শিরোনাম
স্বাস্থ্যকর’ হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিৎ নয়
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০১৮, ১৬:০৩
স্বাস্থ্যকর’ হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিৎ নয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বর্তমানে ডায়াবেটিস বেশ প্রচলিত একটি রোগ। সঠিক খাদ্যাভ্যাস,নিয়মানুবর্তী জীবন এবং ওষুধের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে একটি জরিপ করা হয়, দেশের জনসংখ্যার সাত শতাংশ লোকের ডায়াবেটিস রয়েছে। বর্তমানে সেটি প্রায় ১০ শতাংশ। দেশের সব মানুষের মধ্যে প্রায় দেড় কোটি লোক ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।


এটির প্রার্দুভাব কেন এত দ্রুত বাড়ছে? আমরা আমাদের দেশ নিয়ে চিন্তা করছি। এ দেশে এটি কেন এত বাড়ছে? কিছু খাদ্য, কিছু পারিপার্শ্বিক অবস্থা- সবকিছু মিলিয়ে ডায়াবেটিস হচ্ছে। যাদের পরিবারে ডায়াবেটিস আছে, তারা অবশ্যই চিন্তা করবে আমার ডায়াবেটিস হয়েছে কি না। যারা ইচ্ছামত খাবার খায় তাদের একটি আশঙ্কা থাকে ডায়াবেটিস হওয়ার।


আমাদের দেশের কোনো খাবারে ক্যালোরির পরিমাণ লেখা থাকে না। আসলে আমাদের জীবন যাপনের ধরন এবং খাদ্যাভ্যাস ডায়াবেটিস হওয়ার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রোগটি একদিক দিয়ে যেমন ক্ষতিকর, অন্যদিকে তা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে সুস্থ মানুষের মতোই জীবনযাপন করা সম্ভব।


ভাল ডায়াবেটিক খাবার কি? আপনি ডায়াবেটিস কন্ট্রোলের জন্য যাই খান না কেন, আপনার পুষ্টি চাহিদা আর বাকি সবার মতই। এর জন্য আলাদা কোন খাবার এর প্রয়োজন নেই। কিন্তু খাবার তালিকা আপনাকে বুদ্ধিদীপ্ত ভাবে বাছাই করতে হবে। বিশেষ করে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।


শুরু থেকেই এ ব্যাধি সম্পর্কে সচেতন না হলে পরবর্তীতে নানা জটিলতায় পড়তে হয়। ডায়াবেটিস নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে গেলে তা শরীরের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত স্থুলতাই ডায়াবেটিসের মূল কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মেদ বেশি তারা সহজেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। কাজেই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে স্থুলতা কমানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা বেশি জরুরি।


এমন কিছু খাবার আছে যা সুস্থ মানুষের জন্য ‘স্বাস্থ্যকর’ হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিৎ নয়। যেমন- তরমুজ! জেনে নিন এমন আরো কিছু খাবারের নাম।


ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বড় একটি অংশ হলো খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ। অনেক খাবার সুস্থ মানুষ ইচ্ছেমতো খেতে পারলেও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তা নিষিদ্ধ। বিশেষ করে মিষ্টি খাবার, জাংক ফুড এবং ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাবার থেকে ডায়াবেটিস রোগীদের দূরে থাকা উচিৎ। এমন কিছু খাবার আছে যা সুস্থ মানুষের জন্য ‘স্বাস্থ্যকর’ হলেও ডায়াবেটিস রোগীদের খাওয়া উচিৎ নয়। এগুলো হলো-


সাদা চাল


যত সাদা চালের ভাত খাবেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি তত বাড়বে। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের খাবার খেলে প্রতিদিনই ঝুঁকির মাত্র ১১ শতাংশ হারে বেড়ে যায়। কারণ এই চাল প্রক্রিয়াজাত করে সাদা করা হয়। তাছাড়া এই খাবার চিনির মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে সাদার পরিবর্তে বাদামী চাল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।


ব্লেন্ডেড কফি


ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সিরাপ, সুগার এবং ক্রিম সমৃদ্ধ ব্লেন্ডেড কফি মারাত্মক ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়। কেননা এর ব্লেন্ডেড সংস্করণে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ানোর উপাদান প্রচুর রয়েছে। এক কাপ ব্লেন্ডেড কফিতে ৫০০ ক্যালরি, ৯৮ গ্রাম কার্ব এবং ৯ গ্রাম ফ্যাট থাকে। তাই এর পরিবর্তে নন-ফ্যাট সংস্করণ কফি বেছে নিন।


কিসমিস


কিসমিস এবং অন্যান্য ড্রাই ফ্রুটে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি চিনি থাকে। যেমন এক কাপ আঙুরে থাকে ২৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, অন্যদিকে এক কাপ কিসমিসে থাকে ১১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। ফলে কিসমিস এবং ড্রাই ফ্রুট এড়িয়ে চলা উচিৎ।


তরমুজ


তরমুজে বেশি পরিমানে পানি এবং ফাইবার থাকায় তাকে স্বাস্থ্যকর বলেই ধরা হয়। কিন্তু এতে চিনির পরিমাণ অনেক বেশি, এ কারণে ডায়াবেটিস রোগীদের তা খাওয়া উচিৎ নয়। খেলেও পরিমাণের দিকে নজর রাখা উচিৎ।


আলু


আলু ছাড়া তরকারি রান্নার কথা অনেকে ভাবতেও পারেন না। আলুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ফাইবার, ভিটামিন ই, কপার, ট্রিপ্টোফ্যান, ম্যাঙ্গানিজ এবং লুটেইন। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য তা ভালো নয় কারণ এতে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অনেক বেশি।


আম


আমের মৌসুমে সব বাড়িতেই তা খাওয়া হয় নিয়মিত। কিন্তু এতেও অনেক বেশি পরিমাণে চিনি থাকে, ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের আম না খাওয়াই ভালো।


সফেদা


দেশী ফল সফেদা কেউ পছন্দ করেন, কেউ করেন না। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের সফেদা না খাওয়াই ভালো, কারণ এতে চিনির পরিমাণ অন্যান্য ফলের তুলনায় বেশি।


চাইনিজ খাবার


মুখরোচক হলেও চাইনিজ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। এর বদলে বাড়িতে চাইনিজ খাবার বানিয়ে নিন স্বাস্থ্যকরভাবে, যা আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়াবে না।


পেস্ট্রি


ডোনাট, টোস্ট বা পেস্ট্রির মতো মজার খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। এসব খাবার প্রক্রিয়াজাত সাদা চাল থেকে তৈরি হয় যাতে উচ্চমাত্রার ফ্যাট, কার্ব এবং সোডিয়াম রয়েছে। বরং এসব খাবারের পরিবর্তে বাদামী চালের তৈরি কেক খান। কম চিনি রয়েছে এমন পিনাট বাটার ব্যবহার করুন।


ট্রেইল মিক্স
সংরক্ষণ করা হয় এমন ট্রেইল মিক্সে বাদাম, শুকনো ফল এবং মিল্ক চকলেট রয়েছে। এদের মধ্যে বাদাম ছাড়া বাকিগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হুমকি। তাই এর পরিবর্তে নিম্নমাত্রার কার্বযুক্ত সূর্যমুখীর বীচি, ওয়ালনাট, রোস্টেড পিনাট এবং আলমন্ড দিয়ে ট্রেইল মিক্স বানাতে পারেন। এই মিক্স কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ পাউরুটি দিয়ে খেতে পারেন।


রিফাইন্ড সিরিয়াল


উপাদেয় সিরিয়াল রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সিরিয়ালের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা একেক জনের দেহে একেকভাবে দেখা দিতে পারে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলাই ভালো। এর পরিবর্তে সবজি ও ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। তবে ডিমের কুসুমে কোলেস্টরেল রয়েছে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।


পূর্ণ ননীযুক্ত দুধ


দুধকে আদর্শ খাবার বলে অভিহিত করেন সবাই, কারণ এর পুষ্টিগুণ অনেক। তবে ডায়াবেটিস থাকলে দুধ পান করার ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিৎ। কারণ পূর্ণ ননীযুক্ত দুধে বেশি স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। তা রোগীর স্বাস্থ্য আরও খারাপ করে দিতে পারে। এর বদলে লো ফ্যাটা বা স্কিমড দুধ পান করুন।


ফলের জুস


জুস বা ফলের রসের বদলে আস্ত ফল খান। প্যাকেটজাত ফলের রসে অতিরিক্ত চিনি থাকে যা দ্রুতই ব্লাড সুগার বাড়িয়ে দিতে পারে।


ফ্রেঞ্চ ফ্রাই


এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ মারাত্মক খাবার। একটু বেশি পরিমাণ খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন এটিকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।


চর্বিসমৃদ্ধ মাংস


ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। চর্বিযুক্ত মাংস পুষ্টিকর হলেও এতে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাট রয়েছে, যা এসব রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এর বদলে প্রোটিনসমৃদ্ধ বিন, লেনটিস ইত্যাদি থেকে পারেন। তাছাড়া মাছ ও সামুদ্রিক খাবারও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।


আসলে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের জন্য এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের মূল কিছু জিনিস রয়েছে। একে বলা হয়, ডায়েট (খাদ্যাভ্যাস), ড্রাগ (ওষুধ) এবং ডিসিপ্লিন (নিয়মানুবর্তিতা), একসাথে এই তিনটিকে বলা হয় ডিডিডি।


ডায়াবেটিস রোগীর জন্য হাঁটা সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। সে হাঁটবে অন্তত ৪৫ মিনিটের কিছু বেশি। একটু গতি বেশি রাখতে হবে। যেকোনো সময়ই করতে হবে। তবে নির্দিষ্ট একটি সময়ে। কেউ যদি সকালে সুবিধা বোধ করে, সকালে করতে হবে। কেউ যদি সন্ধ্যায় মনে করে, তখন করতে হবে। আপনার সুবিধামতো একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটবেন। প্রতিদিন কাছাকাছি সময়ে হাঁটলে ভালো হয়। তবে যার অন্য ধরনের সমস্যা আছে, তার হাঁটতে গিয়ে অন্য রোগ বাড়িয়ে ফেললে হবে না। তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com