দুনিয়া জুড়ে নিন্দুকদের ভাষ্য হচ্ছে, খাবার রান্নার সময় বাঙালি রাঁধুনীরা পুষ্টির চেয়ে স্বাদের বিষয়টাকেই মাথায় রাখেন বেশি। আর তাই খাবারে নানা ধরনের মশলা মেশাতেও কোনো আপত্তি নেই তদের।
খাবার সুস্বাদু করতে মশলা মেশানোর প্রতিযোগিতাটা সেই আদিকাল থেকেই প্রচলিত। কিন্তু তা যখন মাত্রাতিরিক্ত হারে ব্যবহার হয় তখনই ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এই ধরুন রান্না শেষে সামান্য একটি টেস্টিং সল্ট খাবারে মিশিয়ে দিলেই খাবারের স্বাদটা বেড়ে যায় বহুগুন। চীনা যে কোন খাবার তৈরিতে গৃহিণীদের পছন্দ টেস্টিং সল্ট। যেমন: স্যুপ, নুডলস ইত্যাদি। কিন্তু টেস্টিং সল্ট কী তা আমরা কজনই বা জানি?
টেস্টিং সল্ট সর্ম্পকে গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও কনসালটেন্ট পুষ্টিবিদ রেহানা বেগম বলেন, ‘রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি করা যে সব উপাদানের নিজস্ব কোনো স্বাদ বা গন্ধ নেই কিন্তু তাদের সামান্য ব্যবহারে খাদ্যের স্বাদ বহুগুণে বেড়ে যায়। তাদের আমরা কৃত্রিম স্বাদ বর্ধনকারী উপাদান বলে থাকি।
তিনি বলেন, কৃত্রিম স্বাদ বর্ধনকারী উপাদানের মধ্যে টেস্টিং সল্ট বা Monosodium gleitamate হচ্ছে একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বহু বছর ধরে এবং আমেরিকায় প্রায় দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফ্লেভার বর্ধন হিসেবে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার হয়ে আসছে। বর্তমানে Wheat, glenten beet sugar waste এবং soya protein থেকে টেস্টিং সল্ট প্রস্তুত করা হয় এবং Pure crystallized form-এ ব্যবহার করা হয়।’
অবাক করা তথ্য হলো খাবারের স্বাদ বাড়াতে আমরা যে টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করি তার নিজের কোনো পুষ্টিমান নেই। রেহানা বেগম জানান, ‘টেস্টিং সল্টের নিজস্ব কোনো পুষ্টি গুণাগুণ না থাকলেও এটি খাদ্যের গন্ধ এবং স্বাদকে বহুগুণ বৃদ্ধি করতে পারে বলে খাদ্যশিল্পে এটি খুব বেশি ব্যবহার হয়। Glutamate থাকে বিধায় এটি Tingling feeling প্রদান করে এবং স্বাদকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়।’
টেস্টিং সল্টের ব্যবহার সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘টেস্টিং সল্টের উপকারিতার চেয়ে অপকারিতাই বেশি। স্বাদ বাড়াতে ফাস্টফুড, চাইনিজ ফুড এবং বিভিন্ন ধরনের কনফেকশনরি আইটেমে মাত্রাতিরিক্ত টেস্টিংসল্ট ব্যবহার করা হয।
এর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শিশু-কিশোরদের ওপর। টেস্টংসল্টের কারণে বাচ্চাদের ওজন বেড়ে যায়। তাদের স্বাভাবিক মেধা বিকাশ বাধা পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন রোগেও তারা আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন-ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ইত্যাদি। কিশোরীদরে ঋতুস্রাব সমস্যাসহ বন্ধ্যাত্বজনিত সমস্যার কারণও এই টেস্টিং সল্ট।’
একটা মজার তথ্য জানাই, টেস্টিং সল্ট সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতো চীন দেশে। কিন্তু সেখানে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে আমাদের খাদ্যতালিকায় টেস্টিংসল্ট রয়েই গেছে বহাল তবিয়তে। আমাদের এখানে চিপস, চানাচুর ইত্যাদি মুখরোচক খাবারের মূল উপাদানই হচ্ছে এই টেস্টিং সল্ট।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]