শিরোনাম
আসামে ৩০ লাখ বাঙালির বাসস্থান অনিশ্চয়তা
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০১৭, ১৭:১০
আসামে ৩০ লাখ বাঙালির বাসস্থান অনিশ্চয়তা
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম রাজ্যের বাঙালিরা বিপাকে পড়েছেন। বিজেপি শাসিত এই রাজ্য ‘বিদেশী’ ইস্যুতে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আসামে বসবাসরত ৩০ লাখ বাঙালির গায়ে সরকারিভাবে বিদেশী তকমা পড়তে চলেছে। তাই অনিশ্চয়তায় আছেন এসব বাঙালীরা।


বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালের ছেড়ে আসা ছাত্রসংগঠন নিখিল আসাম ছাত্র সংস্থা বা আসু দাবি করেছে বিদেশি বিতাড়নে কোনো রকম ঢিলেমি গ্রহণযোগ্য হবে না। নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ সবাইকেই রাজ্যছাড়া করতে হবে। ন্যাশনাল রেজিস্ট্রার অব সিটিজেনশিপের (এনআরসি) সমন্বয়ক প্রতীক হাজেলা, সম্প্রতি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে এনআরসির খসড়া তালিকা উপস্থাপন করেন। তালিকামতে, আসামের বাসিন্দাদের মধ্যে প্রায় ৩০ লাখের নাগরিকত্ব অবৈধ।


কিন্তু কিসের ভিত্তিতে এ তথ্য দিলের তা জানা যায়নি। সুপ্রিম কোর্টে হাজেলা শুনিয়েছেন, আসামের অরিজিনাল ইনহ্যাবিট্যান্ট (আদি বাসিন্দা) বা ওআইদের কথা। কিন্তু এই ওআই কারা তা নিয়ে ব্যাখ্যা করেননি হাজেলা। অথচ আসাম চুক্তি অনুযায়ী ১৫ মার্চ ১৯৭৫-এর আগে থেকে যারা আসামে বসবাস করছেন, তাঁরা সবাই আসামের স্থায়ী বাসিন্দা।


ইতোমধ্যে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এনআরসি তালিকা প্রকাশ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের এ নির্দেশ পেয়ে কট্টর বাঙালি-বিদ্বেষী বলে পরিচিত আসু ফের বিদেশি খেদাওয়ের দাবিতে সোচ্চার।


বিজেপির উসকানিতেই আসুর এ অবস্থান বলে মনে করছেন অসমের ভাষিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। তাছাড়া কংগ্রেসের আশঙ্কা, ৩০ লাখ মানুষের গায়ে বিদেশি তকমা লাগিয়ে দেয়া হলে আবারো অশান্তির আগুন জ্বলবে।


সাবেক মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে পাল্টা প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যর্থ রাজ্যবাসী কোথায় যাবেন? নিজেদের দারিদ্র্য বা অন্যান্য কারণে নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে না পারা মানুষগুলো যে কথিত বাংলাদেশি, সেই প্রমাণও তো কারও কাছে নেই। ফলে বাংলাদেশ তাঁদের কোনো অবস্থাতেই গ্রহণ করবে না।


কংগ্রেস নেতার মতে, অনেক গরীব মানুষের নাই মাথা গোঁজার ঠাঁই। এছাড়াও বন্যায় তাদের ঘর-গৃহস্থালির জিনিসপত্র ভেসে গেছে। যার দরুণ তারা নিজেদের ভারতীয় প্রমানের লড়াইয়ে পরাজিত হচ্ছেন। তাদের গায়ে বিদেশি তকমা লাগিয়ে বিতাড়নের উদ্যোগ নেয়া হলে রাজ্যে অশান্তির বিরাজ করবে। আর সেটা হলে রাজ্যের বিজেপি সরকারই দায়ী থাকবে বলে মন্তব্য করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি রিপন বরা।


আসামের বরাক উপত্যকায় তো রীতিমতো পৃথক বাঙালি রাজ্যের দাবি উঠতে শুরু করেছে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আসুর সভাপতি দীপঙ্ক কুমার নাথ মন্তব্য করেছেন, বাঙালি হিন্দু ও মুসলিমরা যদি একজোট হয়, তবে তো অসমিয়াদের অস্তিত্ব-সংকট দেখা দেবে।


এ অবস্থায় রাজ্যবাসীর নিরাপত্তার অভয় দেওয়ার বদলে বিজেপি সরকারের পুলিশপ্রধান মুকেশ সহায় সাংবাদিক সম্মেলন করে হুমকি দেন, অশান্তি সৃষ্টির কোনো চেষ্টা বরদাশত করা হবে না। আদালতের নির্দেশ মেনেই পুলিশ কাজ করবে বলেও তিনি আগাম জানিয়ে দেন।


শিলচর থেকে মানবাধিকারকর্মী সাধন পুরকায়স্থ মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে জানান, ‘আসামে বাঙালিদের অবস্থা রোহিঙ্গাদের চেয়েও খারাপ। রোহিঙ্গারা শরণার্থী হয়ে অন্যত্র যেতে পারছে, আসমের বাঙালিদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। বিজেপির আমলে জেলে বসেই চিতা বা কবরেই মুক্তির প্রার্থনা তাঁদের একমাত্র ভবিতব্য।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদ করতে পারেন। এখানে কান্নাকাটিরও সুযোগ নেই। বিনা অপরাধে বাঙালি ছাত্রনেতা সুবোধ বিশ্বাসকে মাসের পর মাস জেলে আটকে রেখেছে বিজেপির পুলিশ।’


বিবার্তা/আমিরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com