প্রচণ্ড পেটের যন্ত্রণায় ১৮ বছর বয়সী মুকেশ প্রজাপতিকে গত শুক্রবার রাতে ভারতের আগ্রার এস এন মেডিকেল কলেজে নিয়ে যান তার বাবা টিকাম প্রজাপতি। কিন্তু, কিছুতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুকেশকে ভর্তি করাচ্ছিল না বলে অভিযোগ। মুকেশ যক্ষা রোগে আক্রান্ত ছিলেন। সেইসঙ্গে তার পেপটিক আলসারও হয়েছিল। পেটে সমানে রক্তক্ষরণ হওয়ায় ব্যাথা বাড়ছিল বলে চিকিৎসক মুকেশকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন।
এস এন হাসাপাতালের এক বিভাগ থেকে আরেক বিভাগে সমানে মুকেশকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন তার বাবা টিকাম এবং চাচা রাজেশ। কিন্তু, রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে সকল বিভাগ থেকেই তাদের ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ। সব বিভাগ থেকেই বলা হয় এটা সার্জারির বিষয় তাই সেখানেই রোগীকে ভর্তি করতে হবে। কিন্তু, রাতে সার্জারি বিভাগের দায়িত্বে থাকা অভিষেক নামে এক জুনিয়র চিকিৎসকও মুকেশকে ভর্তি নিতে চাননি। তিনি জানান, বিভাগীয় প্রধান নির্দেশ দিলে তিনি এমন সঙ্কটাপন্ন রোগীকে ভর্তি করবেন।
অভিষেকের কথা মতো মুকেশের বাবা মোবাইল থেকেই সেই রাতে সার্জারি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক শ্বেতাঙ প্রকাশকে ফোন করেন। কিন্তু, গভীর রাতে ঘুমানোর সময় ফোন করায় মুকেশের বাবা টিকাম-এর উপর ব্যাপক ক্ষেপে যান শ্বেতাঙ। এরপর অভিষেকের সঙ্গে তিনি ফোনে কথা বলতে চান। অভিযোগ, শ্বেতাঙ যে গোটা ঘটনায় রুষ্ট হয়েছেন তা তিনি অভিষেককে জানান। এখানেই শ্বেতাঙ ক্ষান্ত হননি, তিনি মুকেশকে মেরে ফেলার কথাও বলেন।
সেইসঙ্গে জানান, হাসপাতালের কোনো একটা বিভাগে ভর্তি করে নিয়ে মুকেশকে বিনা চিকিৎসায় ফেলে রাখতে। এরপর বেশ ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, ‘ভর্তি করে নাও মেরে ফেলার জন্য। সবই তো জানো কী করতে হবে? কিন্তু, কেন ফালতু ফালতু ঝামেলা নাও?’
এসএন হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক অভিষেক শ্বেতাঙকে জানান, মুকেশের পেটে বিস্তর রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এর উত্তরে শ্বেতাঙ ফের বলেন,‘আরে ভাই ভর্তি করে নাও, তারপর রোগীর পরিবারকে রক্ত আনার কথা লিখে দাও। ব্যস, এই চাপেই রোগীর পরিবার দৌড়ঝাপ করবে, ততক্ষণে রোগীর মরা ছাড়া আর কোনো গতি থাকবে না।’
নিজের বিভাগের জুনিয়র চিকিৎসক অভিষেককে এই সব নির্দেশ দেয়ার পর শ্বেতাঙ ফের বলেন, ‘আরে এই সব কাজের জন্য আমার ঘুম ভাঙানোর কোনো দরকার ছিল কি? এসব তো তোমরাই সামলাতে পারো।’এই বলে ফোন কেটে দেন শ্বেতাঙ।
মোবাইলে এই কথোপকথনের কয়েক ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হয় মুকেশের। মোবাইলে এস এন হাসপাতালের দুই চিকিৎসক শ্বেতাঙ প্রকাশ এবং অভিষেকের মধ্যে চলা ভয়ঙ্কর কথোপকথন যে মোবাইল কলে রেকর্ড হয়ে গিয়েছে তা প্রথমে জানতেন না মুকেশের বাবা। পরে, মোবাইলে এই টেপটি তাঁরা কল রেকর্ডে আবিষ্কার করেন।
মোবাইলে রেকর্ড হওয়া সেই কথোপকথন দিয়ে পুলিশে অভিযোগও দায়ের করেছেন মুকেশের বাবা এবং চাচা। আগ্রার পুলিশ সুপার গোটা ঘটনাটি জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসকের সুপারিশে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক একটি তদন্তাকারী মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছেন।
সেই তদন্তকারী মেডিকেল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক এ আগরওয়াল জানিয়েছেন, তদন্ত চলছে। শ্বেতাঙ প্রকাশ এবং অভিষেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য প্রমাণ হলে দু’জনেরই লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
আগ্রার পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, অডিও টেপটি ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
বিবার্তা/রয়েল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]