শিরোনাম
বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি!
প্রকাশ : ২১ মার্চ ২০১৭, ১৭:৫১
বেকার হোস্টেল থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

কলকাতার মাওলানা আজাদ কলেজের (তৎকালীন ইসলামিয়া কলেজ) ছাত্রাবাস বেকার হোস্টেলে স্থাপিত জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরানোর দাবি তুলেছে ছাত্রাবাসটির ছাত্রদের একাংশ। শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনে কলকাতার এই বেকার হোস্টেলে থাকতেন।


মঙ্গলবার বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়, শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরানোর দাবি নিয়ে কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসে ছাত্রদের একাংশ যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তারা জানিয়েছেন যে, উপ-দূতাবাসে পৌঁছানোর আগেই পুলিশ তাদের গতিরোধ করে। তাদের দাবি, সনদও জমা নিতে চায়নি বাংলাদেশের উপ-দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।


স্থানীয় থানার ওসি সেটি গ্রহণ করেছেন বলে দাবি করেছেন পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান।


সরকারি ছাত্রাবাস বেকার হোস্টেলের যে ঘরে শেখ মুজিব থাকতেন, সেটিতে একটি সংগ্রহশালা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে। ওই সংগ্রহশালাতেই বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতির ভাস্কর্য স্থাপন করেন বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি।


বর্তমানে বেকার হোস্টেলে বসবাসকারী ছাত্রদের মধ্যে যারা ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার দাবি করছেন, তারা বলছেন গোটা হোস্টেল চত্বরে ইসলামিক পরিমণ্ডল রয়েছে। সেখানে একটি মসজিদও আছে। তার মধ্যে কোনো ব্যক্তির ভাস্কর্য রাখাকে ‘ইসলাম-বিরোধী’ হিসেবে বর্ণনা করছে দাবি উত্থাপনকারী ছাত্ররা।


তবে সেখানে যে সংগ্রহশালা রয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই।


একজন শিক্ষার্থী সাহেব আলি শেখ বলেন, এই হোস্টেলে যারা থাকি, সকলেই মুসলমান। এখানে একটি মসজিদও আছে। ইসলাম ধর্মে মূর্তিপুঁজা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। তাই আমাদের হোস্টেলের পরিবেশে কোনো ব্যক্তির মূর্তি রাখা আমরা মেনে নিতে পারছি না।


বেকার হোস্টেলে থেকে এমএ পড়ছেন নাজমুল আরেফিন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি। আমাদের হোস্টেলেরই প্রাক্তন আবাসিক। তাঁর কোনো অসম্মান হোক, সেটা আমরা চাই না। কিন্তু একই সঙ্গে এটা একটা ধর্মীয় প্রাঙ্গণ। সেখানে কোনো ব্যক্তির মূর্তি থাকা কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। সংগ্রহশালা করা হোক, লাইব্রেরি করা হোক, কিন্তু মূর্তিটা সরানোর দাবি করছি আমরা।


হোস্টেলের আরেক আবাসিক ছাত্র মুহম্মদ গোলাম মাসুদ মোল্লা বলেন, ওই মূর্তিটা সংগ্রহশালার ঘরে লাগানো কাঁচের দরজার বাইরে থেকেই দেখা যায়। সেখানে অনেক ফুলও দেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। একটা ইসলামিক পরিবেশে মূর্তি থাকাটা হারাম। তাই সেটিকে অন্যত্র সরিয়ে দেয়া হোক।


ঋতিক হাসান বেকার হোস্টেলেই থাকেন। যে কলেজে শেখ মুজিবুর রহমান পড়তেন, সেই মাওলানা আজাদ কলেজেই উদ্ভিদ বিজ্ঞানে অনার্স পড়ছেন। হোস্টেল থেকে কলেজে যাওয়ার পথে তিনি বলছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে আমরা সকলেই অত্যন্ত শ্রদ্ধা করি। কিন্তু ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী মূর্তি রাখা অনুচিত। তাই সেটিকে সরিয়ে দেয়া হোক।


ছাত্রাবস্থায় শেখ মুজিবুর রহমান বেকার হোস্টেলের বাসিন্দা হয়ে পড়শোনা করতেন তখনকার ইসলামিয়া কলেজে, যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বর্তমান নাম মাওলানা আজাদ কলেজ। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এই ছাত্রাবাস পরিচালনা করলেও তিনতলার যে ঘরে শেখ মুজিব থাকতেন, সেখানে তৈরি হওয়া সংগ্রহশালাটি তাদের সহযোগিতায় বাংলাদেশ উপ-দূতাবাস দেখাশুনা করে। ঘরের মূল চাবিটিও থাকে উপ-দূতাবাসেই। অন্য চাবিটি থাকে হোস্টেলের সুপারিন্টেনডেন্ট ও মাওলানা আজাদ কলেজের অধ্যাপক দবীর আহমেদের কাছে।


অধ্যাপক দবীর আহমেদের কাছে অবশ্য আবাসিক ছাত্ররা শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে কোনো আবেদন জানান নি।


সম্প্রতি ১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে ওই সংগ্রহশালায় রাখা ভাস্কর্যে ফুলের স্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয় উপ-দূতাবাস সহ নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে।


বেকার হোস্টেলের প্রাক্তন আবাসিক ও বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, সেদিন থেকেই শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সরানোর ব্যাপারে সরব হয় বর্তমান আবাসিকরা।


তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের কোনো সিলেবাসে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর সম্পর্কে পড়ানো হয় না। তাই সাধারণ ছাত্রদের পক্ষে এটা জানা সম্ভব নয় বঙ্গবন্ধুর জীবন, বাংলা ভাষা, বাঙালি জাতির জন্য তার লড়াই সংগ্রাম কী ছিল। সেজন্যই সংগ্রহশালা হচ্ছে না মূর্তি বসানো হচ্ছে, তা নিয়ে এতদিন ওই হোস্টেলের আবাসিকদের আগ্রহ ছিল না। কিন্তু ১৭ মার্চের অনুষ্ঠানের পরে ছাত্রদের মধ্যে একটা তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ওই মূর্তি মুসলিম ছাত্রাবাসে রাখা কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কলকাতার যে কোনো জায়গায় সম্মানের সঙ্গে ওই মূর্তি স্থাপন করা হোক।


বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সূত্র বলছে, তাদের কাছেও শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নিয়ে বেকার হোস্টেলের ছাত্রদের এই প্রতিক্রিয়ার খবর পৌঁছেছে। বিষয়টি তারা পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং ভারত সরকারের কাছে জানিয়েছেন। যদিও সংগ্রহশালায় ভাস্কর্য বসানোর এতদিন পরে ছাত্রদের এই হঠাৎ প্রতিক্রিয়ার কারণ সম্পর্কে সন্দীহান তারা।


বিবার্তা/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com