শিরোনাম
‘এটাই এখন মোদির নৃশংস নতুন ভারত’
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০১৮, ০৯:৫৫
‘এটাই এখন মোদির নৃশংস নতুন ভারত’
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতে রাজস্থানের আলওয়ারে কথিত গোরক্ষকদের হাতে আকবর খান নামে এক মুসলিম যুবককে পিটিয়ে হত্যা এবং তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পুলিশ সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী।


রাহুল টুইটারে লেখেন, মৃতপ্রায় আকবর খানকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পুলিশের তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল। কারণ পুলিশকর্মীরা রাস্তায় চা খেতে দাঁড়িয়েছিলেন। এটাই এখন মোদির নৃশংস নতুন ভারত। যেখানে মানবতার জায়গা নিয়েছে ঘৃণা। মানুষকে এখানে পিষে দিয়ে মরার জন্য ফেলে রাখা হয়।


এদিকে এর জবাবে বিজেপি নেতারা বলেছেন, কংগ্রেস শকুনের রাজনীতি করছে ও ঘৃণার বেসাতি ছড়াচ্ছে।


রাহুলের এই মন্তব্যের পরে বিজেপির তীব্র সমালোচনা করেন অন্য বিরোধী নেতারাও। তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জী বলেছেন, ভারতে ধর্ম নিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের একটা কাঠামো আছে। আমরা গণতন্ত্রের লড়াই না লড়ে ধর্মের লড়াই লড়ছি কেন? আমাদের ধর্ম সহনশীলতা, সহিষ্ণুতা। কাউকে খুন করে আসা নয়। অন্য ধর্মকে ঘৃণা করা নয়।


এভাবে একের পর এক মানুষ পিটিয়ে হত্যা আর সেই সব ঘটনায় প্রশাসনিক নির্লিপ্ততাকে কেন্দ্র করে দেশের সমাজ ও রাজনীতিতে যে বিরাট তোলপাড় চলছে, তা স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে প্রায় নজিরবিহীন।


এ ঘটনার পর রাজস্থানের এক বিজেপি বিধায়ক রাজা সিং নিজের গোশালায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, গরু বাঁচাতে গিয়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটে গেলে মিডিয়া এমন ভাব করে যেন ভূমিকম্প হয়ে গেছে। কিন্তু আকবর খানের মতো লোকেদের হত্যা কেন হচ্ছে সেটা কেউ ভেবে দেখে না! এখন তো আমরা জানছি তার বিরুদ্ধে আগেও গরু পাচারের অভিযোগ ছিল!


ভারতের অর্থমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, আকবরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দেরির অভিযোগ নিয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে রাজস্থান সরকার। কিন্তু রাহুল ঘৃণার সওদাগর।


অপর এক ক্যাবিনেট মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি বলেছেন, ১৯৮৪ সালে দেশের সবচেয়ে ঘৃণ্য হত্যাকাণ্ড ঘটেছে ভাগলপুর, নেলিতে। আরো অনেক দৃষ্টান্ত আছে। তখন রাহুলের পরিবার ক্ষমতায় ছিল। তিনিও ভোটের জন্য সমাজের বন্ধন নষ্ট করার কোনো সুযোগ ছাড়ছেন না। তারা এবার শকুনের রাজনীতি বন্ধ করুক।


গণমাধ্যমের একাংশে প্রকাশ, হরিয়ানার মেওয়াতের বাসিন্দা আকবর খান ও তার সঙ্গী আসলাম শুক্রবার গভীর রাতে গরু নিয়ে যাওয়ার সময় রাজস্থানের আলওয়ারের লালাওয়ান্ডি গ্রামের মারমুখী জনতার হাতে আক্রান্ত হন। আসলাম ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে প্রাণে রক্ষা পেলেও দুধ ব্যবসায়ী আকবর গণপিটুনির শিকার হন।


পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুরুতর আহত আকবরকে হাসপাতালে পৌঁছতে কমপক্ষে চার ঘণ্টা দেরি করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তারা পথে চা খাওয়ার জন্য যাত্রা বিরতিও দিয়েছিল। অবশেষে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা আকবরকে মৃত ঘোষণা করেন।


আকবরের স্ত্রী আসমিনা খান বলেন, তার স্বামী স্থানীয় দুধ ব্যবসায়ীদের দুধ সরবরাহ করতেন। তাদের তিনটি গরু রয়েছে। এবার নিজেই দুধের ব্যবসা শুরু করবেন বলে শ্বশুরবাড়ি ও বন্ধুদের থেকে টাকা ধার করে আলওয়ারে গরু কিনতে গিয়েছিলেন।


আকবরের সঙ্গী আসলাম বলেন, আকবর সেদিন ৬০ হাজার রুপি দিয়ে লালাওয়ান্ডি থেকে বাছুরসহ দু’টি গরু কিনেছিলেন। হামলার সময় তিনি কোনোক্রমে ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে প্রাণ বাঁচান।


পুলিশকে দেয়া লিখিত বয়ানে তিনি বলেছেন, হামলাকারীরা কে ছিল তা আমি বলতে পারব না। হামলাকারীরা বার বার বলছিল ওরা বিধায়কের লোক। তাই ওদের কিছু হবে না। ওরা আকবরের গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল। হামলাকারীরা পরস্পরকে সুরেশ, বিজয়, পরমজিৎ, নরেশ ও ধর্মেন্দ্র বলে সম্বোধন করছিল।


আলওয়ারের ঘটনা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর প্রপৌত্র তুষার গান্ধী ও সমাজকর্মী তেহসিন পুনাওয়ালা। তাদের আর্জিতেই গণপিটুনি রুখতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। এখন ওই আবেদনকারীরা নির্দেশ অমান্য করার জন্য রাজস্থান সরকারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার আর্জি জানিয়েছেন। কোর্ট জানিয়েছে, ২৮ আগস্ট এই আবেদনের শুনানি হবে। সূত্র: বিবিসি ও আনন্দবাজার পত্রিকা


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com