আমাদের শরীরের জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিগুলো বেশ কয়েক দশক ধরে নিখুঁতভাবে কাজ করে। এরপর কোনো এক সময়ে এসে সেগুলো গোলমাল করে এবং শরীরে ব্যথা সৃষ্টি করে। কিন্তু কেন?
গবেষকদের অনুমান, অনেক মানুষের শেষ জীবনে যা ঘটে, তার উৎস জীবনের শুরুতেই খুঁজে পাওয়া যায়। এমনকি জন্মেরও আগে, ভ্রূণ অবস্থায়। সেই পর্যায়ে শরীরের মৌলিক কাঠামো গড়ার এক কর্মসূচি চালু থাকে।
ভ্রূণ অবস্থায় আমাদের কঙ্কাল গঠিত হতে থাকে কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি দিয়ে। ধীরে ধীরে সেটি হাড়ে পরিণত হয়। শুধু জয়েন্টের মতো নির্দিষ্ট কিছু অংশে কার্টিলেজ থেকে যায়। সেখানে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। তখন আমরা জন্মানোর পরের অবস্থার জন্য প্রস্তুত হয়ে উঠি। একদিকে হাড়গোড়ের স্থিতিশীল কাঠামো, অন্যদিকে কার্টিলেজের পাতলা স্তরের সমন্বয়ে আমরা অসাধারণ ক্ষমতা অর্জন করি।
কার্টিলেজ অবিশ্বাস্য রকমের স্থিতিশীল। কয়েক শ' কিলোগ্রাম ওজনের চাপ এবং চরম অবস্থাতেও তা অক্ষত থাকেন। কার্টিলেজ তার বিশেষ গঠনের কল্যাণে এমন ক্ষমতা রাখে। কার্টিলেজ আসলে নমনীয় এক পদার্থ, যা পানি, শর্করা প্রোটিন ও কয়েকটি স্তরের কোলাজেন তন্তু দিয়ে তৈরি, যেগুলির ঠাস বা ঘন বুনন সেটিকে স্থিতিশীল করে তোলে।
কার্টিলেজের তন্তুকে সবসময় ভালো অবস্থায় রাখতে হয়। কার্টিলেজের কোষগুলোই সেই কাজ করে। সেগুলো একা অথবা জোড়ায় জোড়ায় তন্তুর ফাঁপা অংশে থাকে এবং নিরলসভাবে তার নবায়নের কাজ চালিয়ে যায়, পুরানো তন্তু ও প্রোটিন চেন প্রতিস্থাপন করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনেক বছর ধরে সেই প্রক্রিয়া ভালোভাবেই চলে। তারপর কিছু মানুষের ক্ষেত্রে আগে অথবা পরে অদ্ভুত একটা ঘটনা ঘটে - জয়েন্টে সমস্যা দেখা দেয়। কোষগুলোই কার্টিলেজের ক্ষতি করতে শুরু করে।
ভ্রূণ অবস্থার কর্মসূচি আবার চালু করে কোষগুলো কার্টিলেজের মধ্যে গঠনের বদলে ক্ষয় ঘটাতে শুরু করে। ফলে শরীরের কিছু কোষের মৃত্যু ঘটে, বাকিগুলো কার্টিলেজের কোষে রূপান্তরিত হয়। সেগুলো কার্টিলেজকে শক্ত হাড়ে পরিণত করে। জয়েন্টের পাশে অস্থিতুল্য শাখা-প্রশাখা সৃষ্টি হয়। ফলে শরীর নড়াচড়া করা কঠিন হয়ে ওঠে। যে কর্মসূচি ভ্রূণ অবস্থায় আমাদের শরীরকে জীবনের জন্য প্রস্তুত করে তোলে, সেটিই আবার আমাদের শক্ত ও স্থবির করে ফেলে।
বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]