শিরোনাম
‘আপনি তো হাসপাতালে কাজ করেন, বাসায় আসবেন না’
প্রকাশ : ১৭ এপ্রিল ২০২০, ২০:৩৪
‘আপনি তো হাসপাতালে কাজ করেন, বাসায় আসবেন না’
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী, চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবীদের প্রতি মানুষের আচরণ এক ভিন্ন সংকট তৈরি করেছে দেশে। আক্রান্ত অনেক রোগী ও তাদের পরিবারকে সামাজিকভাবে একঘরে হতে দেখা যাচ্ছে আবার রোগীর সেবার নিয়োজিত অনেক স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক এবং স্বেচ্ছাসেবীদের সমাজে অমানবিক আচরণেরও শিকার হতে দেখা যাচ্ছে।


সারা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে ডাক্তার নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রশংসিত হচ্ছেন বাহবা পাচ্ছেন কিন্তু তার অনেকটা উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। এখানে করোনাভাইরাস নিয়ে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী এবং চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা সমাজে তারা স্বাদরে গৃহীত হচ্ছেন না।


পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দু'জন চিকিৎসক বিবিসি বাংলাকে তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এরমধ্যে একজন চিকিৎসক সরাসরি কোভিড-১৯ রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন যিনি এখন কোয়ারেন্টিনে আছেন।


ওই চিকিৎসক জানান, তিনি নিজে যেমন হতাশ তেমনি তার সঙ্গে কাজ করা সেবিকাদের কেউ কেউ বাড়ীওয়ালাদের কাছ থেকে অমানবিক আচরণের শিকার হয়েছেন।


তিনি বলেন, কিছু সিস্টারদের তাদেরকে বাড়িওয়ালার বলেছেন যে আপনি তো ওই হাসপাতালে কাজ করেন আপনি বাসায় আসবেন না। এধরনের একটা মনোভাব তারা দেখায়।


নিজের অভিজ্ঞতাও খুব একটা সুখকর নয় উল্লেখ করেন এ চিকিৎসক জানান তাদেরকে যেখানে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে সেখানে রাখতেও রাজী হচ্ছিলেন না সরকারি লোকজনই।


তিনি আরো বলেন, দেখা যাচ্ছে আমাদেরকে নিয়ে একটা স্টিগমা তারা মনের মধ্যে রেখে দিছেন। যেন আমরাও আক্রান্ত। বাড়ি থেকে খাবার এনে দিলে গেট পর্যন্ত গিয়ে আনতে গেলেও শোনা যাচ্ছে আনসারদের বলা হয়েছে ওনারা যেন গেইট পর্যন্ত না আসে। বাস্তবে তাদের কেউ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত না হলেও প্রতিনিয়ত এমন নানা মন্তব্যের শিকার হতে হচ্ছে।


করোনাভাইরাস নিয়ে যারা কাজ করছেন তারা যথাযথ সুরক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। বাড়তি সতর্কতার জন্য আলাদা থাকছেন। তবে বিদেশে যারা করোনা রোগীদের সেবায় কাজ করছেন তাদের প্রতি ৫ দিন পর পর টেস্ট করা হয়।


বাংলাদেশে যেহেতু কিটের স্বল্পতা তাই এই ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। তাই বলা যায় যারা কাজ করছেন, সেবার মানসিকতা নিয়েই কাজ করছেন। কিন্তু বিদেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের এই ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা নিয়ে ব্যাপক প্রশংসা করা হয়। নিজ দেশে সেটা না পেয়ে হতাশ হয়ে যাচ্ছেন তারা।


ওই চিকিৎসক আরো বলেন, আমরা যে মানসিকতা নিয়ে কাজটা করতেছি আমাদেরকে যদি এই মোটিভেশনটা দেয়া না হয় তাহলে দেখা যাবে আমরা কাজ করাই ছেড়ে দিব। আমার মনের মধ্যে একটা ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে যে না, মানুষজন তো আমার ফিলিংসটা বুঝতেছে না।


অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে এ চিকিৎসক বলেন, আমি আজকে ঘরের থেকে বাইরে ২১দিন হয়ে যাচ্ছে। আমি আমার ঘর ছেড়ে ফ্যামিলি মেম্বার ছেড়ে বাইরে আছি, সেক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবেশ যদি তৈরি হয় তাহলে অবশ্যই আমরা মানসিকভাবে বিষণ্ণ হই, হতাশ হই, আমরা কাজ করার আগ্রহটা হারিয়ে ফেলি।


হাসপাতালে কাজ করে এলাকায় আসা যাওয়ায় বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন বলে জানান একজন নারী চিকিৎসক। তার হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন ইউনিট থাকার কারণে এলাকার লোকজন অনেকে তাকে ভাইরাস বাহক হিসেবে মনে করছে দৃষ্টিভঙ্গিটা পরিবর্তন দরকার।


তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় যদি করোনা আসে তাহলে এর (ডাক্তার) মাধ্যমেই আসবে, এমন কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে। কেন এরকম বলবে? তারাওতো একসময় আমার কাছে আসতে পারে অসুস্থ হয়ে। এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেই রোগী বা তার পরিবারের প্রতিও অমানবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে।


বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র জানান তার বাবা মা দুজনই আক্রান্ত কিন্তু এ খবর জানার পর থেকে এলাকাবাসীর যে আচরণ তিনি পেয়েছেন সেটা কল্পনাও করতে পারেননি। ওই ছাত্র জানান, তাদের প্রতি এলাকার মানুষের একটা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করে।


ওই ছাত্র বলেন, ইভেন রুমের জানালাগুলো আমাদের আটকে রাখতে হচ্ছে। কেউ কেউ বলছিল আমাদের চারজনকেই চলে যাওয়া উচিত বাসা থেকে, ওনারা তালা মেরে দিবে এরকম কিছু কথা শুনছিলাম আরকি। তখন খুব খারাপ লাগছিল কারণ ওনাদের সঙ্গে আমাদের এত ভাল সম্পর্ক, কখনো কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয় নাই আর ওই মানুষগুলোই এই টাইপের কথা বলতেছে সামান্য করোনাভাইরাসের কারণে। আমার এত খারাপ লাগছে ওইরাতে আমি ঘুমাতেই পারি নাই। সূত্র: বিবিসি।


বিবার্তা/আবদাল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com