পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলা গন্ধেশ্বরী, শিলাবতী, কংসাবতী, ডুলুং নদী, ওদিকে দামোদর ও দ্বারকেশ্বর নদের পানি বিপদসীমা ছুঁয়েছে। বলা হচ্ছে, এর ওপর এখন আবার লাগাতার বর্ষণ হলে বন্যা নিশ্চিত।
সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে একটি ভিডিও ছড়িয়েছে সর্বত্র। এতে দেখা যায়, পানির প্রবল স্রোতে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে যাচ্ছে একটি দোতলা বাড়ি। উল্টোদিকের একটি বাড়ির জানলা থেকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় তোলা এই সংক্ষিপ্ত ভিডিও, যা দেখে বাঁকুড়া জেলায় অতিবর্ষণের কারণে প্রায় বন্যার মতো পরিস্থিতি সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হয়। কিন্তু বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা, পেশায় চিকিৎসক একজন নিজের পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, বাঁকুড়ায় কখনোই দু'ঘণ্টার বেশি জল দাঁড়ায় না। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শুকনো জেলা বলে পরিচিত বাঁকুড়ায় মেঘভাঙা বৃষ্টির কারণে অমন জলস্রোত তৈরি হলেও বৃষ্টি থামতে এবং রোদ উঠতেই আবার সব খটখটে শুকনো হয়ে গেছে।
তবে যে বাড়িটি ভেঙে পড়ার ছবি সাড়া ফেলেছে, সে সম্পর্কে ওই চিকিৎসক জানান, ওই বাড়িটির অবস্থান নাকি গন্ধেশ্বরী নদীর খাতে - নদীর ধারে নয়, নদীর বুকে। নদীখাত দীর্ঘদিন শুকিয়ে যাওয়ায় চড়ার ওপরেই তৈরি হয়েছে স্থায়ী কংক্রিটের নির্মাণ। তার মধ্যে যেমন ফ্ল্যাটবাড়ি আছে, তেমনই সরকারি দপ্তরও আছে। হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে শুকনো নদীখাত বেয়ে বন্যার মতো জল ধেয়ে আসায় সামাল দেওয়া যায়নি। তবে বাড়ির বাসিন্দাদের আগেই নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেয়া হয়েছিল, ফলে কোনো প্রাণহানি হয়নি।
আবহাওয়া দপ্তরের হিসেবে সোম থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে, ২৪ ঘণ্টায় ৩৫৪ মিলিমিটার (মিমি) বৃষ্টি হয় বাঁকুড়ায়। তার মধ্যে ২৩৯ মিমি বৃষ্টি হয়েছে মাত্র তিন ঘণ্টায়। তারই ফলে ওই জলস্রোত। বৃষ্টি না কমলে লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে অবস্থিত একাধিক নদীবাঁধের স্লুইস গেট খুলে দেয়া হতে পারে বলে সতর্কতা জারি হয়েছিল। সেক্ষেত্রে যেহেতু বাঁধগুলো পাহাড়ি টিলার ওপর, একটু উচ্চতায় অবস্থিত, বাঁকুড়া, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরের সমতল এলাকায় আচমকা জলস্রোত ধেয়ে এসে সব ভাসিয়ে দেয়ার আশঙ্কা ছিল। পরের দু'দিনে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় সেই সম্ভাবনা আপাতত কিছুটা কম। গত মৌসুমে ঝাড়খণ্ডের ওই বাঁধগু্লো থেকে পানি ছাড়ার কারণেই পশ্চিমবঙ্গে ৬০ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে মেদিনীপুরের পরিস্থিতিও আশঙ্কাজনক। পশ্চিম মেদিনীপুরে সুবর্ণরেখা নদীতে পানি বাড়ছে। শিলাবতী বা শিলাই নদীর প্রবাহও বিপদসীমা ছুঁয়েছে৷ এর মধ্যেই পানি ঢুকেছে দাঁতন-২ ব্লকের বেশ কিছু গ্রামে। পূর্ব মেদিনীপুরে কংসাবতী নদীর বাঁধে ফাটল ধরে পানি ঢুকেছে পাঁশকুড়ায়। ঝাড়গ্রামের আপাতশীর্ণ, শান্ত ডুলুং নদীরও দুকূল প্লাবিত। নদীর ধারের গ্রামগুলো থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রশাসন প্রস্তুতি নিচ্ছে আরও প্রতিকূল পরিস্থিতি সামাল দেয়ার। কারণ, এর পর দু-একদিনের টানা বৃষ্টিই বন্যা ডেকে আনবে। সূত্র : ডয়চে ভেলে
বিবার্তা/হুমায়ুন/সোহান
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]