শিরোনাম
সিরিয়া নিয়ে ট্রাম্প-এরদোগানের ফোনালাপ
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০১৯, ১৩:৪৫
সিরিয়া নিয়ে ট্রাম্প-এরদোগানের ফোনালাপ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সিরিয়ার ইদলিব শহরে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার বিষয়ে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যিপ এরদোগান।


বুধবার এ দুই বিশ্বনেতার মধ্যে ফোনালাপ হয় বলে নিশ্চিত করেছে তুর্কি প্রেসিডেন্টের কার্যালয়। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এ খবর জানিয়েছে তুর্কি সংবাদ মাধ্যম ইয়েনি শাফাক।


ইয়েনি শাফাক জানিয়েছে, ফোনালাপে এ দুই বিশ্ব নেতা ইদলিবে বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় এবং নতুন মানবিক সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা অব্যাহত রাখার ব্যাপারে সম্মত হয়েছেন।


বুধবার সিরিয়ার উত্তরপূর্বাঞ্চলে বাশার আল আসাদ বাহিনী ও তাদের মিত্র রাশিয়ার বিমান হামলায় ৭ শিশুসহ ১৬ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।


সম্প্রতি আসাদ বাহিনী ইদলিবে ব্যাপক অভিযান শুরু করার পাশাপাশি তুরস্কের সীমান্তবর্তী জিহাদি নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে সামরিক অভিযান জোরদার করেছে।


এজন্য ‍তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান মঙ্গলবার মস্কো সফরকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বিষয়টি অবগত করে বলেন, তুর্কি সীমান্তে দামেস্কের সামরিক অভিযান জোরদারের ফলে তুর্কি সেনাদের জীবন ঝুঁকির মুখে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।


সিরিয়া সংকট


২০১১ সালে গণতন্ত্রের দাবিতে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। যা আরব বসন্ত নামে পরিচিত। এরই সূত্র ধরে ২০১১ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে দেশটির বিরোধী দলের নেতাকর্মীরা।


রাজধানী দামেস্ক সহ বড় শহরগুলোয় বিরোধী দল ও সাধারণ জনতার বড় অংশ রাস্তায় নেমে আসে। বিক্ষোভকারীদের দমন করতে প্রেসিডেন্ট আসাদ সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়।


সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষে নিহত হতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। দিনে দিনে নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে। হত্যা, নির্যাতনের অভিযোগে আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সিরিয়ার ওপর। ৩ মাসে নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে গেলেও রাস্তা ছাড়েনি বিক্ষোভকারীরা।


এ সময় সেনাবাহিনীর অনেকে বাহিনী ছেড়ে আসাদবিরোধী বিরোধীদল ও সুন্নি সমর্থকদের সাথে এক হয়ে ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ নামে নতুন সামরিক বাহিনী গঠন করে। আল নুসরা, আল কায়েদার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীও যোগ দেয় এ বিরোধী বাহিনীতে। বাড়তে থাকে যুদ্ধের ব্যাপ্তিও।


আসাদের বাহিনী ও বিদ্রোহী বাহিনীর মধ্যে চলতে থাকে তুমুল লড়াই। আসাদকে সহায়তা করতে এগিয়ে আসে রাশিয়া ও ইরান। লেবাননের গেরিলা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহও আসাদের পক্ষে লড়তে এগিয়ে আসে।


আর বিদ্রোহীদের অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সহায়তা দিতে থাকে আমেরিকা, ইসরাইল, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স , সৌদি আরব।


এদিকে যুদ্ধে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে যোগ দেয় আইএস। ইরাকের বিশাল এলাকা দখল করার পর আইএস সিরিয়া দখল করতে অগ্রসর হয়। আইএসের প্রবেশ পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। আইএস চায় আসাদকে সরাতে, এদিকে আমেরিকাও চায় আসাদকে সরাতে। কিন্তু আবার চায় আইএসকে নির্মূল করতে।


যুদ্ধে আইএসের জড়িত হওয়ার ফলেই আমেরিকা আইএস দমনের কথা বলে যুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়ে।


এদিকে আরেকটি পক্ষ হিসেবে ময়দানে নামে কুর্দিরা। এ যুদ্ধের ডামাডোলে কুর্দিরাও তৎপর হয়েছে তাদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমির স্বপ্নে।


আমেরিকা এগিয়ে এসেছে কুর্দিদের সহায়তায়। ফলে ন্যাটোভুক্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও কুর্দিদের বিপক্ষে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে তুরস্ক।


কারণ কুর্দিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র হতে দিতে রাজি নয় তুরস্ক। বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণে সিরিয়া পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে।


সিরিয়া যুদ্ধে পক্ষ বিপক্ষ নির্ধারণে রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও প্রকৃতিক সম্পদ সবকিছুই ভূমিকা রেখেছে। বিভিন্ন পক্ষের বিভিন্ন স্বার্থ সিরিয়া সংকটকে করে তুলেছে জটিল আমেরিকা, ইসরাইল, ইংল্যান্ড, ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি আগ্রাসনের জবাবে বাশার আল আসাদের বাবা তৎকালীন সিরিয় প্রেসিডেন্ট হাফিজ আল আসাদ ৩০ হাজার সিরিয় সৈন্যকে বেকা উপতাকায় মোতায়েন করেন।


এ সময় ইসরাইলের সাথে কয়েকবার সংঘর্ষও বাঁধে সিরিয়ার সঙ্গে ইসরাইলের বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ বাঁধে। তাই ঐতিহাসিকভাবেই সিরিয়া ও ইসরাইলের মধ্যে শত্রুতা রয়েছে।


হাফিজ আল আসাদের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় আসে বাশার আল আসাদ। বাবার মতো সেও ইসরাইলবিরোধী নীতিতে অটল থাকেন। হিজবুল্লাহ ও হামাসকে সহায়তা করে আসাদ সরকার। আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আমেরিকা ও ইসরাইল অন্তত ৩ বার সেনাবাহিনীতে ক্যু করার চেষ্টা করেছে। তবে কোনোবারই চূড়ান্ত সফলতা পায়নি।


ফলে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল এজন্য মাত্র দুটি দেশ হুমকি হয়ে আছে। ইরান ও সিরিয়া। ইরানকে নানা অবরোধ দিয়ে দাবিয়ে রাখায় চেষ্টা অব্যহত আছে।


সিরিয়ায় আসাদকে সরিয়ে নিজেদের পছন্দমত কাউকে বসাতে পারলে সিরিয়া নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। মূলত এ কারণেই স্বাভাবিকভাবেই ইসরাইল, আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলো আসাদবিরোধী বিদ্রোহী বাহিনীকে সহায়তা করছে।


বিবার্তা/আবদাল/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com