১৩ আগস্ট ৮৯ বছর বয়সে না-ফেরার দেশে যাত্রা করলেন ভারতের বিশিষ্ট বামপন্থী নেতা, আইনজীবী ও ভারতীয় সংসদের (লোকসভা) প্রাক্তন স্পীকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। বলা হচ্ছে, তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ভারতীয় রাজনীতির ''শেষ ভদ্রলোকটিরও'' বিদায় সম্পন্ন হলো।
কেন এ বিরল অভিধা? স্মৃতি খুঁড়ে সেটাই জানার চেষ্টা করেছে জার্মান বেতার ডয়চে ভেলে :
হিন্দু রীতিতে কবর দেয়ার চল নেই। যদি থাকত, তাহলে প্রয়াত সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিফলকে নির্দ্বিধায় লিখে দেয়া যেত, এমন একজন বামপন্থী, যিনি নিজের নীতি ও বিশ্বাসের সঙ্গে কখনো আপস করেননি। একজন আদর্শ বামপন্থীর মতোই হিন্দু-মুসলিম, বা অন্য কোনো সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদকে কখনো সমর্থনও করেননি। বরং রাজনৈতিক ভেদাভেদের ঊর্ধে ওঠার সর্বোত্তম দৃষ্টান্তই রেখে গেছেন।
২০০৪ সালে কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে সর্বসম্মতিক্রমে ভারতীয় সংসদের নিম্নতর কক্ষ লোকসভার স্পীকার মনোনীত হন তিনি; বিনা প্রতিদ্বন্দিতায়। দেশের সবক'টি রাজনৈতিক দল তাঁর মনোনয়নে একবাক্যে সমর্থন দিয়েছিল।
সেই আস্থার মর্যাদা রক্ষা করেছিলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। লোকসভার স্পীকারের দায়িত্ব পালনে তিনি দল-মত নির্বিশেষে সকলের প্রতি ছিলেন পক্ষপাতহীন। তাঁর দল সিপিআইএম যখন পরমাণু চুক্তি ইস্যুতে ইউপিএ সরকারের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নিলো, সোমনাথবাবুকেওস্পীকার পদ থেকে ইস্তফা দিতে বলেছিল দলীয় নেতৃত্ব। তিনি রাজি হননি। কারণ হিসেবে বলেছিলেন, তিনি কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি হিসেবে স্পীকারের আসনে নেই। এটি তাঁর সংসদীয় দায়িত্ব, যার সঙ্গে দলীয় মতামতের কোনো সম্পর্ক নেই।
এই বক্তব্য, এই সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবে তাঁর বড় ক্ষতি করেছিল। তাঁকে বহিষ্কার করেছিল নিজ দল সিপিএম।
১০ বারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি তিনি। চাইলেই অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারতেন। তাঁর মতো দাপুটে সাংসদ, তুখোড় বক্তা, অভিজ্ঞ রাজনীতিক, আইনে পারদর্শী মানুষ যে কোনো রাজনৈতিক দলেরই সম্পদ হতে পারত। কিন্তু বহিষ্কৃত হয়েও বামপন্থীই থেকে গেছেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। এমনকি দলের বিরুদ্ধে কখনো কথা বলেননি।
তাঁর মৃত্যুর পর অনেকেই বলছেন, ভারতীয় রাজনীতি থেকে ''শেষ ভদ্রলোকটি'' বিদায় নিলেন। আসলেই তাই।
বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]