শিরোনাম
পেটাবেন না, গুলি করে মারুন : সেনা নির্যাতনের শিকার কাশ্মীরি
প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০১৯, ১০:৩৭
পেটাবেন না, গুলি করে মারুন : সেনা নির্যাতনের শিকার কাশ্মীরি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের পর কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের অভিযানে বেধড়ক মারধর ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।


শুক্রবার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বিবিসির প্রতিবেদক জানান, কাশ্মীরিদেরকে লাঠি ও তার দিয়ে পেটানো হচ্ছে এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়া হচ্ছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত।


ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলের ছয়টিরও বেশি গ্রামে যান বিবিসির প্রতিবেদক সামির হাশমি। গ্রামগুলো কয়েক বছর ধরে ভারতবিরোধিতার ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। রাতের আঁধারে ভারতীয় সেনাদের অভিযানে গ্রামগুলোতে একইরকমভাবে ব্যাপক মারধর ও জুলুম নির্যাতন চলছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।


চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা ভয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসব আহতদের বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে ওই গ্রামগুলোর বহু বাসিন্দার গায়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে।


এমন একটি গ্রামের লোকজন জানায়, ভারতের পার্লামেন্টে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের সঙ্গে সঙ্গে সেনারা বাড়ি বাড়ি ঢুকতে শুরু করে। সেখানে দুই ভাইকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বাড়ির আঙিনায় নিয়ে ব্যাপক মারধর করা হয়। তারা সেনাদের কাছে তাদের অপরাধ কী জানতে চাইলেও তাতে কর্ণপাত না করে সেনারা তাদেরকে বেদম পেটাতে থাকে।


তবে এমন অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন এবং অবাস্তব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল আমান আনন্দ।


অপর একটি গ্রামে ২০ বছর বয়সী এক কাশ্মীরি যুবক বিবিসিকে জানান, ভারতীয় সেনারা তাকে সশস্ত্র যোদ্ধাদের সম্পর্কে গোপনে তথ্য সংগ্রহের কাজ করতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় ওই যুবককে এমনভাবে পেটানো হয়েছে যে, এখন তিনি পিঠে ভর করে শুয়ে থাকতেও পারছেন না।


ওই যুবক বলেন, ‘এমন চলতে থাকলে ঘরবাড়ি ছেড়ে দেয়া ছাড়া আমার সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। তারা আমাদেরকে এমনভাবে মেরেছে, যেন আমরা পশু। তারা আমাদেরকে মানুষ মনে করে না।’


অন্য একটি গ্রামের একজনকে বন্দুক, তার, লাঠি ও রড দিয়ে পেটায় ১৫-১৬ জন ভারতীয় সেনাসদস্য। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি আধমরা হয়ে পড়েন। নির্যাতিত ওই ব্যক্তি বলেন, ‘ভারতীয় সেনারা আমার দাঁড়ি উপড়ে ফেলে। তখন মনে হচ্ছিল, আমার দাঁতগুলো সব পড়ে যাচ্ছে।’


আরেকটি গ্রামের এক যুবক বলেন, ‘তারা আমার শরীরের সব জায়গায় পিটিয়েছে। আমাদেরকে লাথি মেরেছে, লাঠি ও তার দিয়ে পিটিয়েছে, বিদ্যুতের শক দিয়েছে। পায়ের পেছন দিকে পিটিয়েছে। এমনকি পেটানোর সময় মুখে কাদামাটি পুরে দিয়েছে, যাতে আমরা চিৎকার করতে না পারি।’


তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তাদেরকে বলেছি, আমরা নির্দোষ। আমরা জানতে চেয়েছি, আমাদের সঙ্গে কেন এমন করা হচ্ছে। তারা কিছুই শোনেনি। আমি একপর্যায়ে বলেছি, পেটাবেন না, বরং আমাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলুন। আমি আল্লাহর কাছে মৃত্যু চাইছিলাম, কারণ নির্যাতনটা অসহনীয় মাত্রার ছিল।’


অন্য একটি গ্রামের এক যুবক সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনে যোগ দেয়ার অভিযোগে তার ভাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে গিয়ে সেনারা ওই যুবকের ভাইয়ের পা ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। হাত-পা বেঁধে ঝুলিয়ে দুই ঘণ্টা ধরে তাকে পেটানো হয় বলে জানান ওই ব্যক্তি।


ভারতীয় সেনাবাহিনী বরাবরের মতো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। বিবিসিকে দেয়া তাদের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পেশাদার সংস্থা হিসেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এসব অভিযোগের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে।


বিবৃতিতে জানানো হয়, গত পাঁচ বছরে ভারতীয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের করা এমন ৩৭টি অভিযোগের ২০টিই ছিল ভিত্তিহীন। আর ১৫টির তদন্ত করা হলেও মাত্র তিনটি ঘটনায় অপরাধীকে শাস্তি দেয়া হয়।


৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ধারা বাতিলের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের স্বায়ত্বশাসনের অধিকার কেড়ে নেয়ার পর থেকে তিন সপ্তাহ ধরে অনেকটা অবরুদ্ধ অবস্থায় আছেন কাশ্মীরিরা। বিপুল সংখ্যক বাড়তি সেনা মোতায়েনের ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী থেকে শুরু করে প্রায় তিন হাজারের মতো কাশ্মীরিকে গ্রেফতার করে বন্দি করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হয় মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ইন্টারনেট সেবা।


বিবার্তা/তাওহীদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com