শিরোনাম
কেন এত বড় ঝুঁকি নিল ট্রাম্প? কী করতে পারে ইরান?
প্রকাশ : ০৩ জানুয়ারি ২০২০, ২১:৩৫
কেন এত বড় ঝুঁকি নিল ট্রাম্প? কী করতে পারে ইরান?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী সেনা কর্মকর্তা কাসেম সোলেইমানিকে হত্যার পরিণতি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ শুরু হয়েছে। তেহরান কঠোরতম প্রতিশোধের হুমকি দিয়েছে।


ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লাহ খামিনি বলেছেন, অপরাধীদের জন্য ভয়াবহ প্রতিশোধ অপেক্ষা করছে।


ইরানের সেনাবাহিনীর (ইসলামিক রেভলুশনারি গার্ডস বা আইআরজিসি) মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল রমজান শরিফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ইসরাইল এবং আমেরিকা তোমরা কড়া জবাবের জন্য অপেক্ষা করো।


দেশের বাইরে ইরান যে তার সামরিক এবং রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে চলেছে তার পেছনে মূল ব্যক্তিটি ছিলেন কাসেম সোলেয়মানি।


লেবানন, সিরিয়া, ইরাক, ইয়েমেনের মত দেশগুলোতে তেহরানপন্থী যে শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীগুলো এখন পরাক্রমশালী হয়ে উঠেছে, তিনিই ছিলেন এর রূপকার। ফলে বহুদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলের এক নম্বর টার্গেট ছিলেন ইরানি এই জেনারেল।


সংবাদদাতারা বলছেন, ইসরাইলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে জর্জ বুশ এবং তারপর বারাক ওবামা পর্যন্ত তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেও পরিণতির কথা ভেবে পরে পিছপা হয়েছিলেন।


এ কারণে সাবেক মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আগামি নির্বাচনে ডেমোক্রাটদের সম্ভাব্য প্রার্থী জো. বাইডেন গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প 'একটা বারুদের বাক্সে ডিনামাইট ছুঁড়ে দিয়েছেন।


তিনি বলেন, আমরা হয়তো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন বড় ধরনের যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে চলে গেলাম।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে কাসেম সোলেইমানি মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার সম্ভবত সবচেয়ে বিপজ্জনক শত্রু হওয়া স্বত্বেও তার পূর্বসূরিরা যে ঝুঁকি নিতে চাননি, ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন কেন তা নিলেন?


পেন্টাগনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক যে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা হলো, কাসেম সোলেইমানি ইরাকে মার্কিন কূটনীতিক এবং সৈন্যদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিলেন, সুতরাং আগে থেকেই তাকে হত্যা করে সেসব পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হলো।


তবে এমন সময় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই হত্যাকাণ্ড ঘটালেন যখন কিছুদিন আগেই তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট অনুমোদন করেছে মার্কিন কংগ্রেস, এবং এক বছরের কম সময়ের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফলে বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা ইতিমধ্যেই এই সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি দেখতে শুরু করেছেন।


যুক্তরাষ্ট্রে ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জুলিয়ান বার্গার লিখেছেন, নভেম্বরে নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সোলেইমানিকে হত্যার এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।


তিনি মনে করছেন, ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার যে ঘটনা বারাক ওবামার দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের প্রচারণায় প্রধান একটি বিষয় হয়ে উঠেছিল, ট্রাম্প হয়তো সেরকমই কিছু করতে চেয়েছেন।


বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক জেরেমি বোয়েন বলছেন, অনেকদিন ধরে অপেক্ষা করে আমেরিকানরা এখন কেন এই 'ট্রিগার' টিপলো, তার কারণ হয়তো প্রেডিসন্ট ট্রাম্প মনে করেছেন এই হত্যাকাণ্ডের যে ঝুঁকির মাত্রা তার চেয়ে সুবিধার পাল্লা ভারি।


তিনি (প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প) হয়তো মনে করেছেন অব্যাহত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় ইরান দুর্বল-একঘরে হয়ে পড়েছে। দেশের ভেতরে যে প্রচণ্ড অসন্তোষ শুরু হয়েছে তাতে ক্রুদ্ধ প্রতিক্রিয়া হলেও, ইরান বড় কোনো হুমকি তৈরি করতে পারবে না।


কি করতে পারে ইরান


'দুর্বল ইরান' তেমন কিছু করতে পারবে না বলে ট্রাম্প হয়তো যে ভরসা করছেন, বাস্তবে তা হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিবিসির জেরেমি বোয়েন।


কূটকৌশল বা পরিকল্পনাকারী হিসেবে সোলেইমানি ছিলেন খুবই ক্ষুরধার। সুতরাং তাকে কখনো হত্যা করা হলে, কি করতে হবে তেমন পরিকল্পনাও হয়তো তিনিই করে গেছেন। ইরান যে তার হত্যার একটা জবাব দেবে, তা নিশ্চিত। সোলেইমানি এতদিন ধরে দেশের বাইরে ইরানের যে প্রভাব প্রতিপত্তি তৈরি করেছেন, তা টিকিয়ে রাখার সর্বাত্তক চেষ্টা করবে ইরান।


ইরান এবং আমেরিকার মধ্যে একটা যুদ্ধ লেগে যেতে পারে, এই শঙ্কা সন্দেহ গত বছর খানেক ধরে চলছিল, কিন্তু সেই সাথে যুদ্ধ এড়ানোর একটা চেষ্টাও তলে তলে চলছিল। ফ্রান্স এই দুই শত্রুর মধ্যে একটা মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছিল।


কিন্তু বিবিসির প্রধান আন্তর্জাতিক সংবাদদাতা লিস ডুসেট মনে করছেন, সোলেইমানি এবং ইরাকি একটি শিয়া মিলিশিয়া গোষ্ঠীর (পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স) প্রধান আবু মাহদি আল মোহানদিসকে হত্যার পর যুদ্ধ এড়ানোর সেই চেষ্টা ধসে পড়বে সন্দেহ নেই। কিন্তু কিভাবে ইরান প্রতিশোধ নেবে- পরিষ্কার করে অনুমান করা শক্ত।


তেহরানে ইরানের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা কাউন্সিলের জরুরী বৈঠক হচ্ছে। সেখান থেকেই হয়তো একটা ছক তৈরি হবে।


লিস ডুসেট মনে করেন, বদলা নেওয়ার নানা রাস্তা এবং উপায় ইরানের রয়েছে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সাবেক একজন সদস্য কার্সটেন ফনটেনরোজকে উদ্ধৃত করে গার্ডিয়ান পত্রিকা লিখছে, ইরানের এই বদলা হয়তো দীর্ঘমেয়াদী এবং নানামুখী হবে।


তিনি বলছেন ইরাকে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়ারা হয়ত তাৎক্ষণিকভাবে কিছু হামলা চালাবে, কিন্তু ইরান হয়তো উপযুক্ত সময় এবং স্থানের জন্য অপেক্ষা করবে।


তিনি বলছেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এমনকি পশ্চিম আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকাতেও মার্কিন স্বার্থ এবং নাগরিকরা হামলার মুখে পড়তে পারে, এবং এই ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। ইরান এমন একটি বার্তা দিতে চাইবে যে আমেরিকানরা কোথাও নিরাপদ নয়। সূত্র: বিবিসি।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com