শিরোনাম
যে কারণে শহরের মেয়েরা দ্রুত ‘বড়’ হয়ে যাচ্ছে
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৬, ১১:৫৫
যে কারণে শহরের মেয়েরা দ্রুত ‘বড়’ হয়ে যাচ্ছে
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ইদানিং শহরের মেয়েদের বয়ঃসন্ধিকালের শারীরিক পরিবর্তনগুলো একটু আগেই আসছে। বিষয়টা সম্প্রতি অনেক অভিভাবককে ভাবিয়ে তুললেও কেউ কেউ মনে করছেন এটা স্বাভাবিক ঘটনা।


তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাকে স্বাভাবিক ভাবার কোন কারণ নেই। কারণ এত অল্প বয়সে শারীরিক পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার মতো শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি কোনটাই থাকে না মেয়েদের। কিন্তু তারা বাধ্য হচ্ছে, যা তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলছে। তবে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্ত গ্রামের মেয়েরা।


অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজিস্টরা বলছেন, বয়ঃসন্ধিকালে মেয়েদের শরীরে প্রকৃতিগতভাবেই নানা পরিবর্তন আসে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল মেনস্ট্রুয়েশন। সেই সঙ্গে রয়েছে ব্রেস্ট ডেভলপমেন্ট। কিন্তু বয়ঃসন্ধি অর্থাৎ শরীরে যে পরিবর্তনগুলি ১৩ বছর বা তার পর থেকে আসার কথা সেই সব পরিবর্তনগুলি যদি তার বহু আগে চলে আসে, তখন সেগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটা বেশ কষ্টকর হয়ে ওঠে একটি বাচ্চা মেয়ের পক্ষে।


কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে শহুরে মেয়েদের রজঃস্রাব এখন ৮ থেকে ৯ বছর বয়সেই হয়ে যাচ্ছে। এটাকে বলে অকাল বয়ঃসন্ধি বা প্রিকশাস পিউবার্টি। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, জেনেটিক্যালি মডিফায়েড খাদ্য গ্রহণ, বদলে যাওয়া জীবনযাপন নানা কিছুই এর জন্য দায়ী। তাদের মতে অকাল বয়ঃসন্ধির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে নানা সমস্যা। শারীরিক অস্বস্তি ছাড়াও প্রিকশাস পিউবার্টির জন্যে মেয়েদের মধ্যে অনেক সময়েই মানসিক কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এর প্রধান কারণ হল, শারীরিক এই সব পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে গেলে মানসিকভাবে যতটা পরিণত হওয়া উচিত তা এত কম বয়সে হওয়াটা সম্ভব না।


ভারতের মথুরার নয়াতি মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের অবস্টেট্রিক্স অ্যান্ড গাইনিকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. বর্না বেনুগোপাল রাওয়ের মতে, জীবনযাপনের ধরন, পরিবেশদূষণ এবং অন্য বেশ কয়েকটি কারণ এই অকাল পিউবার্টির জন্যে দায়ী। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কারণগুলি হলো:


● বাচ্চাদের মধ্যে ওবিসিটি বা স্থুলতার মাত্রা বেড়ে যাওয়া। এর জন্যে দায়ী খাবারের অভ্যাস এবং বদলে যাওয়া জীবনযাপন। অতিরিক্ত ফাস্টফুড নির্ভরতা, ঘুম কম হওয়া এবং শরীরচর্চার সুযোগ না থাকায় বাচ্চারা স্থুলতার শিকার হচ্ছে।


● কৃত্রিম হরমোন এবং অ্যান্টিবায়োটিক দেয়া পোলট্রির খাবার যেমন মাংস, ডিম। জেনিটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার করা শাকসবজি এবং শস্য গ্রহণ।


● প্লাস্টিকে সিন্থেটিক রাসায়নিক বিসফেনল এর উপস্থিতি।


● অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহৃত ফল, সবজি, শস্য খাওয়া।


● ছোট থেকেই খুব চাপের মধ্যে জীবন কাটানো, বাড়ির পরিবেশ সুস্থ স্বাভাবিক না হওয়া।


● প্রেগনেন্সি এবং প্রেগনেন্সি পরবর্তী সময়ে যে সব মায়েরা অত্যধিক ডায়েট করে থাকেন তাদের ইউটেরাসের ফাইটোইসট্রোজেন এক্সপোজার বেশি হয়, যা ভ্রূণের ক্ষতি করে।


● এখন বেশির ভাগ সময়ই সাধারণ যে পানি সরবরাহ করা হয় তার মধ্যে ফ্লুরাইড মেশানো হয়। এই ফ্লুরাইড শরীরে মেলাটনিনের সঞ্চলন কমিয়ে দেয় যার ফলে অকাল বয়ঃসন্ধি হয়।


মুক্তির উপায়


● সন্তানকে মায়ের দুধ থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।


● অর্গানিক খাবার এবং অর্গানিক মাংস খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।


● তাজা খাবার খান। প্রসেসড এবং প্যাকেটজাত খাবার এড়িয়ে চলুন।


● প্লাস্টিক পাত্রের বদলে কাচের পাত্রে খাবার রাখুন।


● যে সব দুধ এবং অন্যান্য ডেয়ারি প্রডাক্টে জেনিটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড রিকম্বিন্যান্ট বোভাইন গ্রোথ হরমোন থাকে সেই সব খাবার এড়িয়ে চলুন। অর্থাৎ, গ্রোথ হরমোন (যা দ্রুত শরীরের বৃদ্ধি ঘটায়) সমৃদ্ধ খাবার এড়িয়ে প্রাকৃতিক খাদ্যের দিকে জোর দিন।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com