শিরোনাম
জিন্স প্যান্ট পরায় কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যা
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২১, ১৩:৩২
জিন্স প্যান্ট পরায় কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যা
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি গ্রামে জিন্সের প্যান্ট পরার দায়ে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর তার মৃতদেহ একটি সেতুতে রশি দিয়ে ঝুঁলিয়ে দেয়া হয়, যাতে মানুষ দেখে মনে করে মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এদিকে এঘটনার পর মামলা করেছেন কিশোরীর মা শকুন্তলা দেবী। ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।


ঘটনার শিকার কিশোরীর নাম নেহা পাসোয়ান। তার মা বলেছেন, জিন্সের প্যান্ট পরার কারণে বাড়িতে দাদা ও চাচাদের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় নেহার। তিনি জানান, ঘটনার দিন সারাদিন উপোস ছিলো নেহা। সন্ধ্যায় সে একটি জিন্সের প্যান্ট আর উপরে একটি টপ পরে। এভাবেই সে তার ধর্মীয় রীতি পালন করছিল। কিন্তু তার পোশাক নিয়ে আপত্তি তোলেন তার দাদা-দাদি। নেহা তাদের জানায়, এই জিন্স তো বানানো হয়েছে পরার জন্য। সে এটা পরবেই। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি তুমুল পর্যায়ে যায়। এ থেকে সহিংস আচরণ করে তার চাচারা ও দাদা। তারা তাকে বেদম প্রহার করতে থাকে। এতে নেহা অচেতন হয়ে পড়লে সংশ্লিষ্টরা একটি অটোরিক্সা ডাকে। জানায়, তারা নেহাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছে।


শকুন্তলা দেবী বলেন, তারা আমাকে সঙ্গে নেয়নি। আমি এ বিষয়টি আত্মীয়স্বজনদের জানাই। তাদেরকে বলি হাসপাতালে খোঁজ নিতে। কিন্তু কোন হাসপাতালে নেহাকে খুঁজে পাওয়া যায় না। শকুন্তলা দেবী বলেন, পরের দিন সকালে তিনি শুনতে পান গন্ধক নদীর ওপরে একটি সেতু থেকে তার মেয়ের লাশ ঝুলে আছে। এ খবরে আত্মীয়রা সেখানে ছুটে যান। দেখতে পান, সত্যি ওটা নেহার মৃতদেহ।


এ ঘটনায় হত্যা ও প্রমাণ ধ্বংসের অভিযোগে পুলিশ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে। এর মধ্যে আছেন নেহার দাদা-দাদি, চাচা-চাচীরা, চাচাতো ভাইয়েরা ও অটোরিক্সা চালক। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা শ্রীয়াশ ত্রিপাঠি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, নেহার দাদাদাদি, এক চাচা ও অটোরিক্সা চালকসহ চারজনকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


নেহার পিতা অমরনাথ পাসোয়ান। তিনি একজন দিনমজুর। কাজ করেন পাঞ্জাবের লুধিয়ানা শহরে নির্মাণ প্রতিষ্ঠানে। মেয়ের এই খবর শুনে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। বলেছেন, আমি নেহাসহ সব সন্তানকে স্কুলে পাঠানোর জন্য কঠিন পরিশ্রম করি। নেহার মা বলেন, আমার মেয়ে পুলিশ অফিসার হতে চেয়েছিল। এখন তার সেই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেলো। তিনি আরো অভিযোগ করেন, তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন নেহাকে স্থানীয় স্কুলে পড়া বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। মাঝেমাঝেই তাকে পোশাক নিয়ে তিরস্কার করতো। নেহা আধুনিক পোশাক পরা পছন্দ করতো।


তার পরিবার দুটি ছবি শেয়ার করেছে। তার একটিতে তাকে দেখা যায় একটি লম্বা পোশাক পরা। অন্যদিকে দেখা যায় একটি জিন্স এবং জ্যাকেট পরা। অধিকার বিষয়ক কর্মীরা বলছেন, নারী বা যুবতীদের বিরুদ্ধে এমন সহিংসতা পরিবারের ভিতরেই হয়ে থাকে। ভারতে মেয়ে শিশু এবং নারীরা মারাত্মক হুমকির মোকাবিলা করেন। তারা জন্ম নেয়ার আগেই পরিবারের ক্ষোভের শিকার হন। মায়ের পেটে থাকতেই তাদের ভ্রুণ নষ্ট করে দেয়ার ঝুঁকি থাকে। কারণ, পরিবারগুলোতে ছেলে শিশুর প্রতি আকাঙ্ক্ষা থাকে।


এসব কারণে গৃহসহিংসতা ব্যাপক। গড়ে যৌতুক দাবিতে প্রতিদিন ২০ নারীকে হত্যা করা হয়। ছোট শহর বা গ্রামে বসবাসকারী নারীরা গ্রাম্য প্রধান অথবা পরিবারের চাপে মারাত্মক বিধিনিষেধের মধ্যে থাকেন। মাঝে মাঝে তাদেরকে বলে দেয়া হয় তারা কি পরতে পারবেন। তারা কোথায় যেতে পারবেন এবং কার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন।


বিবার্তা/অনামিকা/বিআর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com