শিরোনাম
রোহিঙ্গা সংকটে অতি সক্রিয় দালাল চক্র
প্রকাশ : ১৬ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৫৪
রোহিঙ্গা সংকটে অতি সক্রিয় দালাল চক্র
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মিয়ানমারে রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচারের ঘটনায় যে সঙ্কট নেমে এসেছে তারই সুযোগ নিচ্ছে এক শ্রেণির দালাল চক্র। বাংলাদেশ সীমান্ত পার করে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করিয়ে দেয়ার জন্য রোহিঙ্গা মুসলিম পিছু ২৫ হাজার রুপি নিচ্ছে দালালরা। সীমান্ত পেরিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারাই জানিয়েছে তাদের সীমান্ত পারের সেই কাহিনী।


পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার বারুইপুর থানার অধীন কুলারি গ্রামে টিনের অস্থায়ী ছাউনি করে একাধিক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু পরিবারের বসবাস। স্থানীয় সরকার বা এনজিও-এর তরফে কিছু সুযোগ সুবিধা পেলেও রোহিঙ্গারা এখন সরকারের তরফে ন্যূনতম পরিসেবা পাওয়ার অপেক্ষা করছেন। তাদের আশা, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির (দিদি) সরকার তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন না।


মিয়ানমার থেকে অত্যাচারিত হয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই অবৈধভাবে বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে। আর শুধুমাত্র নৃশংসতার হাত থেকে নিজেদের প্রাণ বাঁচাতেই দালালদের হাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ গুঁজে দিতেও কসুর করেনি তারা। আর এই সুযোগেই সীমান্ত বরাবর অত্যন্ত সক্রিয় হয়ে উঠেছে দালালদের একটি চক্র।


কুলারি গ্রামের একটি শরণার্থী শিবিরের কয়েকজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, কিভাবে গরু-ছাগলের মতো সীমান্ত পার করিয়ে ভারতে প্রবেশ করানো হয়েছিল তাদের। কিভাবে গরু পাচারচক্রের এজেন্টরা কয়েক হাজার রুপির বিনিময়ে নিশ্চিন্তে ওপার থেকে এপারে ঢুকিয়ে দিয়েছে।


বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গের মালদাকে পাচারকারীদের স্বর্গরাজ্য বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। কয়েক দশক ধরে এই সীমান্তে পাচারকারীরা অত্যন্ত সক্রিয় বলে অভিযোগ।


জানা গেছে, ২০ থেকে ২৫ হাজার রুপি দিলেই নারী বা পুরুষ-যে কোনো ব্যক্তিকেই সীমান্ত পার করার দায়িত্ব এজেন্টদের। ১০ বছরের নিচে বয়স ভেদে শিশুদের পাচারের জন্য ২ থেকে ৫ হাজার রুপি নিয়ে থাকে দালালরা। আর পাঁচ সদস্যের পরিবারকে সীমান্ত পার করিয়ে দিতে এজেন্টদের দিতে হয় ১ লাখ রুপি। যদিও এক্ষেত্রে কিছুটা ডিসকাউন্ট দিয়ে থাকে দালালরা। সেক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে ৭৫ থেকে ৮০ হাজার রুপি দিলেই সীমান্ত পারে করে দেয়া হত।


সীমান্ত হয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করা এই সব রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগেরই পাসপোর্ট বা ভিসা নেই। তাই সীমান্ত পেরিয়ে নিরাপদে ভারতে পৌঁছনোর জন্য বা পারাপারের সময় তারা যাতে কোনো অসুবিধায় না পড়েন সেদিকে লক্ষ্য রেখে গরু পাচারকারীরা ওই রোহিঙ্গাদের সঙ্গে গাইড হিসাবে ভাড়া করা শ্রমিককে দিয়ে থাকে। এজন্য ভাড়া করা শ্রমিকদেরও মোটা রুপি দিতে হত দালালদের।


সীমান্ত পার করাতে দালালদের কাছ থেকে শ্রমিকরা রোহিঙ্গা প্রতি ১০-১২ হাজার রুপি পেয়ে থাকে। অর্থাৎ সীমান্ত পার করাতে একজন রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে দালালরা যে অর্থ নিয়ে থাকে তার অর্ধেকটাই এই ভাড়া করা শ্রমিকদের দিতে হয়।


মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার কারণে গত কয়েকবছর ধরেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি দিচ্ছে। তবে গত বছরের আগস্টের শেষে নতুন করে সহিংসতা তৈরি হওয়ায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। বাংলাদেশে সবমিলিয়ে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ৯ লাখের কাছাকাছি। অন্যদিকে, ভারতে অবস্থান নিয়েছে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা।


এই অবস্থায় ভারতের উদ্বেগের কারণ বাংলাদেশ-ভারতের অরক্ষিত সীমান্তের সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে এই রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ। সরকারের আশঙ্কা, এইসব রোহিঙ্গাদের সাথে জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগসাজেশ থাকতে পারে। তাই দেশের নিরাপত্তার কারণেই রোহিঙ্গাদের ভারতের বসবাসের অনুমতি দেয়া যাবে না বলে দেশটির সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়ে দিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার।


সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে গত মাসেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ভারতের পাঁচ রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মিজোরাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অতিরিক্ত সতর্ক থাকার বার্তা দেয়া হয়েছে। সূত্র: জিনিউজ


বিবার্তা/ডিডি/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com