শিরোনাম
‘আমি কাশ্মীরি, এটাই আমার অপরাধ’
প্রকাশ : ২৪ মে ২০১৭, ১৫:৩৫
‘আমি কাশ্মীরি, এটাই আমার অপরাধ’
আন্তর্জাতক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

যারা ওই পুরস্কারটা দিল, তাদের সন্তানকে যদি আমার মতো জীপের সামনে মানবঢাল করে বসিয়ে রাখা হতো, তাহলে? এমনই প্রশ্ন করেছেন কাশ্মীরের যুবক ফারুক আহমদ দার।

 

গত এপ্রিলে উপ-নির্বাচনের দিন ফারুক দারকে মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নিজেদের জিপের সামনে বেঁধে ঘুরেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। সে ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। আবার তাদের ওই কাজকে সমর্থনও জানিয়েছেন বহু মানুষ।

 

গত মাসের ওই ঘটনাই দুইদিন আগে আবারও চর্চার বিষয় হয়ে উঠে। যে সেনা দারকে জীপে বেঁধে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, রাষ্ট্রীয় রাইফেলসের সেই মেজর লিতুল গগৈকে সম্মানিত করেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। ‘কাউন্টার ইন্সারজেন্সি অপারেশনে’ ধারাবাহিক অবদানের জন্য তাকে প্রশংসাপত্র দেয়া হয়।

 

ওই সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর সংবাদমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে দার বলেন, ‘আমার কি এটাই অপরাধ যে আমি কাশ্মীরি? এত দেখা যাচ্ছে ন্যায়বিচারকে কবর দেয়া হচ্ছে। যে জুলুম করল, সে পুরস্কৃত হচ্ছে।’

 

ওই সেনা কর্মকর্তার শাস্তির দাবি করেন তিনি।

 

অন্যদিকে, মেজর গগৈ বলেন, ‘যারা আমাদের দিকে সেদিন পাথর ছুঁড়ছিল, তাদের উস্কানি দিচ্ছিলেন ফারুক আহমেদ দার। তাকে আটক করতে আমাদের বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।’  

 

তিনি বলেন, ‘যখনই আমার কর্মীদের আদেশ দিই যে দারকে ধরে জীপের সামনে বেঁধে রাখ, তখনই পাথর ছোঁড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আমরা ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলাম। সেদিন অনেক মানুষের প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল। যদি আমাকে তখন গুলি চালানোর আদেশ দিতে হত, তাহলে অন্তত ডজনখানেক মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা ছিল।’

 

তবে দার প্রথম থেকেই বলে আসছেন, কট্টরপন্থীদের ভোট বয়কটের ডাক উপেক্ষা করে তিনি সেদিন উপ-নির্বাচনে ভোট দিতে বেরিয়েছিলেন। ভোট দিয়েছিলেন তিনি।

 

এখনো সেদিনের কথা মনে পড়লে আতঙ্ক গ্রাস করে দারকে। তিনি বলেন, ‘সেদিনের ঘটনার পর আমার মাথা কাজ করছে না। আগে দিনে কাজ করে ৫০-১০০ টাকা আয় করতাম। সেদিনের পর থেকে তাও বন্ধ। সন্ধ্যা হলেই আতঙ্ক আরো যেন গ্রাস করতে থাকে।’  

 

দার বলেন, ‘ওই কর্মকর্তাকে যখন সম্মানিত করা হয়েছে, তখন তিনি নিশ্চয়ই আবারও এই ক্যাম্পে আসবেন। আমার তো ভয় হচ্ছে, এখন আমার কী হবো তিনি ফিরে এলে আমার অবস্থা তো আরো কঠিন করে দেবেন।’

 

পুলিশ ওই ঘটনায় একটি মামলা করেছে। সেনাবাহিনীও আলাদা কোর্ট অফ এনকোয়ারি বসিয়েছে। শ্রীনগরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া বলছেন, সেই কোর্ট অফ এনকোয়ারির কাজ শেষ পর্যায়ে। পুলিশের তদন্তও চলছে একই সঙ্গে।

 

এদিকে, জম্মু-কাশ্মিরে সেনাবাহিনীর মেজর গগৈকে পুরস্কৃত করে ভারতীয় সেনাবাহিনী মানবাধিকারকে অপমান করেছে বলে মন্তব্য করেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। সংস্থাটির ভারতীয় শাখার নির্বাহী পরিচালক আকার প্যাটেল বলেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তের মুখোমুখি হওয়া কর্মকর্তাকে পুরস্কৃত করার অর্থ সেনাবাহিনী নির্দয়, অমানবিক এবং অপমানজনক আচরণের ওই ঘটনাকে বৈধ বলতে চাচ্ছে, যা নির্যাতনের সমান। সূত্র: বিবিসি

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com