ইবনে সিনায় সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যু
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ২৩:০০
ইবনে সিনায় সিজারের পর প্রসূতির মৃত্যু
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে সিজার করতে এসে এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের অভিযোগ, কর্তব্যরত চিকিৎসকের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলি সাহা (২৫) নামে ওই রোগীর মৃত্যু হয়েছে।


২০ মার্চ, বুধবার এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।


এর আগে মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিকাল ৪টায় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পলিকে মৃত ঘোষণা করে। পরে তাকে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে স্বামীর বাড়িতে সৎকার করা হয়।


জানা যায়, সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুরে স্ত্রী পলিকে প্রসবজনিত সিজার করাতে ইবনে সিনা হাসপাতালে আসেন স্বামী আশীষ রায় মুন্না। সিজারের মাধ্যমে পলি পুত্রসন্তান প্রসব করেন। এরপর মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় পলি সাহাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।


পলির চাচা সুবীর সাহা বলেন, সোমবার দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে পলির সিজার করা হয়। চিকিৎসক আমাদের জানান, রোগী এবং নবজাতক ভালো আছে। বিকাল ৫টায় পলিকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নিয়ে আসা হয়, তখনও চিকিৎসক জানান, রোগী ভালো আছে, তবে কিছুটা ব্লিডিং (রক্তপাত) হচ্ছে।


তিনি বলেন, সন্ধ্যা ৭টা থেকে সাড়ে ৭টার দিকে যে চিকিৎসক সার্জারি করেছেন, তিনি এসে দেখেন এবং রোগীর জন্য এক ব্যাগ রক্ত লাগবে বলে জানান। রাত ৯টায় আমরা ফের রোগীর অবস্থা জানতে চাই, তারা জানান রোগীর ব্লিডিং আগের চেয়ে কমেছে, আপাতত শঙ্কা নেই। এভাবেই রাত একটা পর্যন্ত সময় গড়ায়। পরে চিকিৎসকরা জানান, ব্লিডিং কমে গেছে। তবে ব্লাড প্রেশার নিয়ে চিন্তিত। এরপর রাতে আর আমাদেরকে রোগীর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি।


তিনি আরও বলেন, যে চিকিৎসক সার্জারি করেছিলেন, তিনি পলির স্বামীকে ফোন করে বলেন, রোগীর অবস্থা ধীরে ধীরে খারাপ হচ্ছে, আইসিইউতে নিতে হবে। এর ১০ মিনিট পর তিনি আবার আমাকে বলেন, রোগীর ব্লিডিং ইন্টারনাল কোথাও হচ্ছে কি না, সেটা দেখতে আরেকটা সার্জারি করতে হবে। তখন রোগীর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। অক্সিজেন ও হার্টবিট পাচ্ছিল না। ওই অবস্থায় তাকে আবার নতুন করে সার্জারি করা হয়। সমস্যার বিষয়ে জানতে চাইলে চিকিৎসকরা জানান রোগীর জরায়ু কাজ করছে না, এজন্য ব্লিডিং হচ্ছে। তাকে বাঁচাতে হলে জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। তারপর আমরা সম্মতি দিলে তার জরায়ু কেটে ফেলা হয়। একপর্যায়ে মঙ্গলবার দুপুর ১টায় পলির স্বামীকে জানায় পেশেন্টের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, আমাদের আর কিছুই করার নেই। সবশেষে বিকাল ৪টায় পলিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।


এ বিষয়ে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাসপাতালটির প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. শারমিন মাহমুদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।


অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার বিষয়টি অস্বীকার করে ইবনে সিনা হাসপাতালের কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন বলেন, রোগীর অবস্থা এমন একটা পর্যায়ে ছিল যে তাকে বাঁচাতে হলে তখন জরায়ু কাটা ছাড়া অন্য কোনো উপায় ছিল না। সে সময় রোগীর স্বামীর মৌখিক এবং লিখিত সম্মতি নিয়ে জরায়ু কাটা হয়। মূলত রোগীর ব্লিডিং বন্ধ করার জন্য চিকিৎসকদের আর কিছুই করণীয় ছিল না। সুতরাং এখানে অপারেশন করতে গিয়ে জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে; এটা পুরোপুরি ভুল অভিযোগ।


জানতে চাইলে কল্যাণপুর ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের এডমিনের সিনিয়র এজিম মোহাম্মাদ নুরে আলম সবুজ বলেন, রোগীর স্বজনদের অভিযোগ আমলে নিয়ে আমরা পলি সাহার স্বামী মুন্না, অভিযুক্ত চিকিৎসক শারমিন মাহমুদ ও মেডিকেল পরিচালক ডা. ব্রিগেডিয়ার পারভেজ কবিরকে নিয়ে সামনাসামনি বসেছি। সিজার করার ক্ষেত্রে তাদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে এবং ধাপে ধাপে চিকিৎসা করা হয়েছে। এতে কোনো অবহেলা পরিলক্ষিত হয়নি।


মোহাম্মাদ নুরে আলম আরো বলেন, তাদের অভিযোগের বিষয়ে আমরা একটা তদন্ত কমিটি করেছি। এছাড়া অভিযুক্ত চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা ইবনে সিনা কর্তৃপক্ষ নেবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা বিষয়টা দেখব।


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com