শিরোনাম
নয়া শর্তে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলই
প্রকাশ : ২৮ মে ২০১৯, ১০:৪৯
নয়া শর্তে কংগ্রেস সভাপতি রাহুলই
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধী কি পদত্যাগ করবেন? রাজনৈতিক মহলের কাছে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন এখন এটাই। শনিবার কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে ইস্তফার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। সর্বসম্মতিতে সেই প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়।


এরপর কয়েকটি দিন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু এখনো নিজের অবস্থানে কংগ্রেস সভাপতি অনড় রয়েছেন।


কংগ্রেসের দু নেতা আহমেদ প্যাটেল এবং কে কে বেনুগোপালের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করেন রাহুল। সেখানে তিনি বলেছেন, আমার বিকল্প খুঁজে বের করুন।


সোমবার রাতের দিকে দলীয় সূত্রে জানা যায়, রাহুল সম্ভবত কিছু শর্ত দিতে চলেছেন। দলের সভাপতির দায়িত্ব সামলাতে হলে সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ এবং দলীয় কার্যশৈলী বদল করার ক্ষমতা তার হাতে থাকতে হবে। এই শর্ত মানলে তিনি হয়তো কাজ চালিয়ে যাবেন।


আহমেদ পটেল রাতে বলেন, নো চেঞ্জ, অল ইজ ওয়েল।


তাছাড়া সোমবার দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহরুর মৃত্যু দিবসে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েও টুইটারে একথাই লিখেছেন রাহুল।


তার এই টুইট ঘিরে নতুন করে জল্পনা শুরু হয়েছে। তিনি লিখেছেন, ভারতের মতো একটি তরুণ গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে স্বৈরাচারী ব্যবস্থা যত তাড়াতাড়ি মুক্ত হয় ততই ভাল। নেহরুজির মৃত্যু দিবসে আমাদের তার কথা মনে করা উচিত। তিনি যেভাবে স্বাধীন ভারতের বিভিন্ন সংস্থাকে তৈরি করেছিলেন সেগুলো আমাদের দেশে গণতন্ত্রকে এই ৭০ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে সাহায্য করেছে।


নিজের টুইটারের বায়ো অবশ্য এখনো পরিবর্তন করেননি রাহুল। সেখানে লেখা রয়েছে, ‘সভাপতি, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস’। এর আগে শনিবারই পদ ছেড়ে দেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি। কিন্তু কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটি সর্বসম্মতিতে তা খারিজ করে দেয়। এরপর দুদিন ধরে কংগ্রেসের বিভিন্ন নেতা তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন পদ ছেড়ে দেয়ার কোনো মানে হয় না। তিনি যে পদে আছেন সেখান থেকেই তার কাজ করে যাওয়া উচিত। কিন্তু তাতেও রাহুলের নিজের চিন্তা ভাবনার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি বলেই তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে।


রাহুলের ইস্তফার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন মা সোনিয়া ও বোন প্রিয়াঙ্কাও। প্রাথমিকভাবে দলের অন্য নেতাদের মতো তারাও বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ নিজেদের মত পরিবর্তন করেছেন সোনিয়া এবং প্রিয়াঙ্কা। শেষমেশ রাহুল কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।


কংগ্রেসের সূত্রই বলছে, রাহুল এতই ক্ষুব্ধ যে তিনি সব বৈঠক বাতিল করে দিয়েছেন। আহমেদ পটেল ও বেণুগোপাল ছাড়া কারও সঙ্গে দেখা করেননি। অশোক গহলৌত দেখা করতে চাইলেও তাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। পরে আহমেদ পটেল প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে কথা বলেন। রাহুলের সঙ্গেও কথা হয় প্রিয়াঙ্কার।


রাহুলের কড়া অবস্থানে দলের অন্য নেতাদের উপরে চাপ বাড়ছে। রাহুল এত দিন রাজ্যে-রাজ্যে বড় নেতাদের উপর ভরসা রেখে এগিয়েছেন। তাদের দাবি মেনে নিয়েছেন। সোনিয়াও প্রবীণদের রাখতে চেয়েছিলেন। অথচ তাদের ব্যর্থতার কারণেই কংগ্রেসের আজ এই হাল।


ওয়ার্কিং কমিটি রাহুলকেই দলের খোলনলচে বদলানোর দায়িত্ব দিয়েছে। সেটা তখনই সম্ভব হবে, যখন তাবড় নেতারা পদ ছেড়ে দেবেন। তখনই মাটির সঙ্গে যোগ থাকা নেতাদের সামনে এনে দল ঢেলে সাজানো যাবে। তাই সূত্রের খবর, কৌশলগতভাবেই নিজের ইস্তফায় অনড় থেকে বাকিদের উপরে চাপ বাড়াচ্ছেন রাহুল।


কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকের পর দলের জাতীয় মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সাংবাদিকদদের বলেন, সভাপতি ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তা সর্বসম্মতিতে খারিজ হয়েছে। দলের নেতারা চান নিজের পদে থেকেই কাজ করে যান রাহুল।


ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম। তিনি বলেন, রাহুল যদি এমন কিছু করেন তাহলে দক্ষিণ ভারতের এমপিরা চূড়ান্ত কিছু করে ফেলতে পারেন। এ কথা বলার সময় তাঁর গলা ধরে এসেছিল, তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন।


শুধু তাই নয় বৈঠকে রাহুল যখন নিজের পদত্যাগ নিয়ে অনড় তখন কেউ কেউ বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কথা বলেছিলেন। কিন্তু রাহুল বলেন, কংগ্রেসের সভাপতি যে গান্ধী পরিবার থেকেই হতে হবে এমন কোনো মানে নেই।


বৈঠকে আরেকটি বিষয় সরব হন রাহুল। সেটি হল দলের কিছু নেতার আচরণ। তিনি বলেন, নিজেদের ছেলেদের প্রার্থী করতে বা দলীয় সুবিধা পাইয়ে দিতে কিছু নেতা তৎপর ছিলেন। তাদের পরাজয়ের ফলে দলের ক্ষতি হয়েছে বলেও তিনি মনে করেন।


কারও অবশ্য নাম করেননি রাহুল। তবে এই ভোটে রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের ছেলে বৈভব গেহলত, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশোবন্ত সিংয়ের পুত্র মানবেন্দ্র সিং, মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন নেতা প্রয়াত মাধব রাও সিন্ধিয়ার পুত্র জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ মহোন দেবের মেয়ে সুস্মিতা দেব নির্বাচনে হেরেছেন।


এর আগে ফলাফল প্রকাশের দিনই হারের দায় নিয়েছিলেন রাহুল। তিনি বলেন, এই হারের জন্য আমি একশো শতাংশ দায়ী। এবার দেশে শোচনীয়' ফল করেছে কংগ্রেস। ২০১৪ সালের পরে ২০১৯ সালেও বিপুল জয় পেয়েছে বিজেপি। দেশের ১৭ টি রাজ্যে খাতাই তুলতে পারেনি কংগ্রেস। পাশাপাশি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলয়ে ফল অত্যন্ত খারাপ হয়েছে কংগ্রেসের। কয়েক মাস আগে মধ্যপ্রদেশ রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় বিধানসভা নির্বাচনে জিতে আসে কংগ্রেস। সেখানেও তাদের ফল খারাপ হয়েছে এই নির্বাচনে।


এদিকে দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসে নেহরু ও গান্ধী পরিবারের প্রভাব যথেষ্ট বেশি। এমতাবস্থায় রাহুল ইস্তফা দিতে চান কিন্তু তা খারিজ হয়ে যায়। তবে পরপর দুবার ফলাফল এত খারাপ হওয়ায় কংগ্রেসের অন্দরে গান্ধী-নেহরু পরিবারের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। সূত্র: এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com