কিউবার মানুষ যখন ফিদেল কাস্ত্রোর মৃত্যুতে শোকাহত, তখন একটি প্রকল্প দেশটির সমাজতান্ত্রিক ঐতিহ্য ও অজানা ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ - দু'টোই তুলে ধরেছে৷
কিউবার শহরটিকে দেখলে বিগত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকের কথা মনে পড়তে পারে৷ সারি বাঁধা সাদা সাদা কাঠের বাড়ি দু'পাশে সবুজ পাহাড়ে ঢালে উঠে গেছে৷ আধভাঙা রাস্তা দিয়ে চলেছে ঘোড়ায় টানা গাড়ি (টাঙ্গা), ভিনটেজ মার্কিন মোটরকার আর রাশিয়ান লাডা গাড়ি৷
রাজধানী হাভানা থেকে গাড়িতে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ, অথচ যেন সম্পূর্ণ আলাদা একটা জগৎ৷ গাড়ির আওয়াজ, ডিজেলের ধোঁয়া কিংবা গানবাজনার উৎপাত নেই৷
কিন্তু লাস টেরাজাস চিরকাল এরকম পিকচার পোস্টকার্ডের মতো ছিল না৷ ১৯৫৯ সালের কমিউনিস্ট বিপ্লবের সময়ও এটি ছিল একটি হতদরিদ্র এলাকা। চারপাশের গাছপালা কেটে ফেলে কফি বিনের চাষ করা হচ্ছিল৷
বিপ্লবের দশ বছরের মধ্যেই লাস টেরাজাস-এ একটি সামাজিক তথা পরিবেশগত এক্সপেরিমেন্ট শুরু হয়৷ সরকারি আবাসন, হ্রদ ও সাধারণ মানুষের হাত প্রকল্প এলাকাটির চেহারাই বদলে দেয়। হাজার হাজার হেক্টরজুড়ে ৬০ লাখ গাছ লাগানো হয়৷ ন্যাড়া পাহাড়ের ঢালগুলো ইউনেস্কোর পৃষ্ঠপোষকতাধন্য একটি সুরক্ষিত বায়োস্ফিয়ারে পরিণত হয়৷
সবুজের সঙ্গে ফিরে আসে পশুপাখি৷ আজ শকুনরা আকাশে চক্কর দেয়, ফুরুৎ ফুরুৎ করে ওড়ে সবুজ ফ্লাইক্যাচার।সেডার গাছ আর জবাফুলের ঝোপ থেকে শোনা যায় কিউবার জাতীয় পাখি টোকোরোকোর ডাক ৷ এ সবই সম্ভব হয়েছে পরিকল্পনা, যোজনা আর শৃঙ্খলা থেকে৷ এখানে নতুন বাড়ি তৈরি করতে গেলে অথবা বাড়ি বাড়াতে গেলে কেন্দ্রীয় প্ল্যানিং কমিটির কাছে যেতে হয়। এ নিষেধাজ্ঞা এই কারণে, যাতে জঙ্গল না কাটা হয়৷ লাস জঙ্গলের গাছ থেকে আসে ফল ও ওষধি৷ একটা বিশেষ এলাকা থেকে কাঠ কাটা হয়৷ একটি গাছ কাটলে আবার একটি গাছ লাগানো হয়৷
এভাবেই চলে ১৯৯১ সাল অবধি, যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে পড়ে৷ তারপর পর্যটকদের টানার চেষ্টা করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না৷
ততোদিনে ওই এলাকায় শুধু হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা কফিশপ নয়, যুক্ত হয়েছে একটি জিপ লাইন, লেকের জলে বোটিং, শিল্পী ও শিল্পকলা, কিউবার সেরা নিরামিষ খাবার। কিন্তু টুরিস্টরা আসেন প্রধানত ওয়াইল্ডলাইফ, অর্থাৎ জঙ্গলের প্রাণীদের দেখতে। লাস টেরাজাসের জঙ্গলে মোট ১৩১ ধরনের পাখি দেখতে পাওয়া যায়।
এভাবেই লাস টেরাজাসে আধুনিক পর্যটন শিল্প আর কিউবার চিরাচরিত জীবনধারাকে পাশাপাশি দেখতে পাওয়া যাবে৷ কিন্তু ফিদেল আর নেই, ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। লাস টেরাজাসকে এবার কি ধরনের পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে হবে, কে জানে! সূত্র : জার্মান বেতার
বিবার্তা/হুমায়ুন/মনোজ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]