শিরোনাম
আসামে বন্‌ধ সর্বাত্মক
অমুসলিমদের নাগরিক করতে ভারতে নাগরিকত্ব বিল পাশ
প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১০:১১
অমুসলিমদের নাগরিক করতে ভারতে নাগরিকত্ব বিল পাশ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বিরোধীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও মঙ্গলবার ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাশ হয়ে গেল নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল। পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বুধবার বিলটি পেশ করা হবে।


বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হলে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে যেসব হিন্দু ২০১৪ সাল পর্যন্ত মূলত আসাম ও উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে চলে এসেছেন, তারা ভারতের নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকারী হবেন।


এদিকে এই বিলকে ঘিরে আসামসহ উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে মঙ্গলবার বন্‌ধ, বিক্ষোভ হয়। তবে এই বিলকে ঘিরে দ্বিধাবিভক্ত আসামও। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বন্‌ধ সর্বাত্মক হলেও সে পথে কার্যত হাঁটেনি বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকা।


ত্রিপুরায় বিল বিরোধীরা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে পুলিশ ও দোকানপাটে পেট্রোল বোমা, অ্যাসিড ছোড়ে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। গুলিতে চার বন্‌ধ সমর্থক আহত হয়।


সোমবারই এই ইস্যুতে আসাম সরকারে বিজেপির জোটসঙ্গী অসম গণ পরিষদ (অগপ) জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেছে।


নাগরিকত্ব বিল নিয়ে সোমবার জেপিসি তাদের চূড়ান্ত রিপোর্ট লোকসভায় পেশ করে। তার ভিত্তিতে ‘সিটিজেনশিপ (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৯’ এ দিন লোকসভায় পেশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে অত্যাচারিত হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, পার্সিদের যাওয়ার জায়গা বলতে ভারত। সেই কারণেই এই সংশোধনী আনা হচ্ছে।


‘ধর্মের ভিত্তিতে নাগরিকত্ব’ ভারতীয় সংবিধানের মূল কাঠামোর পরিপন্থী- বিরোধীদের এই অভিযোগ উড়িয়ে নেহরু থেকে মনমোহনের বহু মন্তব্য, দেশভাগের ইতিহাসকে টেনে আনেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। তার বক্তব্য, ওই তিন দেশের অত্যাচারিত সংখ্যালঘু উদ্বাস্তুদের দায় গোটা দেশকেই নিতে হবে। আসামকে এককভাবে এই বোঝা বইতে হবে না।


চলতি আইন অনুযায়ী ১২ বছর ভারতে বসবাস করার পরে নাগরিকত্ব পাওয়ার যে নিয়ম ছিল, সেটাও কমিয়ে সাত বছর করা হয়েছে।


প্রথম থেকেই আসামের মানুষ ও অসমীয়া জাতীয়তাবাদী দলগুলো এই বিলের বিরোধিতা করছে। এখন কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, এমনকি বিজেপির শরিক দল শিবসেনাও এই বিলের বিরোধিতা করেছে।



অসমীয়াদের বক্তব্য হল, ১৯৮৫ সালের আসাম চুক্তির সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান এই নাগরিকত্ব বিলের। চুক্তি অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের পরে যে কেউ আসামে এসেছেন, তাকে বিদেশি বলে চিহ্নিত করা হবে, যে কারণে কয়েক বছর ধরে ওই রাজ্যে নাগরিকপঞ্জী তৈরির কাজ চলছে।
এদিকে নাগরিকত্ব বিলকে ঘিরে আসামের তীব্র অসন্তোষকে প্রশমিত করতে আসামের ছ’টি জনজাতিকে তফসিলভুক্ত করার জন্য একটি বিল সংসদে পেশ করা হচ্ছে বলেও জানান রাজনাথ। তাই-অহোম, কোচ-রাজবংশী, সুতীয়া, চা-জনজাতি, মরাণ ও মটক- এই ছ’টি জনজাতিকে তফসিলভুক্ত করার দাবি আসামে দীর্ঘ দিন ধরেই রয়েছে।


রাজনাথ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিলটিতে অনুমোদন দিয়েছে। এরই পাশাপাশি, বড়ো-কাছারিদের আসামের পার্বত্য জেলাগুলোতে এবং কার্বিদের সমতলে তফসিলি জনজাতির মর্যাদা দেয়ার জন্য আরো একটি বিল আনা হবে।


এদিকে আসামে আসু-সহ বিভিন্ন সংগঠনের ডাকা এবং কংগ্রেস, অগপ, এআইইউডিএফ সমর্থিত বন্‌ধে গুয়াহাটিসহ আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা মঙ্গলবার কার্যত অচল হয়ে যায়। বিভিন্ন স্থানে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। কেন্দ্রের শ্রমিক-বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে এ দিনই ছিল শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা বন্‌ধ।


দুইয়ে মিলে আসাম ছাড়াও মণিপুর, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম, মেঘালয়, অরুণাচলের অধিকাংশ এলাকায় জনজীবন কমবেশি বিপর্যস্ত হয়।


কৃষক সংগ্রাম সমিতির নেতা অখিল গগৈয়ের মতে, আসামের জনমতকে উপেক্ষা করে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করার ফলে ‘স্বাধীন আসাম’-এর দাবি তোলার পথ প্রশস্ত হচ্ছে।


আসামের বিদগ্ধ সমাজের অন্যতম মুখ হীরেন গোঁহাইয়ের মতে, আসামবাসীকে এই চক্রান্তের বিরুদ্ধে লড়াই চালাতে হবে। কেন্দ্র দাবি না মানলে স্বাধীন আসামের কথা চিন্তা করতেই হবে।


অগপ সভাপতি অতুল বরা একদা আসু সভাপতি তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালকে আত্মসমীক্ষা করতে অনুরোধ করেন।


অসমীয়া দলগুলো বলছে, এই বিলের মাধ্যমে আসলে বিজেপি আসামে ভোটের অঙ্ক খেলতে চাইছে। বাংলাদেশ থেকে আসামে যে অনেক হিন্দু চলে এসেছেন, তাদেরকে নাগরিকত্ব দেয়া গেলে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্ক জোরদার হবে।


ঘটনাচক্রে নাগরিক পঞ্জী থেকে যে লাখ লাখ হিন্দু বাঙালীর নাম বাদ পড়েছে, তাদেরও বিজেপি এটাই বোঝাচ্ছে যে নাগরিকত্ব বিল পাশ হয়ে গেলে তারা ভারতীয় হয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু নাগরিক পঞ্জী থেকে যে কয়েক লাখ মুসলিম বাদ পড়েছেন, তাদের যে কী হবে, তা নিয়ে কোনো কথা বলেনি বিজেপি। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা ও বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com