শিরোনাম
ভারতের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০১৯, ০৯:৪১
ভারতের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্টের এক সাবেক কর্মী। এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এর পিছনে ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্র’ আছে।


বিষয়টি নিয়ে শুনানির জন্য গঠন করা হয়েছে বিশেষ বেঞ্চ। শনিবার সকালে ভারতের চারটি নিউজ পোর্টালে এই বিষয়ে খবর প্রকাশিত হয়।


পোর্টালগুলো জানিয়েছে, ১৯ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের ২২ বিচারপতিকে হলফনামা দিয়ে নিজের অভিযোগ জানিয়েছেন ৩৫ বছর বয়সী ওই তরুণী। তরুণী জুনিয়র কোর্ট অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে প্রধান বিচারপতির বাড়ির অফিসে কাজ করার দায়িত্ব দেয়া হয় তাকে।


তরুণীর অভিযোগ, ২০১৮ সালের ১০-১১ অক্টোবর তাকে যৌন হেনস্থা করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি প্রতিবাদ করায় প্রথমে তাকে প্রধান বিচারপতির বাড়ির অফিস থেকে সরানো হয়। পরে ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর চাকরি থেকেই বরখাস্ত করা হয়।


তরুণীর আরো অভিযোগ, হেনস্থা এতেও থামেনি। তার স্বামী ও স্বামীর এক আত্মীয় দিল্লি পুলিশের হে়ড কনস্টেবল। পুরনো এক মামলার ভিত্তিতে তাদের সাসপেন্ড করা হয়। ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি এক পুলিশ অফিসার তাকে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে প্রধান বিচারপতির স্ত্রী ক্ষমা চেয়ে তার পায়ে নাক ঘষতে বলেন।


তরুণীর দাবি, তিনি সে কথা মেনে নেন। এর পরেও তার স্বামীর এক প্রতিবন্ধী আত্মীয়কে সুপ্রিম কোর্টের চাকরি থেকে সরানো হয়। কোনো কারণ দেখানো হয়নি।


তরুণীর অভিযোগ, ২০১৯ সালের ৯ মার্চ তিনি ও তার স্বামী রাজস্থানে নিজেদের গ্রামে গিয়েছিলেন। এক প্রতারণার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে দিল্লি নিয়ে আসতে। সেখানে হাজির হয় দিল্লি পুলিশ। পরের দিন তিলক মার্গ থানায় তিনি, তার স্বামী, তার স্বামীর আত্মীয়, তার স্ত্রী ও অন্য এক আত্মীয়কে আটকে মারধর ও গালিগালাজ করা হয়।


হেনস্থার মাত্রা চরমে ওঠার পরেই তারা ‘সত্য প্রকাশ’-এর সিদ্ধান্ত নেন বলে জানিয়েছেন ওই তরুণী।


বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পরেই সেটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধান বিচারপতিকে জানান সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। শনিবার সকাল সোয়া ১০টা নাগাদ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রি জানায়, প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার বেঞ্চে একটি গুরুত্বপূর্ণ শুনানি হবে।


৩০ মিনিটের ওই শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সম্মানই একজন বিচারপতির একমাত্র প্রাপ্তি। ভিত্তিহীন যৌন হেনস্থার অভিযোগের ফলে যদি সেই সম্মানে আঘাত লাগে, তা হলে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বিচারপতি হতে চাইবেন না।


তিনি বলেন, আমার নিজের ব্যাঙ্ক ব্যালান্স এখন ৬ লাখ ৮০ হাজার রুপি। আমার বিরুদ্ধে কেউ আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলতে পারবে না। তাই একটা কোনো বিষয় নিয়ে অভিযোগ করতে হবে। অভিযোগকারিণীর বিরুদ্ধে দু’টি এফআইআর ছিল। এফআইআর থাকা সত্ত্বেও কী ভাবে তিনি সুপ্রিম কোর্টে চাকরি পেলেন? কর্মরত থাকার সময়ে তার বিরুদ্ধে তৃতীয় এফআইআর হয়। সেই মামলায় তার জামিন খারিজ করতে দিল্লির আদালতে আবেদন করেছে দিল্লি পুলিশ।


প্রধান বিচারপতির মতে, এর পিছনে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র আছে। বিচারবিভাগের উচ্চতম আসন থেকে বলা প্রয়োজন, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা বিপন্ন। বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল থেকে যে সব ইমেল আমাকে পাঠানো হয়েছে, সেগুলো একই পথে এসেছে। আগামী সপ্তাহে আমার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে অনেক রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর মামলার শুনানি হওয়ার কথা।


অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, আগে এই ধরনের দু’টি মামলায় সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু প্রধান বিচারপতির এ দিনের বক্তব্য সর্বত্র প্রকাশিত হওয়া প্রয়োজন। এমন ঘটনায় অভিযুক্ত ও অভিযোগকারিণীর নাম না প্রকাশের আইন রয়েছে‌। কিন্তু সব নিউজ পোর্টাল নাম প্রকাশ করেছে।


সলিসিটর জেনারেল বলেন, মনে হচ্ছে এটা ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা। এই অসৎ মহিলার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রয়োজন।


প্রধান বিচারপতি জানান, তিনি এই বিষয়ে কোনো নির্দেশ জারি করবেন না। সেই দায়িত্ব বিচারপতি মিশ্র ও বিচারপতি খান্নার। আর সংবাদমাধ্যম কতটা সংযত হবে তা সংবাদমাধ্যমই স্থির করুক। প্রয়োজনে আমরা এই বিষয়ে নির্দেশ দেব। সংবাদমাধ্যমকে পাঠানো একটি ইমেলে প্রধান বিচারপতির তরফে সব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।


বিচারপতি খান্না বলেন, সঠিক নিয়ম মেনেই ওই কর্মীকে সরানো হয়েছিল। এখন হঠাৎ জেগে ওঠে তারা এ সব অভিযোগ করছেন। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com