স্বর্গীয় উপহার হলো সন্তান। কোলজুড়ে একটি শিশু আর ঘরজুড়ে তার ছুটোছুটি প্রত্যেক দম্পতির স্বপ্ন। তবে অনেক অপূর্ণ স্বপ্নের মত এই স্বপ্নটিও হয়তো কারো কারো পূরণ হয়না। আর শুধু তারাই জানেন স্বপ্নভঙ্গের এ বেদনা কতটা অসহনীয়।
করুণ হতাশার নাম বন্ধ্যাত্ব। তবে আশার কথা এটাই যে আমরা যাকে বন্ধ্যাত্ব বলে ভাবি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তেমনটা নয়- বরং একটি চিকিৎসাযোগ্য, নিরাময়যোগ্য সমস্যা। স্বামী বা স্ত্রী যে কারোর কারণেই সন্তান ধারণে অসুবিধা হতে পারে, প্রয়োজন শুধু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে সে কারণটি চিহ্নিতকরণ এবং সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করা।
বন্ধ্যাত্ব নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ কিছু ভুল ধারণা আছে। কিছু ভুল ধারণা শুরুর দিকে অনেক তীব্র থাকলেও জনসচেতনতা তৈরি হওয়ার কারণে এখন আর অতটা তীব্র হয়। তবে এইসব ভুল ধারণা মানুষের মন থেকে এখনো পুরোপুরি মুছে যায় নি।
কখন ডাক্তারের কাছে যাবেন?
এক বছর বা এর অধিক সময় কোন ধরনের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ছাড়া গর্ভধারণে ব্যর্থ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তবে বয়স ৩৫ এর বেশি থাকলে ৬ মাস চেষ্টার পরই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
চিকিৎসকরা বলেন ডিম্বাণুতে সমস্যা থাকলেই বন্ধ্যাত্ব হয়। এমন হলে দৈনন্দিন যে খাবার খান তাতে সামান্য রদবদল করুন। যার ফলে সুফলও পেতে পারেন।
এই খাবার হোক লাল বা বাদামি চালের ভাত, খোসাওলা ডাল, আটার রুটি, হোল গ্রেন পাস্তা-নুডুলস ইত্যাদি৷ এর সঙ্গে অপকারি ট্রান্স ফ্যাট বাদ দিয়ে মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি ডাল, ছোলা, দুধ ও নিরামিষ জাতীয় প্রোটিন খাবেন।
নিশ্চয়ই ভাবছেন এসব খাবারে কি করে কাজ হবে! তাহলে জানুন, ৮ হাজার বন্ধ্যা মহিলার উপর ৮ বছর ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এই খাবারের তালিকাটি বানিয়েছেন। তাতে কাজ হয়েছে আশাতীত ভাবে। এই পরীক্ষাটি হয়েছে ‘নার্সেস হেলথ স্টাডি’ নামের একটি স্টাডিতে।
এই ফার্টিলিটি ডায়েট খেলে ডিম্বাণুর সংখ্যা ও গুণগত মানের উন্নতি হয়৷ আর আশঙ্কাজনকভাবে কমে হাই কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, স্ট্রোক জাতীয় অসুখ-বিসুখ। ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে।
তবে ডাক্তার দেখানো বন্ধ করবেন না। তার উপদেশ মতো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাবেন এবং ওষুধপত্রও খাবেন। সঙ্গে রাখবেন এই ডায়েট৷ যার ফলাফল পাবেন অতি দ্রুত।
বিস্তারিত জেনে নিন :
* ডিম্বাণুর ক্ষতি করে ট্রান্স ফ্যাট। এর সঙ্গে সঙ্গে হাইকোলেস্টেরল, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ওজনও বাড়ায় এসব ফ্যাট৷ অতএব প্রক্রিয়াজাত খাবার, বেকড খাবার, বনস্পতি, মার্জারিন, ভাজাভুজি খাওয়া বন্ধ করুন।
* মুফা ও পুফাসমৃদ্ধ খাবার খাবেন। ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়িয়ে ডায়াবেটিস ও ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা ঠেকায় এরা। আর কমায় শরীরের অভ্যন্তরীণ প্রদাহ। সব মিলিয়ে উপকার হয় ডিম্বাণুর৷ বিভিন্ন ধরনের বাদাম, অ্যাভোক্যাডো, ঠান্ডা পানির মাছ স্যামন, সারডিন, ইলিশ, ঘি–মাখন, ডিমের কুসুম, তৈলাক্ত মাংস ইত্যাদি খাবেন কম কম৷ আর সর্ষে, সূর্যমুখী, সয়াবিন, অলিভ-এ জাতীয় তেলও নিবেন কমিয়ে।
* পর্যাপ্ত উদ্ভিজ্জ জাতীয় প্রোটিন খাবেন৷ মাছ, মাংস, ডিমের পাশাপাশি এ তালিকায় রাখুন মটরশুঁটি, বিনস, সয়াবিন, টোফু, পনির, ছোলা, রাজমা ইত্যাদি।
* যে কার্বোহাইড্রেট চট করে হজম হয়ে রক্তে মিশে যায় তা বাদ দিয়ে যা ধীর গতিতে হজম হয় এমন কার্বোহাইড্রেট খাবেন। যার ফলে রক্তের সুগার লেভেল ও ইনসুলিনের কার্যকারিতা ঠিক থাকবে৷ আর তাতে ভাল থাকবে ডিম্বাণুর মান৷ কাজেই বাদ দিন সাদা চালের ভাত, ময়দা, চিনি, মিষ্টি, ফলের রস ইত্যাদি। আর খাবারে রাখুন হোল গ্রেন, শাকসব্জি, ফল, বিনস ইত্যাদি।
* দুধ খাবেন মাখন না তুলে। অর্থাৎ স্কিম্ড দুধের বদলে খান হোল মিল্ক, ফুল ফ্যাট ইয়োগার্ট, এমনকি মাঝে মধ্যে আইসক্রিমও।
* এই খাবারে থাকবে মাল্টিভিটামিন সাপ্লিমেন্ট। বিশেষ করে ফোলিক অ্যাসিড, দিনে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম করে৷ ডিম্বাণুর মান উন্নত করে সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে এর ভূমিকা অনেক।
* আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। যেমন হোল গ্রেন সিরিয়াল, পালং, বিনস, কুমড়া, টমেটো, বিট ইত্যাদি খেলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা কমবে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
* মিষ্টি স্বাদের ঠাণ্ডা পানীয় বাদ দিয়ে ঠান্ডা পানি খেতে পারেন৷ চা–কফিও খেতে পারেন মাত্রা রেখে। কিন্তু কোমল পানীয় একদমই নয়৷ এগুলো ডিম্বাণুর সমস্যা করে।
এ ছাড়া ওজন খুব বেশি বা খুব কম থাকলেও পিরিয়ডের গোলমাল হতে পারে। এর হাত ধরেই শুরু হতে পারে ডিম্বাণুর সমস্যা৷ কাজেই ওজন যথাসম্ভব ঠিক রাখার চেষ্টা করুন। বিএমআই (ওজনের সূচক) ২০–২৪–এর মধ্যে থাকলে সবচেয়ে ভাল। সঠিক খাবার খেয়ে ও হালকা ব্যায়াম করে ধীরে ধীরে ওজন স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]