নির্বাচনের বিপর্যয়ের পর এখনো পদ ছাড়ার ব্যাপারে অনড় ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। দলীয় নেতাদের একাধিক চেষ্টা সত্ত্বেও নিজের অবস্থান পরিবর্তনে রাজি নন তিনি।
এমতাবস্থায় আগামী একমাস টেলিভিশনের বিতর্কে অংশ নেবে না কংগ্রেস। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির (এআইসিসি) মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, কংগ্রেস সিদ্ধান্ত নিয়েছে এক মাস টেলিভিশনের বিতর্কে কোনো প্রতিনিধি পাঠানো হবে না।
তিনি বলেন, সমস্ত নিউজ চ্যানেল ও তাদের সম্পাদকদের কাছে আমাদের অনুরোধ দয়া করে এই একমাস আপনাদের বিতর্কে কংগ্রেসের জন্য কোনো জায়গা রাখবেন না।
এই সিদ্ধান্ত দেখে অনেকেরই মনে হয়েছে নির্বাচনে যে বিপুল পরাজয় হয়েছে তা দলের অভ্যন্তরীণ পরিকাঠামোর উপর বিরাট আঘাত এনেছে।
ভয়াবহ বিপর্যয় কেন হল তা খুঁজতে দলের অন্দরেই আলোচনা শুরু হয়েছে। এমতাবস্থায় সংবাদমাধ্যমে যাতে কোনো ভুল খবর পৌঁছে না যায় তা নিশ্চিত করতেই আপাতত মুখপাত্রদের বিতর্কে অংশ না নেয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ফল খুবই খারাপ হয়েছে। দেশের ১৭টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তারা খাতাই খুলতে পারেনি। অন্যদিকে মাত্র কয়েক মাস আগে যে মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান ও ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস জিতেছিল সেখানেও তাদের ফল হয়েছে খুবই খারাপ।
বছর দেড়েক আগে গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব লড়াই দিয়েছিল কংগ্রেস। জিততে না পারলেও বিজেপির কাজ খুবই কঠিন করে দিতে পেরেছিল টিম রাহুল। কিন্তু এবার সেই গুজরাটেও ভরাডুবি হয়েছে কংগ্রেসের।
দলের পরাজয়ের পাশাপাশি নিজের দেড় দশকের ‘কর্মভূমি' আমেথীও পরাজিত হয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। এরপর থেকেই পদ ছাড়ার ব্যাপারে অনড় রাহুল। এবার কেরালার একটি কেন্দ্র থেকেও নির্বাচনে লড়েছিলেন তিনি। সেখান থেকে তিনি জেতেন। যদি সেই আসন থেকে না লড়তেন তাহলে লোকসভায় যাওয়াই হত না কংগ্রেস সভাপতির।
এমনই অবস্থায় দলের মধ্যে বহু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। একেবারে শুরু থেকে গান্ধী-নেহেরু পরিবারের প্রতি আনুগত্য দেখানো কংগ্রেস মনে করছে নেতৃত্বের বদল প্রয়োজন। একটা বড় অংশ গান্ধী পরিবারের নেতৃত্ব নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলেছে। বিভিন্ন রাজ্যের নেতাদের বলতে শোনা গিয়েছে নেতৃত্বে বদল করা না গেলে কংগ্রেসের পক্ষে আগামী দিনে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিজেপিকে টক্কর দেয়া কার্যত অসম্ভব।
এমনই জটিল পরিস্থিতিতে বিতর্ক যাতে আর না বাড়ে তার জন্য আগামী একমাস সমস্ত টেলিভিশন বিতর্ক থেকে নিজেদের সরিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিল দেশের সবচেয়ে পুরনো রাজনৈতিক দল।
ভোটের ফল প্রকাশের পর দিন ঠিক একই কাজ করেছিলেন অখিলেশ যাদব। উত্তরপ্রদেশের এই সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী পার্টির প্রধান বলেন, তার দলের নেতারাও এখন কোনো টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নেবেন না। এবারের নির্বাচন অখিলেশকেও যথেষ্ট ধাক্কা দিয়েছে।
বিজেপিকে রুখতে দেশের সবচেয়ে বড় রাজ্যে জোট করেছিল সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টি। প্রথম থেকেই ‘বুয়া' মায়াবতীর সঙ্গে জোট করার ব্যাপারে আন্তরিকতা দেখিয়েছিলেন অখিলেশ। কিন্তু শেষমেশ জোট করেও বিজেপিকে রোখা যায়নি।
এরপর দলের ভেতরে যাতে নতুন করে সমস্যা না বাড়ে সে কারণে সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিধি পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন তিনি। এবার একই পথে হাঁটল কংগ্রেস। সূত্র: এনডিটিভি
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]