জান্তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি মিয়ানমারের বিদ্রোহী জোট
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ২১:৫১
জান্তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি মিয়ানমারের বিদ্রোহী জোট
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমারের ‍উত্তরাঞ্চলে জান্তাবিরোধী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর সশস্ত্র বিদ্রোহী বাহিনীর জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ দেশটির ক্ষমতাসীন সামরিক জান্তার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হয়েছে। চীনের মধ্যস্থতায় গত কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলার পর উভয়পক্ষের মধ্যে এই সমঝোতা হয়েছে বলে জানা গেছে।


১২ জানুয়ারি, শুক্রবার ‘থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’এর অন্যতম শরিক তা’য়াং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মির (টিএনএলএ) এক নেতা বিষয়টি রয়টার্সকে জানিয়েছেন।


তিনি জানান, জান্তার সঙ্গে তাদের আলোচনায় প্রতিবেশী চীনের এক দূত মধ্যস্থতা করেছেন।


২০২১ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে অং সান সু চীর নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী। তারপর থেকে দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন অংশে ব্যাপক হুমকি ও সংকটের মোকাবেলা করছে শাসক জান্তা।


গত অক্টোবর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকা দখল করা শুরু করেছে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর বিভিন্ন জোট। দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে সংঘাত চলছে বিদ্রোহী জোটগুলোর এবং সবচেয়ে বেশি সংঘর্ষ হচ্ছে মিয়ানমার চীন সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায়।


জান্তাবিরোদী এই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে রাজনৈতিকভাবে আশ্রয় ও মদত দিচ্ছে মিয়ানমারের জান্তাবিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জোট ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট (নাগ)। তবে বর্তমানে চীন সীমান্ত এলাকায় অস্থিরতা শুরু হওয়ায় চীনের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্ত বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশপাশি চীনে বার্মিজ শরণার্থীদের ঢেউ আসার পরিস্থিতিও দেখা দিয়েছে।


প্রায় তিন বছর আগে ক্ষমতা দখলের পর থেকে সামরিক বাহিনীর জন্য ‘থি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স’ এর সম্মিলিত হামলা যুদ্ধক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেয়। দু’পক্ষের এ লড়াইয়ে সীমান্ত বাণিজ্যে ব্যাঘাত ঘটায় ও শরণার্থীর ঢল শুরু হতে পারে সম্ভাবনায় উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে চীন।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই টিএনএলএ নেতা জানান, চীনের দূত দেং শি জিনের উদ্যোগে হওয়া আলোচনায় ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স ‘যুদ্ধবিরতিতে’ রাজি হয়। তারা আর অগ্রসর হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়।


তিনি বলেন, জোটের দিক থেকে, শত্রুপক্ষের শিবির অথবা শহরগুলোতে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে সম্মতি জানানো হয়েছে। আর সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে বিমান হামলা, বোমাবর্ষণ ও কামান, মর্টার থেকে গোলাবর্ষণ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।


শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং জানান, গত বুধবার চীনের দক্ষিণাঞ্চলী প্রদেশ ইউনানের রাজধানী কুনমিংয়ে বৈঠক হয়েছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স এবং জান্তা প্রতিনিধিদের মধ্যে। দীর্ঘ সেই বৈঠকের পর চুক্তি স্বাক্ষরে সম্মত হন দুই পক্ষের প্রতিনিধিরা।


ব্রিফিংয়ে মাও নিং বলেন, উভয়পক্ষের প্রতিনিধিরা একমত হয়েছেন যে মিয়ানমার-চীন সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি তারা করবেন না। চীন আশা করছে, মিয়ানমারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এই চুক্তিকে শিগগিরই বাস্তবায়নের পথে নিয়ে যাবে এবং সবাই সর্বোচ্চ সংযম প্রদর্শন করবে।


গতমাসে অবশ্য বেইজিং বলেছিল, যে জান্তা এবং নাগ শান্তি সংলাপে যে চায় এবং তারা উভয়ই মিয়ানমারে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে।


তবে এখন পর্যন্ত দেশটিতে শান্তি সংলাপ কিংবা স্থায়ী-অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি।


রয়টার্স জানিয়েছে, বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমারের জান্তার মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। আর ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অপর দুই গোষ্ঠী মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) এবং আরাকান আর্মি (এএ) যুদ্ধবিরতি সমঝোতার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com