শিরোনাম
শিশুর জ্বর কখন স্বাভাবিক আর কখন অস্বাভাবিক?
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৫:৪১
শিশুর জ্বর কখন স্বাভাবিক আর কখন অস্বাভাবিক?
মডেল: সাবিলা সারলিজ সাজ্জাদ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মায়ের কাছে তার সন্তান অমূল্য ধন, অনেক বেশি আদরের। এই আদরের সন্তান যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন সবচেয়ে বেশি কষ্টে খাকেন আর অস্থির হয়ে পড়েন মা-ই। আর তা যদি হয় সদ্য জন্মগ্রহণ করা শিশু তবে চিন্তা বেড়ে যায় আরো বহুগুণ। সাধারণত শরীরে অভ্যন্তরীণ কোন ইনফেকশন দেখা দিলে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। যাকে আমরা জ্বর বলে থাকি।


শিশুর জ্বর


বাচ্চার কপালে হাত দিয়ে বা চুমু খেয়ে যদি মনে হয় বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চাইতে বেশি তবে হয়ত তার জ্বর এসেছে। স্বাভাবিকের চাইতে বেশী তাপমাত্রাকেই আমরা জ্বর বলে থাকি।


সাধারণভাবে জ্বরকে বলা যেতে পারে, ‘শরীরের সংক্রমনের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থার লক্ষণ’। শিশুর তাপমাত্রা সংগ্রহের মাধ্যমে আপনি যেমন করে নিশ্চিত হবেন আপনার সন্দেহ সম্পর্কে আর তেমন করে আপনি এবং আপনার শিশুর ডাক্তার, শিশুর স্বাস্থ্য পুণঃউদ্ধারের সবচেয়ে ভাল পথটি খুঁজে বের করতে পারবেন।


অধিকাংশ ডাক্তার এবং আমেরিকান একাডেমিক অব পেডিয়াট্রিক (এএপি) এর মতে একজন স্বাস্থ্যবান শিশুর স্বাভাবিক শরীরের তাপমাত্রা হতে হবে ৯৭ এবং ১০০.৩ ডিগ্রী ফারেনহাইটের মধ্যে। যদি কখনো আপনার শিশুর মলদ্বারের তাপমাত্রা (rectal temperature ) ১০০.৪ বা তার চাইতে বেশী হয়, তবে ধরে নিতে পারেন সে জ্বরে আক্রান্ত।


তবে বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে জ্বর নিয়ে চিন্তিত হবার কারণ আছে। এই বয়সের বাচ্চাদের জ্বর হওয়াটা স্বাভাবিক না, তাই আপনার জ্বরাক্রান্ত বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।



ক্ষতিকর জ্বরের উপসর্গ সমূহ


কেবল মাত্র তাপমাত্রা পরিমাপের মাধ্যমে এটা নির্ধারণ করা যায় না যে জ্বরটি ক্ষতিকর কিনা।


বয়েস একটি কারণ: তিন মাসের কম বয়েসী শিশুদের জন্য জ্বর ক্ষতিকর।


“অস্বাভাবিক আচরণ” আরেকটি অন্যতম কারণ: জ্বরের মাত্রা বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাচ্চা যদি স্বাভাবিকভাবে খেলাধূলা বা খাওয়া চালিয়ে যায় সে ক্ষেত্রে তেমন একটা বিচলিত হওয়ার কারণ নাও থাকতে পারে।


মনে রাখতে হবে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা বিকেলের শেষভাগে ও সন্ধ্যার আগে বেড়ে যায় এবং মধ্যরাতে ও ভোরের দিকে হ্রাস পায়। আমাদের অভ্যন্তরীণ থার্মোস্ট্যাটের এই স্বাভাবিক চক্রটি ব্যাখ্যা করে যে, শেষ বিকেলে এবং সন্ধ্যার আগে কেন ডাক্তাররা জ্বর সম্পর্কিত বেশিরভাগ ফোন কল পান।


বাচ্চার জ্বর মারাত্মক কি না কিভাবে বুঝবেন?


বাচ্চার জ্বরের সঙ্গে যদি নিচের উপসর্গগুলো থাকে, তাহলে সে সম্ভবত এমন অসুখে আক্রান্ত যেটা ডাক্তারের পরামর্শ দাবি কারে। এগুলো হলো:


বাচ্চা বেশ ঘুমঘুম বা নিদ্রালু বোধ করছে।


বাচ্চা যদি ৮ ঘন্টারও বেশি সময় ধরে খেতে বা পান করতে না চায়। অথবা সে বিগত ২৪ ঘন্টায় নিয়মিত খাওয়া দুধের অর্ধেকেরও কম খাচ্ছে।


বাচ্চার মাথায় নরম কোন জায়গা দেখা যাওয়া, ঠোট শুকনো হওয়া, কালো-হলুদাভ প্রস্রাব এবং অল্প পরিমাণে প্রস্রাব বা পায়খানা করা। এগুলো পানিশূন্যতা নির্দেশ করে।
বাচ্চার গায়ে কোন কারণ ছাড়াই র‌্যাশ উঠা।


বাচ্চার বয়স ৬ মাসের কম হলে বেশ সতর্ক থাকা উচিত, কারণ অল্প বয়সী বাচ্চাদের জন্য জ্বর হওয়া অস্বাভাবিক।


কখন চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন?


আপনার বাচ্চা অসুস্থ হলে আপনিই সবচেয়ে ভাল বুঝতে পারবেন, বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা যাই হোক না কেন আপনি যদি চিন্তিত থাকেন, অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হোন।


শিশুর বয়েস যদি তিন মাসের কম হয়ে থাকে এবং তাপমাত্রা ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট (৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস্) অথবা তার চাইতে বেশী হয়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এমন শিশুদের ক্ষেত্রে, ক্ষতিকর সংক্রমণ বা রোগের জন্য পরীক্ষা করানো আবশ্যক।


আপনার বাচ্চার বয়স ৩ মাস বা তার বেশি হলে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে তাকে কেমন দেখাচ্ছে এবং খেলছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। যদি তাকে ভাল দেখায় এবং সে পর্যাপ্ত তরল গ্রহন করে, তবে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে জ্বর বা খুব বেশী জ্বর না হলে ডাক্তার ডাকার প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত নির্দেশনার জন্য আপনার ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন। উদাহরণস্বরূপ, আপনার ডাক্তার হয়তো আপনাকে বলতে পারেন বাচ্চার জ্বর ১০৪ ডিগ্রী পর্যন্ত পৌঁছালে উপসর্গ নির্বিশেষে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
আমেরিকান একাডেমিক অব পেডিয়াট্রিক (এএপি) এর মতে, যদি শিশু ৩ মাস থেকে ৬ মাস বয়সী হয় এবং তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইট (৩৮.৩ ডিগ্রি সেলসিয়স্) বা তার চেয়েও বেশি হয় অথবা বাচ্চা যদি ৬ মাস বয়সের বেশী হয় এবং তার তাপমাত্রা ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট (৩৯.৪ ডিগ্রী সেলসিয়স্) বা তারও বেশী হয় এবং উপসর্গ হিসাবে ক্ষুধা হ্রাস, কাশি, কান ব্যাথা, অস্বাভাবিক খিটখিটে মেজাজ বা নিদ্রালু ভাব থাকে, বমি বা ডায়রিয়া হয় তবে দ্রুত চিকিৎকের দারস্থ হওয়া উচিত।


এছাড়াও নীচের উপসর্গগুলো দেখা দিলে অবশ্যয় ডাক্তারকে জানাতে হবে-


বাচ্চাকে যদি অতিরিক্ত ফ্যাকাশে বা রক্তশূন্য মনে হয় বা প্রস্রাবের পরিমাণ যদি কমে যায়।


জ্বরের সাথে সাথে যদি বাচ্চার শরীরে ফুসকুড়ি লক্ষ্য করেন যা আরো গুরুতর সমস্যা নির্দেশ করে। এগুলো ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে।


বাল্ব সিরিঞ্জ দিয়ে তার নাক পরিষ্কার করার পরেও যদি আপনার বাচ্চার শ্বাস নিতে (শ্বাস নিতে কষ্ট করতে হয় বা স্বাভাবিকের চাইতে দ্রুত শ্বাস ফেলে) অসুবিধা হয়। তা নিউমোনিয়া বা ব্রংকাইটিসটিসের লক্ষণ হতে পারে।


শিশুকে অসুস্থ দেখালে এবং তার তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কম (৯৭ ডিগ্রী ফারেনহাইট / ৩৬ ডিগ্রী সিলসিয়াস এর কম) হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। খুব অল্পবয়সী শিশু অসুস্থ হলে মাঝে মাঝে তাদের শরীর গরম না হয়ে ঠাণ্ডা হয়ে যায়।


শিশুর বয়েস ৩ মাসের কম হলে, ডাক্তার সম্ভবত আপনাকে শিশুটিকে নিয়ে আসার জন্য বলবেন। তিনি সঠিক তাপমাত্রা না পাওয়া পর্যন্ত আপনার শিশুকে কোন জ্বর-হ্রাসের ঔষধ দিতে মানা করতে পারেন।


যদি আপনার বাচ্চা ৩ মাস বা তার বেশি বয়সী হয় এবং সে যদি স্বাভাবিকভাবে সজাগ থাকে এবং তরল গ্রহণ করে এবং অন্য কোনো উপসর্গ দেখা না দেয়, যা গুরুতর অসুস্থতা বোঝায়, তবে ডাক্তার তাকে আনার আগে ২৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন।
কারণ জ্বর হলো বিভিন্ন রোগের প্রথম উপসর্গ। আপনার শিশুকে খুব তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করা হলে, ডাক্তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু খুঁজে নাও পেতে পারেন।


আপনার বাচ্চার অস্বস্তি বা খারাপ লাগার উপর নির্ভর করে, ডাক্তার বাচ্চাদের জন্য তৈরি অ্যাসিটামিনোফেন (বা আইবুপ্রোফেন, যদি আপনার শিশুটি কমপক্ষে ৬ মাস বয়সী থাকে) দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন।


আপনার বাচ্চার বয়স যাই হোক না কেন, যদি তার লক্ষণগুলো গুরুতর অসুস্থতা বা সংক্রমণের ইঙ্গিত করে, তাহলে ডাক্তার আপনাকে অফিসে (যদি আপনি কাজের সময় কল করেন) বা হাসপাতালের ইমারজেন্সী রুমে চিকিৎসার জন্য আনার পরামর্শ দেবেন।



শিশুর জ্বরের চিকিৎসা


যেহেতু জ্বর ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষার অংশ, তাই কিছু গবেষকের মতে, শরীরের উচ্চ তাপমাত্রা সংক্রমণের বিরুদ্ধে আরও কার্যকর ভাবে কাজ করতে সাহায্য করে। (ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাস ৯৮.৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট / ৩৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় থাকতে পছন্দ করে)।


এছাড়াও, জ্বর সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য আমাদের শরীরকে আরো শ্বেত রক্তকণিকা এবং অ্যান্টিবডি তৈরি করতে বলে।


অন্যদিকে, আপনার বাচ্চার তাপমাত্রা খুব বেশি হলে, তার জন্য খাওয়া, পান করা বা ঘুমানো খুব অস্বস্তিজনক হয়, সুস্থ হওয়া কঠিন হয়ে উঠে। আপনার বাচ্চার জ্বর যদি তার আচরণকে প্রভাবিত না করে, তবে বাচ্চার জ্বর কমানোর জন্য কিছু খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। ডিহাইয়েড্রেশন প্রতিরোধ করার জন্য বুকের দুধ বা ফর্মুলা পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রদান করুন এবং ঘুমানোর সময় বাচ্চাকে অতিরিক্ত পোষাক বা কাপড় পেঁচিয়ে রাখবেন না।
যদি আপনার বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা অতিরিক্ত কাপড় বা গরম আবহাওয়ার কারণে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়, তবে কিছু কাপড় কমিয়ে ফেলুন এবং খোলামেলা এবং ঠাণ্ডা স্থানে তাকে বিশ্রাম বা খেলা করতে দিন। বেশির ভাগ মা-বাবার ধারণা শিশুর জ্বর হলে তাকে সাবধানে রাখতে হবে। তাই তাকে গরমের মধ্যে তারা রাখেন। কিন্তু এর ফল মোটেই ভালো হয় না।


অতিরিক্ত জামা-কাপড় শরীরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে না। বরং এতে শরীরের তাপ আরো বেড়ে যায়। অতিরিক্ত জামা-কাপড়ের জন্য শিশু অস্বস্তি বোধ করবে এবং ঘামতে শুরু করবে। এই ঘাম থেকে শেষ পর্যন্ত শিশুর ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে। তাই আবহাওয়া খুব ঠাণ্ডা না হলে ঘরের জানালা-দরজা বন্ধ রাখার প্রয়োজন নেই। বরং শিশু যাতে আরামে থাকতে পারে তারই ব্যবস্থা করা উচিত।


জ্বরের জন্য ঔষধ


জ্বর যদি আপনার শিশুর জন্য অস্বস্তিদায়ক হয় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আপনি বাচ্চার তাপমাত্রা কমিয়ে আনার জন্য বাচ্চাদের জন্য তৈরি acetaminophen বা ibuprofen ব্যবহার করতে পারেন। (ibuprofen ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের জন্য এবং যেসব বাচ্চা ডিহাইড্রেটেড বা ক্রমাগত বমি করতে থাকে তাদের জন্য সুপারিশ করা হয় না)


আপনার শিশুকে ঔষধ প্রদান করার সময় খুবই সতর্কতা অবলম্বন করুন। তার ওজন অনুসারে সঠিক ডোজ নির্ধারিত হবে। সর্বদা পরিমাপের জন্য ওষুধের সাথে দেয়া পরিমাপকটি ব্যবহার করুন যাতে নিশ্চিত করা যায়, আপনার শিশুকে সঠিক পরিমাণের ঔষধ দেয়া হচ্ছে।


বাচ্চাকে জ্বর কমানোর ওষুধ অতিরিক্তবার দেবেন না। নির্দেশাবলী অনুযায়ী এ্যাসিটামিনোফেন আপনি প্রতি চার ঘন্টা (প্রতিদিন সর্বোচ্চ পাঁচ বার) এবং আইবুপ্রোফেন প্রতি ছয় ঘন্টা (প্রতিদিন সর্বোচ্চ চার বার পর্যন্ত) দিতে পারেন।


আপনার শিশুকে এসপিরিন দিবেন না কারণ অ্যাসপিরিন এর কারণে বাচ্চাদের Reye’s syndrome এ আক্রান্ত হওয়া সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়, এটি বিরল কিন্তু একটি মারাত্মক ব্যাধি।


বেশিরভাগ ডাক্তার শিশুদের জন্য ওভার-দ্য-কাউন্টার কাশি এবং ঠাণ্ডার ওষুধ সুপারিশ করেন না। যদি আপনার শিশু চিকিৎকের পরামর্শ অনুযায়ী এসব ঔষধ নেয়, তাহলে আপনার শিশুকে অন্য কোন ওষুধ যেমন ibuprofen বা acetaminophen খাওয়ানোর আগে চিকিৎকের পরামর্শ নিন। কাশি এবং ঠান্ডার ওষুধে ঐ দুটি ঔষধ বিদ্যামন থাকতে পারে, তাই শিশুর ওষুধের পরিমাণ বেশি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।


যে কোন ধরনের ওষুধ খাওয়ানোর আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।


জ্বরের জন্য স্পঞ্জ বাথ


আপনার বাচ্চার জ্বর কমাতে হালকা গরম পানি দিয়ে স্পঞ্জ করতে পারেন বা হালকা গরম পানিতে গোসল করাতে পারেন। খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা এবং পানির তাপমাত্রা যেন কাছাকাছি হয়। যদি পানির তাপমাত্রা শরীরের তাপমাত্রার চাইতে খুব বেশি কম হয় তবে বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা অনেক দ্রুত হ্রাস পাবে যাতে বাচ্চার খিঁচুনি হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে পারে।


জটিলতা


Febrile seizures বা জ্বর জনিত খিঁচুনি


জ্বরের কারণে কখনো কখনো শিশু বা অল্প বয়েসী ছেলেমেয়েদের Febrile seizures বা জ্বর জনিত খিঁচুনি হতে পারে। এটি ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বেশী দেখা যায়।


জ্বরের পরে যদি খিঁচুনি হয়, তবে কিছু জিনিস খেয়াল রাখতে হবে। যদি খিঁচুনি পাঁচ থেকে ১০ মিনিট হয়, যদি খিঁচুনির পরে সে অজ্ঞান না হয়ে যায়, তাহলে খুব বেশি চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। এতে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন না হয়ে, বাম কাত বা ডান কাত করে তার ঘাড়কে একটু উঠিয়ে দিতে হবে । মুখ দিয়ে কোনো ধরনের নিঃসরণ বের হলে পরিষ্কার করে দিতে হবে। তার শ্বাসনালিটা পরিষ্কার রাখতে হবে। আর যদি খিঁচুনি চলতে থাকে তাহলে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে অথবা হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।
জ্বরের সাথে খিঁচুনি হলে তা ভালো করার সহজ উপায় হলো জ্বর কমানো। কারণ জ্বর কমে গেলে খিঁচুনি বন্ধ হয়ে যায়। তাই জ্বর কমানোর জন্য তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবেন এবং খিঁচুনি যাতে বেশিক্ষণ স্থায়ী না হতে পারে সে জন্য কাছের চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। জ্বর কমানোর জন্য তোয়াল বা গামছা হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে শিশুর দেহ, হাত-পা বারবার স্পঞ্জ করবেন। একই সাথে জ্বরের ওষুধ খাওয়াতে হবে।


খিঁচুনি চলাকালে শিশুকে এক দিকে কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে মুখের লালা গাল দিয়ে বের হয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় মাথার নিচে বালিশ দেবেন না এবং চিৎ করে শিশুকে শোয়াবেন না। কারণ এতে মুখের লালা না বের হয়ে শ্বাসনালিতে ঢুকে যেতে পারে। ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট হতে পারে।


খিঁচুনির সময় দাঁতে দাঁত লেগে গেলে অনেকে শিশুর মুখে চামচ বা অন্য কোনো শক্ত জিনিস দিয়ে দাঁত খোলার চেষ্টা করেন। তাতে শিশুর মুখ বা চোয়ালে আঘাত লাগতে পারে। তাই চামচ বা শক্ত কিছু মুখে দেবেন না; বরং প্রয়োজনবোধে কাপড় বা এ জাতীয় অন্য কিছু মুখে দেয়া যেতে পারে, যাতে দাঁত লেগে জিহ্বা কেটে না যায়।


আবার কোনো কোনো শিশুর জ্বর ছাড়াও খিঁচুনি হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে খিঁচুনির সাথে ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। তবে খিঁচুনি যে কারণেই হোক না কেন, সময় নষ্ট না করে শিশুকে অবশ্যই কাছের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হবে।


বার বার জ্বর আসা


জ্বর কমানোর ঔষধ শরীরের তাপমাত্রা সাময়িকভাবে কমিয়ে আনে। এটি জীবাণুকে প্রভাবিত করে না যা সংক্রামণ সৃষ্টি করে। তাই আপনার বাচ্চা সংক্রমণ থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত আপনার বাচ্চার জ্বর হতে পারে। এটি কমপক্ষে দুই বা তিন দিন থাকতে পারে।


অন্যান্য উপসর্গ ছাড়া জ্বর


যখন কোন শিশুর জ্বর থাকে যার মধ্যে সর্দি, কাশি, বমি বা ডায়রিয়া অনুপস্থিত থাকে, তখন বোঝা কঠিন যে কি সমস্যা। অনেকগুলি ভাইরাল সংক্রমণ রয়েছে যা অন্য কোন উপসর্গ ছাড়াই জ্বর সৃষ্টি করতে পারে। যেমন roseola এর ক্ষেত্রে তিন দিন পর্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে এবং এর পর শরীরের মধ্য অংশের উপর লাল ফুসকুড়ি হতে পারে। আরও গুরুতর সংক্রমণ, যেমন মেনিনজাইটিস, মূত্রনালীর সংক্রমণ, বা ব্যাকটেরিমিয়া (রক্তধারার ব্যাকটেরিয়া), অন্য কোনো নির্দিষ্ট উপসর্গ ছাড়াই উচ্চতর জ্বর সৃষ্টি করতে পারে। যদি আপনার বাচ্চার ১০২.২ ডিগ্রী ফারেনহাইট (৩৯ ডিগ্রী সিলসিয়াস) বা উচ্চতর স্থায়ী (২৪ ঘণ্টার বেশি সময়) জ্বর থাকে, তবে দ্রুত ডাক্তারকে জানান, তার অন্য কোন উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com