শিরোনাম
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী 'গৃহবন্দী'!
প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০১৮, ১৬:৫০
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী 'গৃহবন্দী'!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

অসুস্থতার কারণে জ্যোতি বসু যখন অবসর নিলেন, তখন দলের নির্দেশে, কিছুটা নিমরাজি হয়েই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তার আগে তিনি ছিলেন রাজ্যের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী। কাজের ফাঁকে যেটুকু অবসর পেতেন, মগ্ন থাকতেন নিজের পছন্দের দুই বিষয় - সাহিত্য ও সিনেমায়। ভালোবাসতেন পড়াশোনা করতে, সিনেমা দেখতে এবং প্রবল উৎসাহ ছিল তা নিয়ে আলোচনা করতেও।


সেই প্রিয় দু'টি কাজই এখন একেবারে বন্ধ করে দিতে হয়েছে বুদ্ধদেবকে। দৃষ্টিশক্তির সমস্যা তাঁর আগে থেকেই ছিল। মাঝে কিউবা গিয়ে চিকিৎসা করিয়েও এসেছিলেন এবং তার পর দীর্ঘ সময় ভালোই ছিলেন। কিন্তু এখন তাঁর একটি চোখের দৃষ্টি একেবারেই নেই, অন্যটিতেও ক্ষীণ ; প্রায় না-থাকার মতোই। ফলে পড়াশোনার কাজ থেকে পুরোপুরি সরে আসতে হয়েছে তাঁকে।


বুদ্ধদেবের চোখের অবস্থা এখন এতটাই সঙ্গীন যে বৈদ্যুতিক আলোর তীব্রতাও সহ্য করতে পারছেন না তিনি। ফলে ঘরের মধ্যেও আলো নিভিয়ে থাকতে হচ্ছে তাঁকে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা, ডাক্তারির পরিভাষায় ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজঅর্ডার (সিওপিডি)। অনেক বছর ধরেই এই রোগ বুদ্ধদেবের সঙ্গী। লাগাতার ধূমপান করে রোগটিকে তিনি আরও জটিল করে তুলেছেন, তাই এখন সেটি নিরাময়ের অযোগ্য হয়ে উঠেছে।


এর পরেও চিকিৎসার সাহায্যে রোগযন্ত্রণা কিছুটা কমানো যেত, কিন্তু বুদ্ধদেব সে সুযোগও নাকি দেবেন না পরিবার ও পার্টিকে। চিরকালের জেদি বুদ্ধদেব নাকি এখন একদম বেঁকে বসেছেন। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কয়েক মাস আগে একদিন হঠাৎই চলে গিয়েছিলেন দক্ষিণ কলকাতার পাম অ্যাভিনিউর যে সরকারি আবাসনে বুদ্ধদেব এখন থাকেন, সেখানে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ফ্ল্যাটের জীর্ণ দশা দেখে মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে সেটি মেরামতির নির্দেশ দেন রাজ্য পূর্ত দপ্তরকে। একই সঙ্গে মমতা প্রস্তাব দেন, বুদ্ধবাবুর চিকিৎসার সব খরচ বহন করবে সরকার। নিজের পছন্দের যে কোনো জায়গায় নিজের চিকিৎসা করতে পারেন তিনি। কিন্তু বুদ্ধদেব তখন সৌজন্যের খাতিরে সায় দিলেও শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা করাতে রাজি হননি। রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, তীব্র অভিমান থেকেই বুদ্ধবাবু বিনা চিকিৎসায়, একান্তে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন এখন।


প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন এই অভিমান?‌ সম্ভাব্য কারণ দু'টি - পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতনের জন্য এখনও রাজ্যের বাম সমর্থকদের একাংশ বুদ্ধদেবের ''অনমনীয় মনোভাব ও হঠকারিতাকেই'' দায়ী করে। বার বার এই প্রসঙ্গ উঠলে তুলনা হয় পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গীর সঙ্গে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অহংসর্বস্ব মনোভাবের। ২০০৬ সালের বিধানসভা ভোটে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েও তিনি যে সেটা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেকথা আজও বাম ভোটাররা বলে।



দ্বিতীয় কারণটি পুরোপুরি সাংগঠনিক। পশ্চিমবঙ্গে বামদের মহাপতনের জন্য দলের ভেতরেও সম্ভবত বুদ্ধদেবকেই দোষের ভাগ নিতে হয়েছিল। বাম দলগু্লো সবসময় সাংগঠনিক স্তরে সমবেত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে কাজ করে, ব্যক্তিমানুষের ইচ্ছে-অনিচ্ছাকে দূরে সরিয়ে রেখে সেই যৌথ সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়, যেভাবে জ্যোতি বসু দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব পেয়েও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, স্রেফ দল চায়নি বলে। কিন্তু ব্যর্থতার ক্ষেত্রে সম্ভবত যৌথভাবে তার দায়ভার নেয়া হয়নি। সবার আঙুল উঠেছিল মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দিকে। অভিমান হয়ত সে-কারণেও।


সূত্র: ডয়চে ভেলে


বিবার্তা/হুমায়ুন/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com