বিদ্রোহীদের দখলে সিরিয়ার চতুর্থ শহর ‘দারা’
প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩:০৮
বিদ্রোহীদের দখলে সিরিয়ার চতুর্থ শহর ‘দারা’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মাত্র এক সপ্তাহের অভিযানে সিরিয়ার দক্ষিণের শহর দারা দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। এটি সিরিয়ার চতুর্থ শহর। ২০১১ সালে এই শহর থেকেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে উৎখাতের আন্দোলন শুরু হয়েছিল।


গত ৩০ নভেম্বর অভিযান শুরুর পর থেকে ইতোমধ্যে দেইর আল জোর, হামা এবং আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে তাদের হাতে।


সিরিয়া দখলের অভিযানে নামা এই বিদ্রোহীরা মূলত সিরিয়ার বিভিন্ন সুন্নিপন্থি জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য ও যোদ্ধা। বিদ্রোহীদের দলটির নেতৃত্ব দিচ্ছে হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) নামের একটি জঙ্গিগোষ্ঠী।


হায়াত তাহরির-আল-শাম পুরোনো একটি দল। এটি ২০১১ সালে জাবহাত আল-নুসরা নামে আত্মপ্রকাশ করেছিল। দলটির সঙ্গে আল কায়েদার সরাসরি সংযোগ ছিল। পরবর্তীতে ২০১৬ সালে তারা নাম পরিবর্তন করে। জঙ্গিগোষ্ঠী আইএসের প্রধান আবু বকর আল-বাগদাদি এই দলটি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।


বিদ্রোহীদের একাধিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সিরিয়ার সেনাবাহিনীর দারা ইউনিটের সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছায় বিদ্রোহীরা। সমঝোতার শর্ত ছিল, সেনাবাহিনী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কাছে দারা’র নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়, তাহলে সেনা কর্মকর্তা ও সদস্যদের নিরাপদে শহর ছাড়ার সুযোগ দেবে বিদ্রোহীরা।


সেনা সদস্যরা সেই শর্ত মেনে নিয়ে দারা থেকে রাজধানী দামেস্কের পথে রওনা দেন। দামেস্ক থেকে দারা’র দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।


এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য ও প্রতিক্রিয়া জানতে সিরিয়ার সেনাবাহিনীর মুখপাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রয়টার্স, কিন্তু কোনো মুখপাত্র মন্তব্য করতে রাজি হননি।


দারা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর। এটি সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ দারার রাজাধানী। এ প্রদেশটি একদিকে জর্ডানের সীমান্তের সংলগ্ন, অন্যদিকে রাজধানী দামেস্কের নিকটবর্তী। এছাড়া ১৩ বছর আগে সিরিয়ায় যে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল, তার উৎপত্তিস্থলও এই দারা শহর। ফলে প্রায় ১০ লাখ মানুষ অধ্যুষিত দারা’র দারা’র নিয়ন্ত্রণ হারানো আক্ষরিক অর্থেই প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের জন্য বেশ চাপের।


এদিকে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো জানিয়েছে, দারা দখলের পর এবার তারা সিরিয়ার হোমস শহর দখলের জন্য অগ্রসর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। হোমস শহরটিও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সিরিয়ার উপকূলীয় অঞ্চল এবং রাজধানী দামেস্কের মাঝামাঝি অবস্থিত।


২০১১ সালে আল কায়দা, ইসলামিক স্টেটসহ সিরিয়ার বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তাদের এ যুদ্ধের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাশারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা।


গৃহযুদ্ধের এক পর্যায়ে সিরিয়া এবং সীমান্তবর্তী অপর দেশ ইরাকের বিশাল এলাকা জুড়ে নিজেদের রাজ্যও গঠন করে আইএস। সিরিয়ার রাক্কা শহর ছিল সেই রাজ্যের রাজধানী।


বিদ্রোহী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো অবশ্য বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। কারণ সে সময় বাশার আল আসাদকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিল রাশিয়া, ইরান ও লেবাননভিত্তিক সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। মূলত এই তিন মিত্রশক্তির ওপর ভর দিয়েই ২০২১ সালে বিদ্রোহী বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করেন আসাদ।


জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ইউনাইটেড নেশন্স হিউম্যান রাইটসের তথ্য অনুযায়ী, সিরিয়ায় ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে সিরিয়ায় প্রাণ হারিয়েছেন ৩ লাখ ৫ হাজারেরও বেশি সংখ্যক মানুষ।


তবে এবারের পরিস্থিতি খানিকটা ভিন্ন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া এবং ইসরায়েল ইস্যুতে ইরান ও হিজবুল্লাহ ব্যস্ত থাকায় তারা আগের মতো পূর্ণ শক্তি নিয়ে বাশার আল আসাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারছে না।


ফলে সিরিয়ার সরকারবিরোধী বিদ্রোহীদের সামনে ক্ষমতা দখলের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এবং বিদ্রোহীরা সেই সুযোগ গ্রহণও করেছে।


বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া জঙ্গিগোষ্ঠী এইচটিএসের শীর্ষ নেতা আবু মোহাম্মেদ আল গোলানি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম দ্য নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “আমাদের এবারের অভিযানের লক্ষ্য শত্রুকে পুরোপুরি শেষ করা।”


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com