শিরোনাম
নতুন জীবনের সন্ধানে ‘আফগান গার্ল’
প্রকাশ : ১৮ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:৪৪
নতুন জীবনের সন্ধানে ‘আফগান গার্ল’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পাকিস্তান থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর নতুন জায়গায় নতুন করে জীবন শুরুর স্বপ্ন দেখছেন সবুজ চোখের অধিকারিণী ‘আফগান গার্ল’ শরবত গুলা। পাঁচ বছর বয়সী ছেলে এবং তিন মেয়েকে নিয়ে তিনি এখন আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে বাস করেন। বহু বছর ধরে কষ্ট করার পর তিনি এখন চাইছেন একটি সুন্দর, স্বাভাবিক জীবন।  

 

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানান কম বয়সে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকের প্রচ্ছদ কন্যা হয়ে খ্যাতি পাওয়া শরবত গুলা।

 

১০ বছর বয়সে তারই একটি ছবি যুদ্ধপীড়িত আফগান শরণার্থীদের আইকন হয়ে দাঁড়ায়। এর আগে একবারই গণমাধ্যমে কথা বলেছিলেন তিনি। স্টিভ ম্যাককারি, যিনি তার ১০ বছর বয়সের ছবিটি তুলেছিলেন, তিনিই তাকে খুঁজে বের করেন এবং ২০০২ সালে একটি প্রামাণ্যচিত্রে তার সাক্ষাৎকার নেন।  

 

১৭ বছর ধরে যে বিশ্বজুড়ে শরবত গুলার ছবি কতটা বিখ্যাত ছিল সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। অনেক আফগান যুদ্ধপীড়িতের মতো শরবত গুলাও পাকিস্তানে আশ্রয় নেন এবং ৩৫ বছর ধরে বসবাস করেন। কিন্তু গত বছর পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ তাকে জেলে পাঠায়, কারণ তার কাগজপত্র অবৈধ ছিল। পরে তাকে মুক্তি দিয়ে আফগানিস্তানে পাঠিয়ে দেয় পাকিস্তান।

 

কাবুলের এক সাময়িক বাসস্থানে বসে শরবত গুলা বিবিসিকে বলেন, ‘সেখানে ভালো সময় কেটেছে আমাদের, ভালো প্রতিবেশী ছিল, পশতু ভাইদের সাথেই বাস করতাম আমরা। আমি কখনো আশা করিনি আমার সাথে এই আচরণ করবে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ।’

 

পাকিস্তানে পুলিশের হাতে ধরা পড়বার আগেই তিনি আশঙ্কা করছিলেন তিনি হয়তো সে দেশে আর থাকতে পারবেন না।এজন্য বাড়িটি বেচে দেন তিনি। দেশ ছাড়ার ঠিক দুদিন আগে তার বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়।

 

তিনি বলেন, ‘আমি পুলিশকে বলেছিলাম এই আইডি কার্ডটি আমি বানিয়েছি বাচ্চাদের লেখাপড়া করাতে আর আমার বাড়িটি বিক্রি করার জন্য। আইডি ছাড়া এর কোনোটিই সম্ভব নয় পাকিস্তানে।’

 

তারপরও তাকে দুই সপ্তাহের কারাদণ্ড ভোগ করতে হয়। এর এক সপ্তাহ তিনি ছিলেন কারাগারে। আরেক সপ্তাহ ছিলেন কারা হাসপাতালে। তার হেপাটাইটিস সি হয়েছিল। বিবিসিকে শরবত গুলা বলেন, ‘এটা ছিল আমার জীবনের কঠিন এবং দুঃসহ এক ঘটনা।’

 

আটক করার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার মুখে শরবত গুলাকে পরে পাকিস্তানেই থেকে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তাদের বলেছি, তোমরা আমাকে ৩৫ বছর থাকতে দিলে, কিন্তু দিন শেষে এমন আচরণ করলে। যথেষ্ট হয়েছে।’  

 

শরবত গুলার স্বামী ও বড় মেয়ে মারা গেছে, তাদের কবর পেশোয়ারে। পাকিস্তানের সরকার দেশটিতে বসবাস করা ২০ লাখ আফগানকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।

 

‘আফগান গার্ল’ শিরোনামের ছবিটি তোলা হয় ১৯৮৪ সালে, স্টিভ ম্যাককারি পেশোয়ারের এক শরণার্থী শিবিরের কাছ থেকে ১০ বছরের শরবত গুলার ছবিটি তোলেন। তিনি সেসময় তাঁবুতে পরিচালিত শরণার্থীদের এক স্কুলে পড়তেন।

 

মধ্য চল্লিশের শরবত গুলা এখন অসুস্থ ও দুর্বল। কিন্তু তার সবুজ চোখ এখনো তীক্ষ্ন। সেই চোখে রয়েছে একই সঙ্গে ভয় এবং আশা। শরবত গুলার কোনো ছেলেমেয়ের চোখের রঙই মায়ের মতো নয়। তবে তার নানীর চোখ ঠিক একই রকম ছিল বলে তিনি জানান। সূত্র: বিবিসি

 

বিবার্তা/নিশি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com