শিরোনাম
শরীরের মেদ কমাতে লাইপোসাকশন
প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৬:৪৮
শরীরের মেদ কমাতে লাইপোসাকশন
ডা: সাঈদ আহমেদ সিদ্দিকী
প্রিন্ট অ-অ+

সুস্থ সুন্দর দেহ মানে মেদহীন স্লিম শরীর। তাই সচেতন মানুষ শরীর থেকে বাড়তি মেদ কমানোর জন্য কতভাবেই না চেষ্টা করছে! সকাল বিকাল তারা মাইলের পর মাইল জগিং করছে, ব্যয়বহুল এক্সারসাইজ সেন্টারের ভিড় করছে। মেদ কমানোর জন্য কেউ কেউ ডায়েটিং করেছেন দিনের পর দিন। না খেয়ে শরীর শুকানোর কঠিন সাধনায় রত তারা।


এ রকম পদ্ধতি অবলম্বন করায় তারা সাময়িক ফলও হয়তো পান। শরীর থেকে মেদ ঝরে যায়, ওজন কমে যায়। নিজেকে হালকা মনে হয়। কিন্তু জগিং থেকে বিরত থাকলে, এক্সারসাইজ নিয়মিত না করলে কিংবা আবার অস্বাভাবিক মাত্রায় খাবার গ্রহণ করলে দেখা যায় পূর্বের সেই থলথলে দেহ আবার ফিরে আসে।


আবার এমনও দেখা যায়, এক্সারসাইজ ডায়েটিং ওজনবিরোধী বটিকা সেবনে ওজন কমানোর পর অনেকের দেহের কিছু কিছু স্থানে মেদ এমনভাবে বাসা বেঁধে আছে, সে মেদ সে জায়গা থেকে কিছুতেই তাড়ানো যাচ্ছে না। শরীর স্লিম হওয়া সত্ত্বেও দেহের এ স্থান বিশেষের অতিরিক্ত মেদের কারণে দেহের আকার-আকৃতি হয়ে গেছে অসুন্দর, অস্বাভাবিক, বিদঘুটে, বিরক্তিকর।


সজীবের বয়স ২৯। একটি বিদেশী ব্যাংকের আকর্ষণীয় বেতনের এক্সিকিউটিভ। সে দেখতে ভালো, স্বাস্থ্য চমৎকার। কিন্তু অতিরিক্ত মেদের জন্য তার তলপেট এতটাই বেঢপ আকৃতির ছিল যে, সে ইন করে শার্ট পরতে পারে না। কিন্তু সে ভেবে পাচ্ছিল না কী করবে! ব্যায়াম-ডায়েটিং করেও তার পেটের এ মেদের স্তূপ দূর করতে পারছিল না। অথচ আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুযোগ গ্রহণ করে সজীব খুব সহজেই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারে। ‘লাইপোসাকশন’ পদ্ধতিতে তার পেটের এ অতিরিক্ত মেদ অপসারণ করে পেটের সুন্দর স্বাভাবিক রূপ ফিরিয়ে আনা যায় অনায়াসে।


লাইপোসাকশন কী


শরীরের অতিরিক্ত মেদ সার্জিক্যাল উপায়ে অপসারণের সর্বাধুনিক পদ্ধতি এটা। অভিজ্ঞ সার্জন ধাতব নল চামড়ার নিচে প্রবেশ করিয়ে দেহের নির্দিষ্ট স্থানের মেদ স্তরকে ভেঙে ফেলেন এবং সাকশন যন্ত্রের সাহায্যে সেই মেদ বের করে আনেন। ১৯৭০ দশকের শেষদিকে সর্বপ্রথম ফ্রান্সে এ পদ্ধতিতে দেহ থেকে মেদ অপসারণ শুরু হয়। ১৯৮১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ সারা বিশ্বের প্লাস্টিক সার্জনরা লাইপোসাকশন পদ্ধতির ব্যাপক প্রয়োগ শুরু করেন। ইদানীং উন্নত বিশ্বে লাইপোসাকশন হচ্ছে প্লাস্টিক সার্জারির সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই দুই লাখের বেশি রোগী প্রতি বছর লাইপোসাকশন করাচ্ছেন।


শরীরে কোন স্থানে লাইপোসাকশন করা যায়


দেহের আকার-আকৃতিকে সুন্দর সুদর্শন করে তোলাই লাইপোসাকশনের উদ্দেশ্য। পেট, নিতম্ব, উরু, মুখ, ঘাড়, বাহু, কোমর, হাত-পা ও গলাসহ যেকোনো জায়গা থেকে মেদ সরিয়ে দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা যায়। পুরুষদের বাড়তি স্তনের কারণে অনেকে বাসার ভেতরেও জামা পরে থাকতে বাধ্য হয়। এরা গেঞ্জি পরেও মানুষের সামনে আসতে লজ্জা পায়। লাইপোসাকশনের মাধ্যমে এ বাড়তি স্তনকে স্বাভাবিক আকৃতিতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।


অপারেশনের তুলনায় লাইপোসাকশন পদ্ধতি অতি সহজ ও জটিলতামুক্ত। তাই এ ধরনের সমস্যার জন্য এখন আর ওপেন অপারেশন প্রয়োজন হয় না।


কে লাইপোসাকশনের উপযুক্ত রোগী


সাধারণভাবে মোটামুটি ওজন এবং স্বাভাবিক ত্বকের গুণাগুণসম্পন্ন যে কেউ এ পদ্ধতিতে তার দেহের মেদ অপসারণ করে দেহের আকার-আকৃতি স্বাভাবিক করতে পারেন। স্বাভাবিক ত্বকের বৈশিষ্ট্য হলো মেদ অপসারণের পরে নিজস্ব স্থিতিস্থাপকতার গুণে তা আবার টান টান হয়ে যায়। তাই লাইপোসাকশনের পর চামড়া ঝুলে যাওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। তাই স্বাভাবিক ত্বকের যেকোনো বয়সের যেকোনো ব্যক্তি লাইপোসাকশন করাতে পারেন।


অপসারিত মেদ কি আবার জমা হবে?


না, এ সম্ভাবনা একেবারেই নেই। জন্মগ্রহণের সময় যে পরিমাণ মেদ কোষ নিয়ে মানুষ পথিবীতে আসে, তার সংখ্যা নির্দিষ্ট। তাই কোনো স্থান থেকে একবার লাইপোসাকশন করে মেদ সরালে সেখানে পুনরায় মেদ কোষ বাড়তে পারে না। তবে অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া-দাওয়ার ফলে শরীরের অন্যান্য অংশে চর্বি জমতে পারে। কিন্তু যেখানে লাইপোসাকশন করা হয় সেখানে মেদ আর কোনোদিনই জমা হতে পারে না। তাই অপসারিত মেদ বিদায় নেয় চিরদিনের জন্য।


ঝুলেপড়া বিশাল বপুদের খবর


শুধু লাইপোসাকশন করে এ বিরাট ভুঁড়িওয়ালাদের ঝুলেপড়া পেট টান টান সমতল করা সম্ভব নয়। তাদের জন্য উপযোগী ‘এবডোমিনোপ্লাস্টি’ অপারেশন। এ অপারেশনে পেটের ঝুলে পড়া চামড়া আর পেটের মেদ অপসারণ করে পেটের মাংস প্লাইকেশনের মাধ্যমে টান টান করে দেয়া হয়। ফলে তারা ফিরে পায় মসৃণ সমতল ভুঁড়িবিহীন পেট।


লাইপোসাকশনের বিশেষ উপকারিতা


যদিও লাইপোসাকশনের মূল উদ্দেশ্য দেহের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এ অপারেশনের ফলে রক্তে উপকারী চর্বিকণা এইচডিএলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে আসে। একই সাথে হ্রাস পায় ‘হার্ট অ্যাটাক’ ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্রাকশনসহ’ স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা। ডায়াবেটিক রোগীদের এ অপারেশনের পর অনেক সময় কম পরিমাণ ইনসুলিন নিতে দেখা গেছে।


চিকিৎসক হিসেবে অভিজ্ঞতা


যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে ফেরার পর আমি ৭২, সাত মসজিদ রোড, ধানমন্ডিতে অবস্থিত কসমেটিকস সার্জারি সেন্টারে লাইপোসাকশন ও অন্যান্য কসমেটিক সার্জারি নিয়মিত শুরু করি। গত কয়েক বছরে শত শত রোগীর লাইপোসাকশন করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ মহিলা, যারা দেহের বিভিন্ন অংশ থেকে লাইপোসাকশনের মাধ্যমে মেদ কমিয়ে সুন্দরীদের দলে নাম লিখিয়েছেন। পুরুষ রোগীদের অনেকে পেটের মেদ অপসারণ করে ভুঁড়ি কমিয়েছেন। পেট মসৃণ সমতল করেছেন। বেশ কিছু পুরুষ তাদের বাড়তি স্তনের চিকিৎসা করিয়ে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হয়েছেন। প্রত্যেকের বেলায় বিশ্বের সর্বাধুনিক টিউলিপ লাইপোসাকশন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে, যেটা সহজ ও নিরাপদ।


শেষ কথা


লাইপোসাকশনে কোনো কাটা-ছেঁড়ার দরকার নেই। এজন্য চামড়ার আধা ইঞ্চিরও কম ফুটো করা হয়। আর লাইপোসাকশনের পর হাসপাতালে থাকারও দরকার নেই। সকালে লাইপোসাকশন করে বিকেলে বাসায় চলে যেতে পারে। রোগী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক কাজে ফিরে যেতে পারে। মেদ অপসারণ স্থানে কিছুদিনের জন্য শক্ত শক্ত ভাব অনুভূত হতে পারে। তবে কিছুদিনের মধ্যে তা স্বাভাবিক হয়ে যায়।


বিদেশের তুলনায় আমাদের দেশে লাইপোসাকশন খুব ব্যয়বহুল ব্যাপার নয়। প্রায় সবার ক্ষমতার মধ্যেই শরীরের বাড়তি মেদ অপসারণের এ সর্বাধুনিক পদ্ধতির ব্যয়।


লেখক : প্লাস্টিক সার্জন, ধানমন্ডি, ঢাকা


বিবার্তা/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com