
গত বছরের ৭ অক্টোবর সীমান্ত ভেঙে ইসরায়েলে হামলা করে হামাস। তার প্রতিশোধ নিতে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দখলদার ইসরায়েল বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে ৯০ দিনে ২২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ সময় ৫৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত এবং কয়েক হাজার মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।
সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধ শেষ হলে ভবিষ্যতে কীভাবে গাজা শাসন করা হবে, তার একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট।
তিনি জানিয়েছেন, ওই এলাকায় ফিলিস্তিনি শাসন থাকবে সীমিত। হামাস আর গাজার নিয়ন্ত্রণে থাকবে না এবং ইসরায়েল সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তিনি এমন এক সময় এই পরিকল্পনা প্রকাশ করলেন, যখন গাজায় যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
এ সপ্তাহে ফের এই এলাকায় সফরে আসার কথা রয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের। তিনি দখলকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা ও ইসরায়েলি নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার (০২ জানুয়ারি) লেবাননের রাজধানী বৈরুতে হামাসের শীর্ষ নেতা সালেহ আল-আরুরির হত্যাকাণ্ডের পর উত্তেজনা যখন চরমে, তখন এই সফরের এই খবর এলো। তার এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করা হলেও ইসরায়েল এই অভিযোগ স্বীকার বা অস্বীকার কোনটিই করেনি।
গ্যালান্টের বর্তমান ‘চতুর্মুখী’ পরিকল্পনার আওতায় গাজার সার্বিক নিরাপত্তার নিয়ন্ত্রণ ইসরায়েলের হাতে থাকবে। বহুজাতিক একটি বাহিনী ওই এলাকার পুনর্গঠনে কাজ করবে। কারণ ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। পরিকল্পনার আওতায় প্রতিবেশী দেশ মিশরের একটি ভূমিকা থাকবে তবে তা কী হবে, তা এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
তবে নথিতে বলা হয়েছে, পুরো এলাকা পরিচালনার দায়িত্ব ফিলিস্তিনিদেরও দেয়া হতে পারে। গ্যালান্ট বলেন, ‘গাজার বাসিন্দারা ফিলিস্তিনি, তাই ফিলিস্তিনি একটি কাঠামো নেতৃত্বের দায়িত্বে তারা থাকবে। কিন্তু এখানে শর্ত থাকবে, ইসরায়েল রাষ্ট্রের প্রতি কোন শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড বা হুমকি আসবে না।
তবে গাজার ‘ভবিষ্যত’ নিয়ে এই আলোচনায় নিয়ে ইসরায়েলের মধ্যেও গভীর মতভেদ দেখা দিয়েছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকারের বেশ কিছু কট্টর ডানপন্থী সদস্য বলেছে, ফিলিস্তিনের নাগরিকদের গাজা ছেড়ে নির্বাসনে চলে যেতে বলা উচিত। আর ওই এলাকায় ইহুদী বসতি আবার গড়ে তোলা উচিত।
বিতর্কিত এই প্রস্তাবকে “চরমপন্থি” এবং “অকার্যকর” বলে উল্লেখ করে তা বাতিল করে দিয়েছে ওই এলাকার অন্য দেশগুলো যাদের মধ্যে ইসরায়েলের মিত্রদেশও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও এক বিবৃতে ওই প্রস্তাবের কঠোর সমালোচনা করেছে।
এদিকে গ্যালান্টের প্রস্তাব মন্ত্রীসভায় তার অন্য সহকর্মীদের আনা প্রস্তাবের তুলনায় বেশি বাস্তবসম্পন্ন বলে মনে করা হলেও, হয়তো এই প্রস্তাব মেনে নিবেন না ফিলিস্তিনি নেতারা। তারা বলছেন, এই বিধ্বংসী যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ওই এলাকা পরিচালনার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ গাজাবাসীর থাকা উচিত।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবশ্য গাজা কিভাবে শাসন করা হবে, তা নিয়ে জনসমক্ষে এখনো কোন ধরনের মন্তব্য করেননি। তিনি বলেছেন, হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার নিয়ে শুরু হওয়া গাজার এই যুদ্ধ এখনো কয়েক মাস ধরে চলতে পারে।
গ্যালান্টের পরিকল্পনায় আরও বলা হয়েছে যে, গাজায় পরবর্তী ধাপের যুদ্ধে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, সেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তার কথায়, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে আরো সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে এগিয়ে যাবে। সেখানে অভিযান চালানোর পাশাপাশি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করে বিমান ও স্থল হামলা চালানো হবে।
দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী হামাসের নেতাদের খোঁজ পেতে এবং জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টাও অব্যাহত রাখবে। বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) আইডিএফ বলেছে, গাজার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের গাজা শহর ও খান ইউনিস শহরে তারা হামলা চালিয়েছে।
তাদের কথায়, তারা ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামোগুলোতে’ হামলা চালিয়েছে এবং কথিত জঙ্গিদের হত্যা করেছে। তাদের দাবি, ওই ব্যক্তিরা সেনাদের পাশেই বিস্ফোরক ঘটানোর চেষ্টা করছিলো। এ সময় বিমান হামলার মাধ্যমে প্যালেস্টেনিয়ান ইসলামিক জিহাদের একজন সদস্য মামদুহ লোলোকে হত্যা করা হয়েছে।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]