রাজধানীতে মাত্রা অতিক্রম করেছে শব্দদূষণ। এই মাত্রা মানুষের সহ্য সীমার দ্বিগুণের বেশি। যা জনস্বাস্থ্যে গুরুতর প্রভাব ফেলছে। আর ১৫ বছরের নিচের শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল। কিন্তু পরিবেশ অধিদফতরের গত বছরের জরিপে দেখা যায়, দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে শব্দের মানমাত্রা ১৩০ ডেসিবল ছাড়িয়ে গেছে। যা স্বাভাবিক মাত্রার চাইতে আড়াই থেকে তিনগুন বেশি।
শব্দ দুষণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে আগে উঠে এসেছে রাজধানীর পল্টন, শাহবাগ, ফার্মগেট, মতিঝিল, রামপুরা ও উত্তরাসহ কয়েকটি এলাকার নাম। যানবাহনের হর্ন, ভবনের নির্মাণ কাজ, কল কারখানা ও মাইকিং ও সিগন্যালগুলোতে একসঙ্গে কয়েকশ গাড়ির হর্ন বাজানোকে শব্দ দুষণের প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ।
মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ১২% মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে বলে পরিবেশ অধিদফতরের সাম্প্রতিক জরিপে উঠে আসে। সেইসঙ্গে যোগ হয়েছে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগসহ, ফুসফুসজনিত জটিলতা, মস্তিষ্ক বিকৃতি, স্মরণশক্তি হ্রাস ও মানসিক চাপসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা।
এক্ষেত্রে শিশু ও প্রবীণরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হচ্ছে বলে জানান পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. সুলতান আহমেদ। এক্ষেত্রে নাগরিক সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন তিনি।
শব্দ দূষণ প্রতিরোধের লক্ষ্যে ২০০৬ সালের শব্দদূষণ বিধিমালা প্রণয়ন করা হলেও সেটা রয়েছে শুধু কাগজে কলমে। বিধি অনুযায়ী হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ের সামনে এবং আবাসিক এলাকায় হর্ন বাজানো, মাইকিং করা সেইসঙ্গে সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে জোরে শব্দ সৃষ্টি করা আইনত দণ্ডনীয়। তবে সেই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। শব্দ দূষণের মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পেছনে একেই প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করা হচ্ছে।
২৫ এপ্রিল আন্তর্জাতিক শব্দ সচেতনতা দিবস-২০১৮ উপলক্ষে বুধবার রাজধানীর কলাবাগানে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) ‘ক্রমাগত শব্দ দূষণের মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি: প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
বৈঠকে সংস্থাটি জানায়, রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অফিস এলাকার মতো নীরব জায়গাগুলোও অতি মাত্রার শব্দ দূষণে আক্রান্ত। তারা দিনের বেলায় ঢাকার নীরব জায়গাগুলোতে ৮৩ থেকে ১০৪ ডেসিবল মাত্রার শব্দ পেয়েছে। যেখানে বাংলাদেশ শব্দ দূষণ নীতিমালা অনুযায়ী শব্দের মাত্রা ৫০ ডেসিবলের মধ্যে থাকার কথা।
২০১৭ সালে শব্দ দূষণ নিয়ে একটি সমীক্ষা পরিচালনা করে পবা। সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আবাসিক এলাকায় শব্দের মাত্রা দিনের বেলা ৯২-৯৮ এবং রাতের বেলা ৬৮-৮৩ ডেসিবল। যা আদর্শ মান যথাক্রমে ৫৫ এবং ৪৫ ডেসিবল থেকে অনেক বেশি।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]