় পাঁচ লাখ মুসলমানের বসবাস সুইডেনে। গ্রীষ্মের রোজা সুইডেনদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। ইফতারের মাত্র চার ঘণ্টা পর সেহরি খেতে হয় তাদের। অর্থাৎ ২০ ঘণ্টা রোজা রাখতে হয় তাদের। 

 

জার্মান ও ইংল্যান্ডে ১৯ ঘণ্টা রোজা

১৯ ঘণ্টা রোজা রাখেন জার্মানের মুসলমানরা। রাত ৩টায় সেহরি খেয়ে পরদিন রাত ১০টায় ইফতার করেন তারা। অন্যদিকে, জার্মানের মুসলমানদের চেয়ে পাঁচ মিনিট কম অর্থাৎ ১৮ ঘণ্টা ৫৫ মিনিট রোজা রাখেন ইংল্যান্ডের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। দেশটির বেশিরভাগ মুসলমান ডায়াবেটিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত। তাই এত দীর্ঘ সময় রোজা রাখা তাদের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। 

 

তুরস্কে মাসজুড়ে বইমেলা, খেজুরের পরিবর্তে জলপাই দিয়ে ইফতার

রমজানজুড়ে বড় বড় মসজিদের পাশে বইমেলা এবং কোরআন প্রতিযোগিতা তুর্কিদের রমজান সংস্কৃতির অংশ। দিনের বেলায় রেস্টুরেন্ট এবং খাবারের দোকান বন্ধ থাকলেও দুপুরের পর থেকেই চলতে থাকে ইফতারের আয়োজন। সেহরি ও ইফতারে মুসলমানদের সঙ্গে অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও অংশ নিতে দেখা যায়। তুর্কিরা খেজুরের পরিবর্তে জলপাই দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করেন।  

 

প্রায় শতভাগ মুসলমানের দেশ তুরস্কে রমজান উপলক্ষে অফিসের সময় বদলানো হয় না। অন্য সময়ের মতোই তারা অফিস করেন এবং ইফাতারের আগে ঘরে ফেরার চেষ্টা করেন। সেহরির সময় একদল লোক ড্রাম বাজিয়ে, গান গেয়ে এলাকাবাসী জাগানোর চেষ্টা করেন। মিসরের মতো এখানেও সেহরি ও ইফতারে কামানের গোলার শব্দ ব্যবহার করা হয়।

 

ওমানে রমজানে কমে নিত্যপণ্যের দাম, পরিচয় গোপন রেখে দান-সাদকা

সাধারণত আমাদের দেশে রমজান এলে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা, ঠিক উল্টো চিত্র দেখা যায় ওমানে। রমজান উপলক্ষে সেখানে বিভিন্ন কোম্পানির থাকে বিশেষ ছাড়। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য থাকে হাতের নাগালে।

 

রমজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই ওমানের বিভিন্ন রাস্তার পাশে কিংবা বাজারে দেখতে পাওয়া যায় সারি সারি তাঁবু। এসব তাঁবু রোজাদারদের ইফতার করানোর জন্য বিশেষভাবে তৈরি।

 

রমজান মাসে ওমানে দান-খয়রাতের পরিমাণও বেড়ে যায়। এখানকার মানুষ ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বেশি পরিমাণে দান করেন। দানের সময় শর্ত জুড়ে দেন, যেন তার নাম প্রকাশ না হয় এবং রসিদ নেয়ার সময় রসিদে নাম পর্যন্ত লেখান না। রসিদে লেখা হয় একজন দাতা কিংবা আবদুল্লাহ (আল্লাহর বান্দা)।

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com