শিরোনাম
বর্ষায় সুস্থতা নিজের কাছে
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০১৯, ১৫:১৪
বর্ষায় সুস্থতা নিজের কাছে
শাহনাজ শারমিন
প্রিন্ট অ-অ+

জ্যৈষ্ঠের প্রখর তাপদাহের পর প্রকৃতিতে প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয় বর্ষাকাল। বর্ষা অনেকের কাছেই প্রিয় আর ভালোলাগার একটি ঋতু। দিন-রাত কিংবা হঠাৎ হঠাৎ আকাশ কালো হয়ে ঝরে পড়ে অঝোর বৃষ্টি। আর এই বৃষ্টিকে সঙ্গী করেই চলতে হয় কর্মব্যস্ত মানুষদের। তবে বৃষ্টি বলে তো আর ঘরে বসে থাকা যায় না।


কর্মজীবী বা শিক্ষার্থী সবাইকেই বাইরে বের হতে হয় বৃষ্টি মাথায় নিয়ে। বর্ষার এ সময় বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় জামা-জুতা থেকে শুরু করে খাবার-দাবার সব কিছুতেই কেমন যেন একটা ড্যাম ভাব চলে আসে। আর এই সুযোগে শরীরে বাসা বাঁধতে চায় নানা অসুখ-বিসুখ।


কিন্তু হঠাৎ গরমের পরে বর্ষাকাল এলেই আলাদা রোগবালাই, অসুখ-বিসুখ যেমন, সর্দি, কাশি, জ্বর, টাইফয়েড, কলেরা, হজমের সমস্যা, জণ্ডিস, ফুড পয়জনসের রোগগুলো খুব দ্রুত দেখা দেয়। তাই এসময় একটু বাড়তি সচেতনতা মেনে চলা জরুরি।


এই বর্ষাকালীন রোগগুলো থেকে দূরে থাকতে সবসময় উচিৎ সাবধানতা মেনে চলা। তাই বর্ষাকালের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে এই নির্দেশনাগুলো মেনে চলুন:


১. সবার আগে অবশ্যই অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পানি থেকে দূরে থাকুন। বর্ষাকালে শহরাঞ্চলে একটু বৃষ্টি হলেই যেখানে সেখানে পানি জমে যায়, তার সঙ্গে জমে নগরীর সব ধরনের ময়লা আবর্জনা। সেই পানি মাড়িয়ে আমাদের গন্তব্যে যাওয়া আসা করতে হয়। অপরিস্কার এই পানি অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে।


২. এই বৃষ্টির মৌসুমে ম্যালেরিয়া থেকে বাঁচতে হলে আপনার ঘর গৃহস্থালি এবং এর আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার রাখতে হবে। এতে বাতাসবাহিত ও পানিবাহিত ইনফেকশনের কবল থেকে বাঁচা সম্ভব।


৩. বর্ষাকালে দেখা যায় যে হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যায়, আবার হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যায়। অর্থাৎ তাপমাত্রা ওঠানামা করে। যার ফলে যাদের ঠাণ্ডা, অ্যাজমা কিংবা ডায়াবেটিস রোগ আছে, তাদের সমস্যা আরও বেড়ে যায়। তাই এসময়ে অবশ্যই ঠাণ্ডা-গরমে সাবধান থাকতে হবে। ঠাণ্ডা সর্দি কাশি থেকে বাঁচার জন্য নিজেকে গরম ও শুষ্ক রাখুন।


৪. বর্ষাকালে অনেকেরই শ্বাসকষ্টের সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করে। প্রকৃতিতে স্যাঁতসেঁতে ভাব থাকার ফলে অনেক ধরনের ফাঙ্গাস জন্ম নেয়। যেগুলো নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে ঢোকার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হতে পারে। তাই স্যাঁতসেঁতে জায়গাগুলো নিজ দায়িত্বে শুকনো রাখতে চেষ্টা করুন।


৫. এই সময়টাতে রোগবালাই একটু বেশিই হয়। আর সেই রোগ থেকে বাঁচতে নিজের পা এবং পায়ের নখ নখ নিয়মিত পরিষ্কার রাখুন। যাতে করে ময়লা কখনো পা থেকে শরীর পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে।


৬. বর্ষার সময়টাতে বাইরের খাবার থেকে একদম দূরে থাকুন। রাস্তাঘাটে বা খোলামেলা দোকান থেকে কিছু কিনে না খাওয়াই ভালো। এতে করে পেটে গোলমাল হবে, বিপাকক্রিয়া ঠিকমতো হবে না। সবসময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান।


৭. এই সময় নিয়মিত কাপড় শুকায় না বলে ভেজা কাপড়ও কখনো পরবেন না। আর সেই ভেজা কাপড় পরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কোনো স্থানে সময় কাটাবেন না। এতে করে ঠাণ্ডা লাগার বেশ ভয় থাকে।


৮. বর্ষাকালে চারদিকে মশার প্রকোপ অসম্ভব বেড়ে যায়। তাই মশা থেকে দূরে থাকুন। মশাবাহিত রোগ থেকে বাঁচার জন্য মশা তাড়ানোর জন্য সব ব্যবস্থা নিন। ঘুমানোর সময় অবশ্যই মশারি টানাবেন, দিনের বেলা হলেও।


সুষম খাবার খান


বর্ষায় সুস্থ থাকার অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে সুষম বা ব্যালেন্স ডায়েট গ্রহণ করা। কেননা এ সময় শরীরের হজম ক্ষমতা বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই এ সময় খাবার-দাবারের ব্যাপারে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। টাটকা ও ফ্রেশ খাবার খেতে হবে। ক্ষুধা না লাগলে অসময়ে খাবেন না। খাবার জন্য অবশ্যই টাইম মেইনটেইন করুন। খাবার রান্নার সময় হলুদ, মরিচ, ধনিয়া গুঁড়ো ব্যবহার করুন। এসব মশলা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।


প্রচুর পানি পান করুন


গরমকালে ঘাম বেশি হয় বলে শরীর দ্রুত পানিশূন্য হয়। তাই প্রচুর পানি পান করতে হয়। কিন্তু বর্ষাকালেও কেন বেশি পানি পান করতে হবে? উত্তরটা খুব সহজ। গরমকালের মতো বর্ষা মৌসুমেও শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। কিন্তু এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় বাতাসে ভেজা ভাব থাকে। এতে শরীর থেকে ঘাম বেরিয়ে যায় না। কিন্তু শরীরে এক ধরনের ভেজা ভাব বজায় থাকে। তাই এ সময় সুস্থ থাকতে বেশি করে পানি পান করতে হবে। সেই সঙ্গে খেতে পারেন শরবত, তাজা ফলের জুস, লেবুর পানি। ঘরে কিংবা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন সবসময় পানির বোতল সঙ্গে নিন। বাইরের খোলা পানি কখনও খাবেন না। এছাড়া অল্প গরম আদা-চা এ সময় বেশ কার্যকর। এটি শরীরের পানিশূন্যতা রোধে সাহায্য করে।


পরিষ্কার এবং ফ্রেশ খাবার খান


এ সময় বাসি খাবার একদম খাওয়া ঠিক নয়। কেননা এমনিতেই বাসি খাবারে ব্যাকটেরিয়া জন্মায়, তার ওপর বর্ষাকালে এর প্রভাব আরও বেড়ে যায়। অনেকে মনে করেন খাবার ফ্রিজে থাকলে ভালো থাকে। তবে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে সেই খাবারটা আদৌ ভালো থাকে কি-না তা খাবার আগে একবার ভেবে দেখুন। এ সময় মাছ-মাংসের চেয়ে বরং সবজি ও ফলমূল বেশি করে খান। আমাদের দেশে এ সময় বিভিন্ন জাতের প্রচুর দেশি ফল পাওয়া যায়। এ সময় ফল রোগ-বালাই থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে। খাবার আগে যে কোনো সবজি ভালো করে ধুয়ে তারপর রান্না করুন। চেষ্টা করুন প্রতিদিনের খাবার প্রতিদিন রান্না করে খেতে। বাসি খাবার একদম এড়িয়ে চলুন।


আষাঢ়ের বৃষ্টি আর সেই সঙ্গে একরাশ রোগবালাই এই নিয়ে আসে বর্ষা মৌসুম। আর এসময় প্রতিদিনের খাবারে উপরিউক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে রোগবালাই থেকে কিছুটা হলেও পরিত্রাণ মিলবে।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com