শিরোনাম
‘করোনা আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা লাগে না’
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২০, ২০:৩৮
‘করোনা আক্রান্ত ৮০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা লাগে না’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের ৮০ শতাংশের কোনো চিকিৎসার ‘প্রয়োজন হয় না’।


দেশে নভেল করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানাতে শুক্রবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে তিনি একথা বলেন।


জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা আক্রান্তের ৮০ শতাংশের বেশি কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অন্যদের অক্সিজেন সাপোর্ট ও কিছু ওষুধ লাগতে পারে।’


মন্ত্রীর এই কথায় সায় দিয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘আক্রান্তদের শতকরা ৩২ ভাগের হাসপাতালে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না। বিভিন্ন কারণে তাদের হাসপাতালে যেতে হয়। সামাজিক কারণে তারা বাড়িতে থাকতে পারেন না বলে হাসপাতালে যেতে হয়েছে।


“একজন রোগী যদি বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাতে উৎসাহ প্রদান করেছে। ওই রোগী হোম আইসোলেশনে থাকবেন স্ট্রিকটলি, উনি একটি ঘরের মধ্যে থাকবেন, তার সাথে অন্য কারো যাতে মেলামেশা না হয়, সে বিষয়টি তিনি নিশ্চিৎ করবেন। রোগীর আইসোলেশনে যদি প্রতিবেশী ও বন্ধুরা সহযোগিতা করি তাহলে কিন্তু ওই রোগীর জন্য ভালো।”


রোগীর ‘হোম আইসোলেশন’ নিশ্চিত করা গেলে সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য তা ভালো হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘যাদের হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন নেই, যাদের মৃদু লক্ষণ-উপসর্গ রয়েছে অথবা এক দিনের মধ্যে সেটি ভালোও হয়ে গেছে, তাদের হাসপাতালে পাঠালে হাসপাতালের উপর কিন্তু একটা চাপ পড়ে। তখন আসলেই যাদের হাসপাতালে পাঠানো প্রয়োজন তাদের জন্য তা কঠিন বা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।’


‘হোম আইসোলেশনে’ থাকা রোগীদের স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে চিকিৎসা বিষয়ে করণীয় জেনে নেয়ার পরামর্শ দেন আইইডিসিআর পরিচালক।


করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক মঈন উদ্দিন যখন বেশি অসুস্থ হয়েছিলেন, তখন সিলেট ভেন্টিলেটর সাপোর্টসহ করোনা কেয়ার ইউনিট ও আইসোলেশন সেন্টার না থাকার বিষয়টি সামনে চলে আসে। তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের।


এর জবাব দিতে গিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, ‘আইসিইউ, ভেন্টিলেটর নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে। প্রস্তুতি নিয়ে হচ্ছে। এ ব্যবস্থা প্রতিনিয়ত উন্নত হচ্ছে। ভেন্টিলেটর দেয়া হয় মুমূর্ষু রোগীদের। ইউরোপে আইসিইউর গড় প্রায় ৪ শতাংশ বা তারও অধিক। তাদের বয়স্ক জনসংখ্যা বাংলাদেশের তুলনায় বেশি।


“বাংলাদেশের বর্তমান জনসংখ্যার ষাটোর্ধ্ব প্রায় ৭ শতাংশ, যা বর্তমানে আমাদের দেশের জন্য আশির্বাদ। বর্তমানে সব হাসপাতালে ট্রিটমেন্ট গাইড দেয়া হয়েছে।”


বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মধ্যে মারা গেছেন ৭৫ জন, আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৫৮ জন।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই পরিসংখ্যান দিলেও বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্তদের মৃত্যু হার অন্য দেশের তুলনায় কম নয়। বাংলাদেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১ হাজার ৮৩৮ জন। বৈশ্বিক মহামারীতে রূপ নেয়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশে কেড়ে নিয়েছে ৭৫ জনের প্রাণ, যেখানে আক্রান্তদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন মাত্র ৫৮ জন।


মন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, করোনাভাইরাস আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য সারা দেশে সব সরকারি হাসপাতালে এখন আইসোলেশন শয্যা রয়েছে নয় হাজার, আইসোলেশন সেন্টার রয়েছে ৫০০টি।


যেসব বেসরকারি হাসপাতাল কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে সেগুলোতে এক হাজার আইসোলেশন শয্যা হবে বলে জানান তিনি।


চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম-পিপিই নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পিপিইর সঙ্কট নেই। পিপিই তৈরি করতে সময় লেগেছে কারণ পিপিইর কাঁচামাল দেশে ছিল না, রফতানি বন্ধ ছিল এবং প্রস্ততকারকও তেমন ছিল না।


জাহিদ মালেক বলেন, ‘আমরা আস্তে আস্তে প্রস্তুতকারক তৈরি করেছি। আমরা প্রায় ১ লাখ পিপিই সারা বাংলাদেশে প্রতিদিন দিচ্ছি। এই সক্ষমতা আমরা অর্জনকরেছি।’


স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাতে এখন ৩ লাখ ৯৬ হাজার ১৫২টি পিপিই মজুদ রয়েছে বলে জানান তিনি।


দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরইমধ্যে করোনাভাইরাস টেস্টের ২০টি ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে বলে জানান জাহিদ মালেক।


তিনি বলেন, ‘এই ২০টি ল্যাব এত সহজে স্থাপিত হয় নাই। আমাদের জানা ছিল না কতগুলো ল্যাব লাগতে পারে। এই ল্যাবগুলো অন্য দেশ থেকে আমদানি করে আনতে হয়। যেখানে আমদানি বন্ধ ছিল, আমরা বিভিন্নভাবে, বিভিন্ন উপায়ে ল্যাবগুলো স্থাপন করেছি।’


সারা দেশে কোভিড-১৯ রোগীদের পরীক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হলেও রোগীরা তাতে আগ্রহ দেখান না বলে মন্তব্য করেন জাহিদ মালেক।


তিনি বলেন, ‘সমস্যা হলো- রোগীরা টেস্ট করতে আগ্রহ প্রকাশ করে না, গোপন করে যায়। ফলে অনেক চিকিৎসক এতে আক্রান্ত হয়েছেন। এই আচরণ আশঙ্কাজনক। আমি আহ্বান করব, বেশি করে টেস্ট করুন। নিজে সুস্থ থাকুন এবং করোনাভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দিন।’


করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় দেশে প্রায় অর্ধশতাধিক জেলা ‘লকডাউন’ করা হলেও তাতে জনগণের সায় মিলছে না বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।


তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বেশি সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন, যার মাধ্যমে লকডাউনকে আরো কার্যকর করা যায়। বিভিন্ন স্থান বিশেষ করে হাটবাজার, দোকানে ঘোরাফেরা করে সংক্রমণ বৃদ্ধি করা হচ্ছে। রিকশা ও অন্যান্য যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। ত্রাণ বিতরণেও জনগণ আক্রান্ত হচ্ছে। এ সমস্ত কারণে ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।’


রাজধানীর উত্তরার কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও মহাখালীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, ফুলবাড়িয়া এলাকার রেলওয়ে হাসপাতাল ও নয়াবাজারের মহানগর জেনারেল হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে।


এছাড়াও মুগদা জেনারেল হাসপাতাল, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং মিরপুরের লালকুটি হাসপাতালকেও কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগীদের জন্য নির্দিষ্ট করা হচ্ছে বলে জানান মন্ত্রী।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, সব বিভাগীয় হাসপাতালে আইসিইউসহ ২০০ শয্যা কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আর জেলা শহরে হাসপাতালের ৫০ থেকে ১০০ শয্যা ইতোমধ্যে প্রস্তুত হয়েছে।


ঢাকার বেসরকারি ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০০ শয্যা এবং আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২০০ শয্যা তৈরি রয়েছে বলেও জানান তিনি।


ঘরবন্দি অবস্থায় নাগরিকদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেতে পারে মন্তব্য করে জাহিদ মালেক টিভি চ্যানেলগুলোতে বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বেশি করে প্রচারের পরামর্শ দেন। ‘তাহলে তাদের মানসিক চাপ কমবে বলে আশা করি,’ বলেন তিনি।


বিবার্তা/জাহিদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com