শিরোনাম
বিদায়ী ভাষণে আবেগপ্রবণ প্রণব মুখার্জি
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০১৭, ০০:৩৫
বিদায়ী ভাষণে আবেগপ্রবণ প্রণব মুখার্জি
কলকাতা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিদায়ী ভাষণে আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। রবিবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শেষবারের মতো ভাষণ দিতে গিয়ে জীবনের প্রথম সাংসদ হওয়ার অভিজ্ঞতা এবং সংসদের অধিবেশনে অংশ থেকে শুরু করে রাষ্ট্রপতি হওয়া সবকিছুই তুলে ধরেন তিনি।


এদিন সংসদে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে প্রণব বলেন, ‘গত পাঁচ বছর ধরে সকলে যেভাবে তাঁকে সমর্থন করে গেছেন এবং আজ আমাকে উষ্ণ আতিথেয়তা জানানো হল তার জন্য আমি সকলকে ধন্যবাদ জানাই’।


সাংসদ হিসেবে জীবনের প্রথম দিনটির কথা স্মরণ করে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘সাংসদ হিসেবে আমি ৩৭টি বছর উৎসর্গ করেছি। ৪৮ বছর আগে ৩৪ বছর বয়সে প্রথমবারের জন্য সাংসদ হই। আমি পাঁচবার রাজ্যসভা ও ২ বার লোকসভার সদস্য ছিলাম। রাজ্যসভায় চারবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে নির্বাচিত হই এবং একবার গুজরাট থেকে’। তিনি আরও বলেন, ‘সাংসদ হিসেবে আমার সময় খুব ভাল কেটেছে। সংসদে এসে আমি সমৃদ্ধ হয়েছি। অভিজ্ঞ সাংসদদের সংস্পর্শে এসেছি।


সাংসদ হিসেবে আমি অনেক নেতার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী কংগ্রেসের নরসিমা রাও, সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী, বিজেপির সিনিয়র নেতা লালকৃষ্ণ আদভানীর নামও উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করেও অনেক কিছু শিখেছি’।


এদিন সন্ধ্যায় এক জমকালো অনুষ্ঠানে তাঁকে সংবধর্না জানানো হয়। সেন্ট্রাল হলে প্রবেশের পরই বেজে ওঠে দেশটির জাতীয় সঙ্গীত। এরপর প্রথমে প্রণবকে মালা পরিয়ে সংবর্ধনা জানান দেশটির উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি। এরপর তাঁর হাতে ফুলের স্তবক তুলে দেন লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন। পরে একটি স্মারক এবং সাংসদদের স্বাক্ষরিত একটি পুস্তিকা (কফি টেবিল বুক) তুলে দেয়া হয় বিদায়ী রাষ্ট্রপতির হাতে।


এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, লোকসভার স্পীকার সুমিত্রা মহাজন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ, অর্থ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি, সংসদীয় মন্ত্রী অনন্ত কুমার, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা ড. মনমোহন সিং, আরেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি.দেবগৌড়া, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, দলের নেতা গুলাম নবি আজাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সংসদ সদস্যরা।


ভারতের সংসদকে গণতন্ত্রের মন্দির বলে আখ্যায়িত করে প্রণব মুখার্জি বলেন, ‘আমি যদি দাবি করি যে আমি এই সংসদেরই সৃষ্টি তবে সম্ভবত এটা অশোভন বলে বিবেচিত হবে না’।


তবে সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন ইস্যুতে যেভাবে সংসদ ভুন্ডুল হচ্ছে তা নিয়েও ক্ষোভ চেপে রাখেন তিনি। প্রণব বলেন, ‘প্রথমে সংসদে গুরু-গম্ভীর আলোচনা হতো, রাজ্যসভায় খুব ভালো ভালো বক্তা ছিলেন। কিন্তু এখন বিরোধীদের বাধাদান ও বয়কটের ফলে সংসদ ভুন্ডুল হয়ে যাচ্ছে। এতে সংসদে আলোচনার সময় কমে যাচ্ছে’। রাষ্ট্র্রপতি হিসেবে সংবিধানকে রক্ষা করতে, সংরক্ষণ ও প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করেছেন বলেও এদিন জানান তিনি।


ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে নিজের রাজনৈতিক জীবনের পরামর্শদাতা বলে উল্লেখ করে প্রণব বলেন, ‘আমি ইন্দিরা গান্ধীর মতো একজন মহান মানুষের সঙ্গে কাজ করে সমৃদ্ধ হয়েছি। আমার কর্মজীবন তাঁর দ্বারা প্রশিক্ষিত হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্যি কথাটা বলার সাহস ছিল ইন্দিরাজির’। জরুরি অবস্থার পরে কংগ্রেসের পরাজয়ের পর লন্ডনে একটি মজার ঘটনার কথাও তুলে ধরেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দেশে জরুরি অবস্থার পর সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস ও ইন্দিরাজির ব্যক্তিগত পরাজয়ের পরই তিনি ১৯৭৮ সালে লন্ডনে চলে গিয়েছিলেন। এবং সেখানে সাংবাদিকরা খুব আক্রমনাত্মকভাবে প্রশ্ন করার জন্য মুখিয়ে ছিলেন’।


রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের সংবিধান দেশের গর্ব। এর মধ্যে দিয়ে দেশের সামাজিক ও আর্থিক পরিবর্তনের রূপরেখা গঠিত হয়। সংবিধান একদিকে দেশবাসীর আত্মা’।


২০ মিনিটের বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি পশ্চিমবঙ্গ থেকে কংগ্রেস সাংসদ থেকে শুরু করে দেশটির সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদটি অলঙ্কৃত করা-সবটাই তুলে ধরেন তিনি।


প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করে প্রণব বলেন, ‘দেশের জন্য তিনি অনেক কিছু করেছেন। বেশ কিছু যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছেন আবার অনেক কিছু পরিবর্তন আনার চেষ্টাও করেছেন। তাঁর আন্তরিক ব্যবহার আমি মনে রাখবো’।


১ জুলাই থেকে ভারতে ‘এক দেশ এক কর’ ব্যবস্থা অর্থাৎ গুডস অ্যান্ড সার্ভিস ট্যাক্স (জিএসটি) চালু হওয়ায় দেশ সুফল পাবে বলেও মনে করেন তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর উৎকৃষ্ট উদাহারণ হল এই জিএসটি।


রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারি ও স্পীকার সুমিত্রা মহাজনও বক্তব্য রাখেন। দুইজনই মানুষ, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রপতি হিসেবে প্রণব মুখার্জির বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।


আগামীকাল ২৪ জুলাই রাষ্ট্রপতি হিসাবে মেয়াদ শেষ হচ্ছে প্রণব মুখার্জির। আগামী ২৫ জুন ১৪ তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেবেন রামনাথ কোবিন্দ। ওইদিনই রাইসিনা হিলস ছাড়বেন বিদায়ী রাষ্ট্রপতি প্রণব।


বিবার্তা/ডিডি/পলাশ


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com