শিরোনাম
ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ে পেঁপে পাতার রস
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০১৯, ১৩:৫৯
ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ে পেঁপে পাতার রস
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শিশু, বয়স্ক, মধ্যবয়স্ক সবারই হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বর। ডেঙ্গু হলে খাবার-দাবার ও পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। বিশেষ করে শিশুদের জ্বর হলে তারা খাওয়া একেবারেই ছেড়ে দেয়। এ থেকে হতে পারে পানিশূন্যতাসহ নানা জটিলতা।


স্বাস্থ্যকর ফলগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো পেঁপে। এটি শুধু সহজলভ্য নয়, দামেও সস্তা। আবার কাঁচা-পাকা দুভাবেই খাওয়া যায়। নানা পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান থাকায় রোগ নিরাময়ে এর জুড়ি মেলাও ভার। তবে অনেকগুলো নিরাময় বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে পেঁপের পাতাও কিন্তু অনেক উপকারী।


পেঁপের পাতা প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য সুপরিচিত। এ ছাড়া এতে অ্যান্ট-ম্যালেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে কার্যকারী ভূমিকা রাখে। এটি অন্যান্য রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেও আমাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।


এবার জেনে নিন কীভাবে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সাহায্য করে পেঁপে পাতার রস


ডেঙ্গু রোগীর প্লেটলেটের সংখ্যা বাড়ায়


ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের প্লেটলেট সংখ্যা বাড়াতে সাহায্য করে পেঁপে পাতার রস। গবেষণায় দেখা গেছে, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ৪০০ রোগীকে মানসম্মত চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। তাদের মধ্যে অর্ধেকের ডেঙ্গু ছিল নিয়ন্ত্রণে। কারণ ট্যাবলেট আকারে তাদের পেঁপে পাতার রসের একটি নির্দিষ্ট ডোজ দেওয়া হয়েছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব রোগীকে পেঁপে পাতার রস দেওয়া হয়েছিল তাদের ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ছিল। তাদের শরীরে প্লেটলেটের সংখ্যারও উন্নতি হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের রক্ত পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হয়নি।


ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো কমিয়ে আনে


অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসার কার্যকর প্রতিকার হিসেবে পেঁপে পাতার রস খাওয়ার পরামর্শ দেন। এই মারাত্মক রোগটি এডিস মশার কারণে হয়ে থাকে। এই মশা আমাদের রক্তে এই রোগের সংক্রমণ করে। এতে করে অনেক জ্বর, ত্বকের ফুসকুড়ি এবং প্লেটলেট সংখ্যা কমে যায়। তবে পেঁপে পাতার রস ডেঙ্গুর এসব লক্ষণ কমাতে সহায়তা করে।


শক্তিশালী অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল বৈশিষ্ট্য


পেঁপের পাতায় শক্তিশালী অ্যান্টি-ম্যালেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ডেঙ্গুজ্বর নিরাময়ে কার্যকর ভূমিকা রাখে। এতে অ্যাসেটোজেনিন নামে এমন এক ধরনের যৌগ রয়েছে, যা ম্যালেরিয়া এবং ডেঙ্গুর মতো রোগগুলো প্রতিরোধে সহায়তা করে।


রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়


পেঁপে পাতায় ফেনলিক যৌগ, পেপেইন, অলকালয়েড এবং শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট নামে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এ ছাড়া পেপেইন এবং অন্য যৌগের সংমিশ্রণটি প্রয়োজনীয় প্রোটিনগুলো কার্যকরভাবে হজম করতে সহায়তা করে। এর ফলে হজম সংক্রান্ত যেকোনো সমস্যা দূর হয়।


ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়ে পেঁপে পাতা ব্যবহার করার কিছু উপায়-


পদ্ধতি-১


কিছু মাঝারি আকারের পেঁপে পাতা ভালো করে ধুয়ে নেওয়ার পরে আংশিকভাবে শুকিয়ে নিন। এবার এগুলো ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। একটি সসপ্যানে দুই লিটার পানি নিয়ে এর মধ্যে পাতার টুকরাগুলো ছেড়ে দিন। এবার পানি ও পাতা ফুটিয়ে একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। সসপ্যানের পানি অর্ধেকে না আসা পর্যন্ত এর ঢাকনা সরাবেন না। পরে পানি কমে আসলে ঢাকনা সরিয়ে মিশ্রণটি কাঁচের ভরে রাখুন। প্রতিদিন এই মিশ্রণ খেলে দ্রুত ডেঙ্গু নিরাময় হয়।


পদ্ধতি-২


আরেকটি উপায় হলো- প্রতিদিন পাকা পেঁপে খাওয়া। এ ছাড়া এক গ্লাস পেঁপের রসের সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়েও পান করতে পারেন। দিনে কমপক্ষে ২-৩ বার এই রস পান করলে ডেঙ্গুজ্বর নিরাময় হয়।


পদ্ধতি-৩


পেঁপের কিছু পাতা পিষে নিন। এবার তা থেকে যে রস বের করে নিন। এই রস দিনে দুবার দুই চামচ করে পান করলেও দ্রুত ডেঙ্গু নিরাময় হবে।
সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস


মনে রাখতে হবে, অভিজাত এলাকায় বড় বড় সুন্দর সুন্দর দালান কোঠায় এরা বাস করে। স্বচ্ছ পরিষ্কার পানিতে এই মশা ডিম পাড়ে। ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ড্রেনের পানি এদের পছন্দসই নয়। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে এডিস মশার ডিম পাড়ার উপযোগী স্থানগুলোকে পরিষ্কার রাখতে হবে এবং একই সাথে মশক নিধনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং এডিস মশা প্রতিরোধ।


সাধারণত ডেঙ্গু জ্বর হলে চিকিৎসকেরা সারা দিনে অন্তত আড়াই লিটার থেকে তিন লিটার পানি পান করার পরামর্শ দেন। জ্বর হলে পানি পান করতে অনেকেরই ইচ্ছে হয় না। তাই পানির চাহিদা পূরণ করতে পানির সঙ্গে ফলের রস (কেনা জুস নয়, বাড়িতে করা রস), ডাবের পানি যোগ করুন। ফলের রসে ভিটামিন সি আছে, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাল্টা, কমলা, লেবু, পেয়ারা, কিউই, স্ট্রবেরি, পেঁপে, আনার বা ডালিম ইত্যাদি খেতে হবে। এসব ফলে জলীয় অংশ অনেক। তা ছাড়া রুচি বাড়াতেও সাহায্য করবে। ডাবের পানিতে খনিজ বা ইলেট্রোলাইটস আছে, যা ডেঙ্গু জ্বরে খুবই দরকারি।


বিভিন্ন ধরনের সবজি থেঁতো করে জুস করে খেলে খুবই উপকার হবে। গাজর, টমেটো, শসা ইত্যাদি সবজি বেশি করে খেতে দিন। কেননা এতে জলীয় অংশ বেশি। ব্রকোলি ভিটামিন কে এর উৎস, যা ডেঙ্গুতে রক্তপাতের ঝুঁকি কমায়। খেতে হবে নানা ধরনের শাকও।


ডেঙ্গু রোগীকে প্রতিদিন নানা ধরনের স্যুপ, যেমন সবজির স্যুপ, টমেটোর স্যুপ, চিকেন স্যুপ বা কর্ন স্যুপ দিন। এতে পানির চাহিদা পূরণ হবে, পাশাপাশি পুষ্টিও নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া নরম সেদ্ধ করা খাবার, জাউ, পরিজ ইত্যাদি খেতে পারেন।


ইদানীং ডেঙ্গুতে অনেকেরই পেটে হজমের সমস্যা, বমি, পেট ব্যথা হচ্ছে। যকৃতেও অস্বাভাবিকতা হয় ডেঙ্গুতে, এসজিপিটি বেড়ে যায়। তাই অতিরিক্ত মসলা ও চর্বি তেলযুক্ত খাবার না খাওয়াই ভালো। তবে খাদ্যতালিকায় আমিষ থাকতে হবে যথেষ্ট। দুধ, ডিম ও এগুলোর তৈরি নানা খাবার, মাছ ও মুরগি খেতে হবে।


নানা ধরনের ভেষজ খাবারের উপকারিতা আছে। যেমন উপরোল্লিখিত পেঁপে পাতা অণুচক্রিকা বাড়াতে সাহায্য করে বলে ডেঙ্গুতে উপকারী। দুটি তাজা পেঁপে পাতা চূর্ণ করে বেটে রস করে এক চামচ করে দুবেলা পান করতে পারেন।


ব্যক্তিগত সতর্কতা


ডেঙ্গু প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সতর্কতার গুরুত্ব অপরিসীম। মনে রাখতে হবে এডিস মশা মূলত দিনের বেলা, সকাল ও সন্ধ্যায় কামড়ায়, তবে রাত্রে উজ্জ্বল আলোতেও কামড়াতে পারে। তাই-


দিনের বেলা যথাসম্ভব শরীর ভালোভাবে কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে, পায়ে মোজ ব্যবহার করা যেতে পারে।


বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট বা পায়জামা পড়াতে হবে।


মশার কামড় থেকে বাঁচার জন্য দিনে ও রাতে মশারী ব্যবহার করতে হবে। দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।


প্রয়োজনে মসকুইটো রিপেলেন্ট, স্প্রে, লোশন বা ক্রিম, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে।


পরিশেষে বলা যায়, ডেঙ্গুজ্বরের মশাটি আমাদের দেশে আগেও ছিল, এখনও আছে, মশা প্রজননের এবং বংশবৃদ্ধির পরিবেশও আছে। তাই ডেঙ্গু জ্বর ভবিষ্যতেও থাকবে। একমাত্র সচেতনতা ও প্রতিরোধের মাধ্যমেই এর হাত থেকে মুক্তি সম্ভব।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com