শিরোনাম
ওই ১১ সদস্য আত্মহত্যাই করেছে, সিসিটিভি ফুটেজে নয়া সূত্র
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০১৮, ১২:০০
ওই ১১ সদস্য আত্মহত্যাই করেছে, সিসিটিভি ফুটেজে নয়া সূত্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের দিল্লির বুরারির এক পরিবারের ১১ সদস্য আত্মহত্যাই করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজের সূত্র ধরে এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। এছাড়া উদ্ধার হওয়া ১১ বছর ধরে লেখে ১১টি ডায়েরির তথ্যও এ ইঙ্গিত দিচ্ছে।


ভাটিয়া পরিবারের বাড়ির সামনে চানদাওয়াত ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখার পর অন্তত একটা বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে এই ঘটনায় ‘বহিরাগত’ কারোর কোনো ভূমিকা ছিল না। ভাটিয়া পরিবারের সকলে মনস্থির করে নিয়েছিলেন তারা আত্মহত্যা করবে।


সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, ওইদিন রাত ১০টার সময় বাড়ির সদস্যরা একে একে টুল, দড়ি ও বিদ্যুতের তার নিয়ে বাড়িতে ঢুকছেন। এই সব সামগ্রী আত্মহত্যার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা গেছে, রাতের খাবার খেয়ে সবাই রাত ১টার সময় আত্মহত্যা করেন।


ফুটেজ অনুযায়ী, রাত ১০টার বাড়ির ছোটো বউ সবিতা, তার মেয়ে নিতু পাঁচটি টুল নিয়ে আসছেন। রাত ১০টা ১৫ মিনিট নাগাদ ১৫ বছরের দুটি কিশোর ধ্রুব ও শিবম বৈদ্যুতিন তার নিয়ে বাড়িতে ঢোকে। সাড়ে ১০টার পর একজন বাড়িতে এসে রুটি দিয়ে যায়। রাত ১০টা ৫৭ মিনিটে নারায়ণী দেবীর বড় ছেলে ভুবনেশ কুকুরকে সঙ্গে নিয়ে হাঁটতে বের হন। ১১টা ৪ মিনিট নাগাদ ভুবনেশ ফিরে আসেন। এরপর পরদিন ভোর ৫টা ৫৬ মিনিট নাগাদ বাড়িতে দুধের প্যাকেট রাখতে আসেন এক যুবক। ৭টা ১৪ মিনিট নাগাদ প্রতিবেশীরা বাড়িতে ঢুকে মৃতদেহগুলো দেখতে পান।


পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময়ে বাড়ির ছাদে বেঁধে রাখা হয়েছিল ওই পরিবারের পোষা কুকুর জ্যাকিকে। খবর পেয়ে তাকে নয়ডায় পশু উদ্ধার কেন্দ্রে নিয়ে যান এক পশু অধিকার কর্মী।



অন্যদিকে ১১টি ডায়েরির মধ্যে চূড়ান্তটিতে শেষ বাক্য লেখা হয়েছে, ‘এক কাপ জল রেখো, যখন এর রং বদলাবে, আমি তোমাদের বাঁচাতে আসবো। সব ক্রিয়ার পর তোমরা আবার একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবে।’ ফলে তান্ত্রিক যোগ উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।


এক তদন্তকারী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রথমে মনে করা হচ্ছিল এ ঘটনায় বাইরের কেউ ভাটিয়াদের সাহায্য করেছিলেন। দরজা বাইরে থেকে খোলা থাকাটাও সেদিকে ইঙ্গিত করছিল। কিন্তু ফুটেজ হাতে পাওয়ার পর সেই ধোঁয়াশা কাটে। ওই রাতে ভাটিয়া বাড়িতে বহিরাগত কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেখা যায়নি। যা থেকে পরিষ্কার ওই ১১ জন আপাতদৃষ্টিতে স্বেচ্ছায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।


বুদ্ধার হওয়া ওই ডায়েরিতে তন্ত্রমন্ত্রের ব্যাপারে অনেক কিছু লেখা আছে৷ ডায়েরিগুলো ছোট ছেলে ললিতের। তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে তন্ত্রসাধনা করতেন। তার উপর তার মৃত বাবা ‘ভর’ করতেন। তিনি ললিতকে মোক্ষলাভের উপায় বলে দিতেন। এমন অনেক কিছু কথা লেখা আছে ডায়েরিতে। ললিত ছাড়াও আরো একজনের হাতের লেখা পাওয়া গেছে সেখানে। তিনি হলেন প্রিয়াঙ্কা। যার ১৭ জুন বাগদান হয় এক ব্যবসায়ী বাড়ির ছেলের সঙ্গে।


এদিক, বুরারি গণমৃত্যুর জট খুলতে পুলিশ ‘সাইকোলজিক্যাল অটোপসি’ বা ‘মানসিক ময়নাতদন্তের’ চিন্তাভাবনা করছে। ভাটিয়াদের বাড়িতে উদ্ধার হওয়া ১১টি রহস্যজনক ডায়েরি ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা তদন্তকারীদের অনুমান, ভাটিয়া পরিবার ‘শেয়ারড সাইকোসিস ডিসঅর্ডার’ নামে এক বিরল মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন। ঘনিষ্ঠভাবে মানসিক যোগ থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে এমন সমস্যা দেখা যায়। ছোঁয়াচে রোগের মতো এই মনোবিকার আক্রান্ত মানুষ থেকে তার ঘনিষ্ঠদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে।


কিন্তু ভাটিয়া পরিবারের অন্য সদস্যরা তা মানতে নারাজ। পরিবারের বাকি সদস্যেরা বারবারই এটাকে গণআত্মহত্যা না বলে খুন বলছেন। কিছু ক্ষেত্রে খটকা লাগলেও ময়নাতদন্তে ওই ১১ জনের কারো দেহে জোরজবরদস্তির প্রমাণ মেলেনি। তা থেকেই আত্মহত্যা তত্ত্বে গুরুত্ব দিচ্ছে পুলিশ। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা কিছু লুকোচ্ছেন কি না, তা নিশ্চিত করতেই সদস্যদের সাইকোলজিক্যাল অটোপসি করতে চাইছে পুলিশ। সূত্র: কলকাতা২৪/৭ ও সংবাদ প্রতিদিন


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com